নীলফামারীর ডোমার বিএডিসি ফার্মে ধনিচা চাষ
- আপডেট সময় : ১১:৪০:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪ ৮৭ বার পড়া হয়েছে
জমির প্রাণ ফেরাতে কৃষকেরা নিয়মিত সবুজ (জৈব) সার হিসেবে ব্যবহার করতেন ধনিচা। কিন্তু কালের বিবর্তনে জমিতে হাইব্রিড ফসল আর রাসায়নিক সারের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় প্রায় উঠেই যাচ্ছে ধনিচার চাষ। তবে নীলফামারীর ডোমারে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারে ২০০ একর জমিতে ধনিচা চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
খামারটিতে ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদনের পরপরই রোপণ করা হয় এই সবুজ সার। ধনিচা উৎপাদন করতে ৪৫ থেকে ৫০ দিন বয়সেই প্রতি হেক্টরে ২৫ থেকে ৩০ টন সবুজ (জৈব) সার হয়। এর ফলে ১০০ থেকে ১৫০ কেজি নাইট্রোজেন সরবরাহ করে। যা ২২০ থেকে ২৬০ কেজি ইউরিয়া সারের সমান।
সূত্র জানায়, ১৯৫৭-৫৮ সালে সরকার ডোমার খামারটি প্রতিষ্ঠা করে। তৎকালীন কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে খামারের কার্যক্রম শুরু হয়। বীজ আলু উৎপাদনে বেশি উপযোগী মনে করে ১৯৮৯-৯০ সালে খামারটি আলু বীজ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হয়।
আশানুরূপ ফলন পেতে এবং মাটিকে উৎপাদনক্ষম রাখতে বর্তমানে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরিকল্পিত রাসায়নিক সারের ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে। বিপন্ন হয়ে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। দেশের ভৌগলিক অবস্থানের তুলনায় বেশি মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে ভূমির ওপরেই মূল ভরসা। সেজন্য জমির উর্বরা শক্তি অক্ষুণ্ন রাখতেই কৃষি বিভাগকে নিতে হচ্ছে নতুন নতুন পরিকল্পনা। তারই আলোকে করা হচ্ছে ধনিচার চাষ। ধনিচা মাটির উর্বরতা ও ভৌত গুণাবলির উন্নতি সাধন করে। এটির মূল মাটির গভীরে যাওয়ায় পুষ্টি শোষণ করে মাটির উপরিভাগে আনে। মাটিতে গাছের পুষ্টি উপাদানকে সংরক্ষণ করে। একই সঙ্গে জমির আর্দ্রতা ও জোঁ অবস্থা সঠিক রাখে। এঁটেল মাটিকে নরম করে এবং বেলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধিসহ ক্ষয়রোধ করে।
খামারের কাজ করতে আসা শ্রমিক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘বাপ-দাদারা প্রতি বছর একবার ধনিচার চাষ করতেন। কিন্তু এখন কোথাও চোখে পড়ে না তেমন। বর্তমানে ডোমার ফার্মে প্রতি বছর ধনিচা চাষ হয়। এক মাসের মধ্যেই সবুজ চারায় ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠ। ধনিচা চাষে উর্বর, নরম ও সবুজ হয়ে উঠেছে ক্ষেত।’
শ্রমিক বাবু ইসলাম বলেন, ‘আমি ফার্মে গত ৪ বছর ধরে কাজ করি। এখানে ধনিচাসহ সব ধরনের জমিতে কাজ করে আসছি। তাতে দেখেছি রোপা আমন চাষে সাধারণত যে পরিমাণ রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হতো, তার অর্ধেক সার ব্যবহার করা লাগে।’
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) সহকারী পরিচালক সুব্রত মজুমদার বলেন, ‘ধনিচার ব্যবহার এখন কমে গেলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিএডিসির খামারে এটি চাষে হচ্ছে। এতে একদিকে জমিতে সার ব্যবহার কমছে। আরেক দিকে সার কম ব্যবহারে ধনিচা চাষে সরকারের ফার্মে লাভ হচ্ছে।
ডোমার ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু তালেব মিঞা বলেন, ‘এবারও বীজ আলু উত্তোলন শেষে উত্তপ্ত খরতাপ উপেক্ষা করে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে ২০০ একর জমিতে ধনিচা চাষ করা হয়েছে। এতে জমির উর্বরতা বাড়বে, ফসলের রোগবালাই কমবে। সবুজ সার জৈব পদার্থ যোগ করে মাটিকে উর্বর করে। মাটির ভৌত গুণাবলির উন্নতি সাধন করে।’