চলাচলের অযোগ্য উপজেলার প্রধান সড়ক
- আপডেট সময় : ০৭:০৫:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪ ৮৩ বার পড়া হয়েছে
দৌলতপুর প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া
জেলার বৃহত্তম উপজেলা কুষ্টিয়ার দৌলতপুর। চৌদ্দ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ৪৬১বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সীমান্তবর্তী এই উপজেলাতে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের বসবাস। বিশাল আয়তনের এই উপজেলা চলাচলের প্রধান সড়কই যেন মরণ ফাঁদ। নাম মাত্র কয়েকটি ইট দিয়ে সংস্কারের চেষ্টা করলেও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মেলেনা উপজেলা বাসীর। সামান্য বৃষ্টিতেই জমে থাকা পানি ও ছোট – বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় আল্লারদর্গা নাসির নগর থেকে আল্লারদর্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পর্যন্ত সড়কটির ১.৫ কি.মি অংশ খানাখন্দ ভরা, তৈরি হয় তিব্র যানজট। এতে ব্যাহত হচ্ছে আল্লারদর্গা অবস্থিত কলকারখানা গুলোর পণ্য ক্রয় ও বাজারকরণ কার্যকম।
উপজেলার শিল্পনগরী খ্যাত আল্লারদর্গা বাজারের সড়কটি বছরের পর বছর ধরে খানাখন্দে ভরা। কুষ্টিয়া – প্রাগপুর রুটের প্রধান সড়ক হওয়ায় প্রতিদিনই দূর্ভোগে পোহাতে হয় সড়কে ব্যবহারিত ১-২ হাজার যানবাহনসহ ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষকে।সড়কে গর্ত সৃষ্টির ফলে দশ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ মিনিট।একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে কর্মঘন্টা অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভ্যান, আটোসহ ছোট ছোট পরিবহণ গুলো।
জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে দৌলতপুর উপজেলার সংযোগের এই সড়কটির আল্লারদর্গা বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সড়কের মাঝে জমে আছে হাটু পানি। জমে থাকা পানিতে খানাখন্দ বুঝতে না পারায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় অনেক দুর্ঘটনা। তাছাড়া রাস্তার দুই ধারে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠায় ফুটপাতের রাস্তাও ব্যবহারে অনুপযোগী।
রাস্তার প্রস্থ তুলনায় যানবাহনের পরিমাণ বেশি ও গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় প্রায় সময়ই তীব্র যানজট লেগেই থাকে। বাজারের মধ্যে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ পাশে পলিটেকনিক ও নার্সিং ইনস্টিটিউট থাকায় সড়ক ব্যবহার করে নিজ প্রতিষ্ঠানের যাওয়া-আসার সময় শিক্ষার্থীদেরও পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা রোগী দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে থাকায় এম্বুলেন্সের মধ্যেই অনেক রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে । ব্যস্ততম এই সড়কটির দুই ধারে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে চোখে পড়ার মত।
সড়কের ভেঙে পড়া অংশে কাদা পানি জমে থাকায় প্রতিনিয়ত এসব গর্তে পড়ে উল্টে যাচ্ছে গাড়ি, ঘটছে দুর্ঘটনা। বড় গাড়ি গুলো কোন মতে পার হতে পারলেও পণ্যবোঝাই ট্রাক, পিকাআপ, ব্যাটারিচালিত আটোরিকশা, ইজিবাইক, ভ্যানগাড়ি, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার চলাচলে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
আল্লাহ দর্গা বাজারে ইলেকট্রিনিক ব্যবসায়ী মিলন হোসেন বলেন, সড়কটির দুই পাশ উচু হওয়ায় ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় অল্প পানিতে সড়কটি তলিয়ে যায়। রাস্তা ভাঙ্গা ও পানি জমে থাকাই এই মৌসুমে বছরের সব চেয়ে কম বেচাকেনা হয়েছে। ক্রেতা না থাকায় দোকান ভাড়া ও সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে।
দৌলতপুরের এক মার্কেটিং কর্মী বলেন, আল্লারদর্গা রাস্তা দিয়ে আমাদের প্রতিদিন তিন থেকে চার বার যাওয়া আসা লাগে। রাস্তা ভাঙ্গা ও পানি জমে থাকায় প্রায় সময়ই আমাদের ছোট বড় দুর্ঘটনা স্বীকার হতে হয়। অর্ডার নেওয়ার পরেও গাড়ি চালক এই রাস্তায় আসতে চাই না।
কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কের বাসচালক রাতুল ইসলাম বলেন, আমরা সময়সূচি অনুযায়ী গাড়ি চালাই। সারা রাস্তা ভালোভাবে আসলেও এই বাজারে এসে কষ্ট হয়। যানজট ও ভাঙা রাস্তার কারণে বাজার পার হতে অনেক সময় এক ঘণ্টা লেগে যায়। এতে যাত্রীরা বিরক্ত হয় আবার গাড়িও নষ্ট হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা জালাল উদ্দীন বলেন, বাজারের দুই ধারে পর্যাপ্ত পরিমাণ রাস্তার জায়গা রয়েছে। কিন্তু এসব জায়গা দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রাখা হয়েছে। রাস্তার দুই ধারের জায়গা দখলমুক্ত ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচলকরে দ্রুত সময়পানি নিষ্কাশন করলে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। বছরের পর বছর ধরে এই বাজার পারাপারে দুর্ভোগ হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উদাসীন। আমরা চাই দ্রুত সময়ে সড়কটি সংস্কার করে আমাদের বসবাসের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।
প্রায় এক কিলোমিটারে অধিক জায়গায় ভেঙ্গে যাওয়াই চলাচলে দুর্ভোগ হচ্ছে জানিয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ওবায়দুল্লাহ বলেন, রাস্তাটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আল্লারদর্গা বাজারে রাস্তার দু’পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কাজ চলছে।
কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম বলেন, নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পানি জমে রাস্তাটি বার বার ভেঙে যাচ্ছে। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ভাঙ্গা জায়গাগুলোতে মাঝে মাঝে ইট খেলা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বর মাসের আগে ভেঙ্গে যাওয়া অংশটি সংস্কার করা সম্ভব হবে না।