কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ফেসবুক পোস্টের জেরে জামায়াতকর্মীকে মারধর ঘিরে উত্তেজনা
- আপডেট সময় : ০৮:৪৬:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ৩৫ বার পড়া হয়েছে
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ফেসবুক পোস্টে মন্তব্যের জেরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দুই কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে আরেক ধর্মভিত্তিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রৌমারী উপজেলার বড়াইকান্দি বাজারে মারধরের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ জামায়াতের। এ বিষয়ে উপজেলা শহরে উভয় দলের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উপজেলা জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার বড়াইকান্দি বাজারের একটি দোকানে জামায়াতকর্মী মোসলেম উদ্দিন ও আনোয়ার হোসেনকে ডেকে নিয়ে মারধর করেন ইসলামী আন্দোলনের কিছু নেতাকর্মী। ফেসবুকে পোস্টে মন্তব্যের জেরে তাদের বেদম মারধর করা হয়।
তবে জামায়াত বলছে, কর্মীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হলেও তারা উত্তেজনার শান্তিপূর্ণ প্রশমন চান। এ জন্য প্রতিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আগ্রহী তারা।
এদিকে নিজ দলের কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শনিবার সকালে উপজেলার বড়াইকান্দি বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করেছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। সভায় বক্তব্য দেন রৌমারী উপজেলা জামায়াতের আমির হায়দার আলী, সাবেক আমির মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেনসহ উপজেলা জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। বক্তারা জামায়াতকর্মীদের মারধরের তীব্র প্রতিবাদ জানান।
জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, ‘বাইনমাছে জিকির করে’ চরমোনাই পীরের এমন একটি ওয়াজের ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন ইসলামী আন্দোলনের রেজাউল নামের এক কর্মী। এতে মোসলেম উদ্দিন নামের এক জামায়াতকর্মী কমেন্ট করেন, ‘যারা এমন ওয়াজ করেন তারাও মূর্খ, যারা শোনেন তারাও মূর্খ’। এতেই ক্ষেপে যান ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার উপজেলার বড়াইকান্দি বাজারের একটি দোকানে মোসলেমকে ডেকে নেন তারা। তার সঙ্গে আনোয়ার নামের আরেক জামায়াতকর্মী ছিলেন। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে দুই কর্মীকে মারপিট করেন তারা।
ভুক্তভোগী জামায়াত কর্মীরা জানান, মারধরে অংশ নেন মোনতাজ, সাহেব আলী, মিজানুর, সহিদুর, রেজাউল, সাইদুর, আমিনুল, শফিকুলসহ ইসলামী আন্দোলনের অনেকে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে পুলিশে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনার পরপর দুই দলের নেতৃবৃন্দ বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেন। শনিবার বড়াইকান্দি বাজারে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে বৈঠকে উপস্থিত হননি ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা নেতৃবৃন্দ। পরে ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে দলটি। একইসঙ্গে রৌমারী থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়।
রৌমারী উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি আকতার হোসেন বলেন, ‘মারধরের ঘটনায় শনিবার বড়াইকান্দি বাজারে উভয় পক্ষের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, তাই উপস্থিত হইনি। এ বিষয় পরে বসা হবে।’
রৌমারী উপজেলা জামায়াতের আমির হায়দার আলী বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা আমাদের কর্মীদের মারধর করেছে। কর্মীরা আহত না হলেও তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এ নিয়ে উভয় দলের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা বৈঠকে আসেননি। আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তবে আমরা চাই আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হোক।’
ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের আশঙ্কার প্রশ্নে জামায়াত নেতা বলেন, ‘এটা তাদের ধারণা। জামায়াত একটি আদর্শিক দল। আমাদের কর্মীদেরও ভুল হয়ে থাকতে পারে। আমরা দ্বন্দ্ব চাই না। শান্তিপূর্ণ উপায়ে সুষ্ঠু সমাধান চাই। আমাদের নেতাকর্মীদের জমায়েত দেখে তারা হয়তো নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সুযোগ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মামলা করতেও আগ্রহী নই।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
রৌমারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মারধর হয়েছে কি না জানি না। তবে দুই দলের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ছিল। তাদের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। শুনেছি ইসলামী আন্দোলনের লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কারণে বৈঠক হয়নি।’ তবে কোনও পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি এএসপি।