ঢাকা ১০:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবিসি ন্যাশনাল নিউজ২৪ ইপেপার

ব্রেকিং নিউজঃ
ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের বাসায় দুর্ধষ চুরি ! ঠাকুরগাঁওয়ে রানীশংকৈলের খুনিয়াদীঘি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের উপর জুতা পরে হিরো আলমের টিকটক, ভিডিও সমালোচনার ঝড় ! ঠাকুরগাঁওয়ে ইএসডিও’র ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা — অংশীজনের প্রত্যাশা শীর্ষক সভা । চিলাহাটিতে নতুন রুপে যাত্রা শুরু করল ডিভাইন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ইপিল গাছ থেকে ডোমারে গৃহবধু দিশার মরদেহ উদ্ধার  নওহাটা পৌর বিএনপি’র কাউন্সিলে সভাপতি রফিক সম্পাদক পিটার নির্বাচিত তেঁতুলিয়ায় তথ্য অধিকার বাস্তবায়ন ও পরবীক্ষণ কমিটির সাথে তথ্য কমিশন বাংলাদেশের পরিচালকের মতবিনিময় সভা নিউজ পোর্টাল জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন সাংবাদিক আরিফ মিরগন্জ ইউনিয়ন বিএনপির জনসসভা অনুষ্ঠিত।  ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা! হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী। 

কবরে মুনকার নাকির যে প্রশ্ন করবেন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:০৬:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪ ৭৩ বার পড়া হয়েছে

 

কবরে মুনকার নাকির যে প্রশ্ন করবেন, কবর পরকালীন জীবনের প্রথম ধাপ। এই ধাপে উত্তীর্ণ হলে পরের ধাপগুলো সহজ হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে, ‘আখেরাতের মানজিলসমূহের (প্রাসাদ) মধ্যে কবর হলো প্রথম মানজিল। এখান থেকে কেউ মুক্তি পেয়ে গেলে তার জন্য পরবর্তী মানজিল গুলোতে মুক্তি পাওয়া খুব সহজ হয়ে যাবে। আর এখান থেকে মুক্তি না পেলে তার জন্য পরবর্তী মানজিলনগুলো আরো বেশি কঠিন হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, আমি কবরের দৃশ্যের চাইতে অধিক ভয়ংকর দৃশ্য দেখিনি।’ (তিরমিজি: ২৩০৮)

মানুষের জিজ্ঞাসাবাদ কবরেই শুরু হয়ে যাবে। মুনকার ও নাকির নামের কালো বর্ণের নীল চোখবিশিষ্ট দুজন ফেরেশতা এসে কবরস্থ মানুষকে জিজ্ঞেস করবেন তার প্রতিপালক, দ্বীন ও নবী সম্পর্কে। নেককার ব্যক্তি সঠিক উত্তর দিতে পারবেন কিন্তু বদকার ও মুনাফিক ব্যক্তি যথাযথ উত্তর দিতে পারবে না।

হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, মুনকার নাকির কবরবাসীকে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো করবেন।
১. مَنْ رَبُّكَ ‘মান রাব্বুকা’ অর্থ: ‘তোমার রব কে?’ তখন মুমিন ব্যক্তি উত্তরে বলবে رَبِّيَ اللَّهُ ‘রাব্বী আল্লাহ’ অর্থ: ‘আমার রব আল্লাহ’।
২. مَا دِينُكَ ‘মা দ্বীনুকা’ অর্থ: ‘তোমার দ্বীন কী?’ উত্তরে সে বলবে- دِينِي الإِسْلاَمُ ‘দ্বীনি আল-ইসলাম’ অর্থ: ‘আমার দ্বীন হলো ইসলাম’।
৩. مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ ‘মা হাজার রাজুলুল্লাজী বুঈসা ফীকুম’ অর্থ: ‘এ লোকটি তোমাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন, তিনি কে?’ সে উত্তরে বলবে-هُوَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‘হুয়া রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ অর্থ: তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’।
৪. وَمَا يُدْرِيكَ ‘ওয়ামা ইয়ুদরীকা’ অর্থ: ‘তুমি কীভাবে জানলে?’ উত্তরে সে বলবে- قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ ‘ক্বারা’তু কিতাবাল্লাহি ফাআমানতু বিহি ওয়াসাদ্দাকতু’ অর্থ: ‘আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি এবং তার প্রতি ঈমান এনেছি এবং সত্য বলে স্বীকার করেছি।’

মুনকার-নাকিরে প্রশ্নের উত্তরে কাফির-মুনাফিক যা বলবে
প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বদকার ব্যক্তি বলবে- هَاهْ هَاهْ هَاهْ لاَ أَدْرِي ‘হাহ হাহ হাহ লা আদরী’ অর্থ: ‘হায় আমি কিছুই জানি না’।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বদকার ব্যক্তি বলবে- هَاهْ هَاهْ لاَ أَدْرِي ‘হাহ হাহ লা আদরী’ অর্থ: ‘হায় আমি কিছুই জানি না’।
তৃতীয় প্রশ্নের উত্তরে বদকার ব্যক্তি বলবে- هَاهْ هَاهْ لاَ أَدْرِي ‘হাহ হাহ লা আদরী’ অর্থ: হায় আমি কিছুই জানি না’।

প্রশ্নোত্তর পর্বশেষে নেককার বান্দাকে বলা হবে- আপনি সত্য বলেছেন। অতঃপর তার কবর ৭০ গজ প্রশস্ত হয়ে যাবে। কবরে আলোর ব্যবস্থা করা হবে। তাকে এমন শান্তির ঘুম পাড়ানো হবে কেয়ামতের আগে তার ঘুম ভাঙবে না। অন্য বর্ণনামতে, তার জন্য জান্নাতের একটি বিছানা বিছিয়ে দেওয়া হবে, জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দেওয়া হবে এবং তার জন্য জান্নাতের দিকে একটা দরজা খুলে দেওয়া হবে। ফলে তার দিকে জান্নাতের স্নিগ্ধকর হাওয়া ও সুগন্ধি বইতে থাকবে। ওই দরজা তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করা হবে।

আর বদকার বান্দাকে বলা হবে- তুই মিথ্যা বলেছিস। অতঃপর মাটি তাকে এমন শক্তভাবে চাপ দেবে যে, তার পাঁজরের হাড়গুলো একটির মধ্যে আরেকটি ঢুকে পড়বে। কেয়ামত পর্যন্ত সে এভাবেই শাস্তি পেতে থাকবে। অন্য বর্ণনামতে, তার জন্য জাহান্নামের একটি বিছানা বিছিয়ে দেওয়া হবে, তাকে জাহান্নামের পোশাক পরানো হবে এবং তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটা দরজা খুলে দেওয়া হবে। ফলে তার দিকে জাহান্নামের উত্তপ্ত বাতাস আসতে থাকে। এছাড়াও তার জন্য এক অন্ধ ও বধির ফেরেশতাকে নিযুক্ত করা হবে, যার সঙ্গে একটি লোহার হাতুড়ী থাকবে। বর্ণনামতে, যদি এই হাতুড়ি দিয়ে পাহাড়কে আঘাত করা হয় তাহলে তা ধূলায় পরিণত হয়ে যাবে। কবরে বদকার ব্যক্তি ফেরেশতার হাতুড়ির আঘাতে বিকট শব্দে চিৎকার করতে থাকে যা মানুষ ও জ্বিন ছাড়া পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত সকল সৃষ্টি জীব শুনতে পায়। আঘাতের ফলে সে মাটিতে মিশে যায়। অতঃপর (শাস্তি অব্যাহত রাখার জন্য) পুনরায় তাতে রুহ ফেরত দেয়া হয়। (সুনানে তিরমিজি: ১০৭১; সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৫৩)

মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যেন আমাদেরকে উপরোক্ত আলোচনা গুলোর প্রতি গুরুত্ব সহকারে বুঝার ও আমল করার তাওফিক দান করেন আমিন।

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, সাবেক ইমাম ও খতিব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট।

শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কবরে মুনকার নাকির যে প্রশ্ন করবেন

আপডেট সময় : ০৫:০৬:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

 

কবরে মুনকার নাকির যে প্রশ্ন করবেন, কবর পরকালীন জীবনের প্রথম ধাপ। এই ধাপে উত্তীর্ণ হলে পরের ধাপগুলো সহজ হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে, ‘আখেরাতের মানজিলসমূহের (প্রাসাদ) মধ্যে কবর হলো প্রথম মানজিল। এখান থেকে কেউ মুক্তি পেয়ে গেলে তার জন্য পরবর্তী মানজিল গুলোতে মুক্তি পাওয়া খুব সহজ হয়ে যাবে। আর এখান থেকে মুক্তি না পেলে তার জন্য পরবর্তী মানজিলনগুলো আরো বেশি কঠিন হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, আমি কবরের দৃশ্যের চাইতে অধিক ভয়ংকর দৃশ্য দেখিনি।’ (তিরমিজি: ২৩০৮)

মানুষের জিজ্ঞাসাবাদ কবরেই শুরু হয়ে যাবে। মুনকার ও নাকির নামের কালো বর্ণের নীল চোখবিশিষ্ট দুজন ফেরেশতা এসে কবরস্থ মানুষকে জিজ্ঞেস করবেন তার প্রতিপালক, দ্বীন ও নবী সম্পর্কে। নেককার ব্যক্তি সঠিক উত্তর দিতে পারবেন কিন্তু বদকার ও মুনাফিক ব্যক্তি যথাযথ উত্তর দিতে পারবে না।

হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, মুনকার নাকির কবরবাসীকে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো করবেন।
১. مَنْ رَبُّكَ ‘মান রাব্বুকা’ অর্থ: ‘তোমার রব কে?’ তখন মুমিন ব্যক্তি উত্তরে বলবে رَبِّيَ اللَّهُ ‘রাব্বী আল্লাহ’ অর্থ: ‘আমার রব আল্লাহ’।
২. مَا دِينُكَ ‘মা দ্বীনুকা’ অর্থ: ‘তোমার দ্বীন কী?’ উত্তরে সে বলবে- دِينِي الإِسْلاَمُ ‘দ্বীনি আল-ইসলাম’ অর্থ: ‘আমার দ্বীন হলো ইসলাম’।
৩. مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ ‘মা হাজার রাজুলুল্লাজী বুঈসা ফীকুম’ অর্থ: ‘এ লোকটি তোমাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন, তিনি কে?’ সে উত্তরে বলবে-هُوَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‘হুয়া রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ অর্থ: তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’।
৪. وَمَا يُدْرِيكَ ‘ওয়ামা ইয়ুদরীকা’ অর্থ: ‘তুমি কীভাবে জানলে?’ উত্তরে সে বলবে- قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ ‘ক্বারা’তু কিতাবাল্লাহি ফাআমানতু বিহি ওয়াসাদ্দাকতু’ অর্থ: ‘আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি এবং তার প্রতি ঈমান এনেছি এবং সত্য বলে স্বীকার করেছি।’

মুনকার-নাকিরে প্রশ্নের উত্তরে কাফির-মুনাফিক যা বলবে
প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বদকার ব্যক্তি বলবে- هَاهْ هَاهْ هَاهْ لاَ أَدْرِي ‘হাহ হাহ হাহ লা আদরী’ অর্থ: ‘হায় আমি কিছুই জানি না’।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বদকার ব্যক্তি বলবে- هَاهْ هَاهْ لاَ أَدْرِي ‘হাহ হাহ লা আদরী’ অর্থ: ‘হায় আমি কিছুই জানি না’।
তৃতীয় প্রশ্নের উত্তরে বদকার ব্যক্তি বলবে- هَاهْ هَاهْ لاَ أَدْرِي ‘হাহ হাহ লা আদরী’ অর্থ: হায় আমি কিছুই জানি না’।

প্রশ্নোত্তর পর্বশেষে নেককার বান্দাকে বলা হবে- আপনি সত্য বলেছেন। অতঃপর তার কবর ৭০ গজ প্রশস্ত হয়ে যাবে। কবরে আলোর ব্যবস্থা করা হবে। তাকে এমন শান্তির ঘুম পাড়ানো হবে কেয়ামতের আগে তার ঘুম ভাঙবে না। অন্য বর্ণনামতে, তার জন্য জান্নাতের একটি বিছানা বিছিয়ে দেওয়া হবে, জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দেওয়া হবে এবং তার জন্য জান্নাতের দিকে একটা দরজা খুলে দেওয়া হবে। ফলে তার দিকে জান্নাতের স্নিগ্ধকর হাওয়া ও সুগন্ধি বইতে থাকবে। ওই দরজা তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করা হবে।

আর বদকার বান্দাকে বলা হবে- তুই মিথ্যা বলেছিস। অতঃপর মাটি তাকে এমন শক্তভাবে চাপ দেবে যে, তার পাঁজরের হাড়গুলো একটির মধ্যে আরেকটি ঢুকে পড়বে। কেয়ামত পর্যন্ত সে এভাবেই শাস্তি পেতে থাকবে। অন্য বর্ণনামতে, তার জন্য জাহান্নামের একটি বিছানা বিছিয়ে দেওয়া হবে, তাকে জাহান্নামের পোশাক পরানো হবে এবং তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটা দরজা খুলে দেওয়া হবে। ফলে তার দিকে জাহান্নামের উত্তপ্ত বাতাস আসতে থাকে। এছাড়াও তার জন্য এক অন্ধ ও বধির ফেরেশতাকে নিযুক্ত করা হবে, যার সঙ্গে একটি লোহার হাতুড়ী থাকবে। বর্ণনামতে, যদি এই হাতুড়ি দিয়ে পাহাড়কে আঘাত করা হয় তাহলে তা ধূলায় পরিণত হয়ে যাবে। কবরে বদকার ব্যক্তি ফেরেশতার হাতুড়ির আঘাতে বিকট শব্দে চিৎকার করতে থাকে যা মানুষ ও জ্বিন ছাড়া পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত সকল সৃষ্টি জীব শুনতে পায়। আঘাতের ফলে সে মাটিতে মিশে যায়। অতঃপর (শাস্তি অব্যাহত রাখার জন্য) পুনরায় তাতে রুহ ফেরত দেয়া হয়। (সুনানে তিরমিজি: ১০৭১; সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৫৩)

মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যেন আমাদেরকে উপরোক্ত আলোচনা গুলোর প্রতি গুরুত্ব সহকারে বুঝার ও আমল করার তাওফিক দান করেন আমিন।

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, সাবেক ইমাম ও খতিব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট।

শেয়ার করুন