ঢাকা ০৮:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবিসি ন্যাশনাল নিউজ২৪ ইপেপার

ব্রেকিং নিউজঃ
দেবীগঞ্জ থানা পুলিশ কর্তৃক এক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার সুনামগঞ্জে ডিবির অভিযানে ৭০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার-২ লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় সেফটি ট্যাংকে পড়ে কলেজ ছাত্রের মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ের মাদারগঞ্জ গরু হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ ! কুষ্টিয়ায় কুলখানি নিয়ে দ্বন্দ্ব, নিহত ১ বাংলাদেশের সঙ্গে ‘দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারে’ ঢাকায় ডোনাল্ড লু অবশেষে ফিরলেন এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিক, বন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনা মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্তের আগে কনডেম সেলে নয়: হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ডিমলায় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে আগুনে পুড়ে বসতবাড়ি ছাই মিন্টুর লাশ দুবাই থেকে দেশে আনতে পরিবারের আকুতি

ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ধারক পাকশী ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ’ ১১০ বছরে পদার্পণ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:২৫:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ মার্চ ২০২৪ ১১১৩ বার পড়া হয়েছে

মফস্বল সম্পাদকঃ

একদিকে অপরূপ সৌন্দর্য আর অপরদিকে যুগে যুগে এসে যাওয়া অনেক শাসক-শোষক ও প্রজন্মের সাক্ষী হয়ে শতবর্ষ পেরিয়ে আজও বীরদর্পে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ।
১০৯ বছর আগে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর বুকে তৈরি করা হয়েছিল এই ব্রিজটি। তখন পদ্মার জলরাশি আর খরস্রোতা উত্তাল ঢেউ ছিল, ছিল ভরা যৌবন। সেই পদ্মার যৌবন হয়তো এখন শেষ হতে চলেছে, কিন্তু চিরযৌবনা সেই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পদ্মার বুকে এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের অমর কীর্তি হয়ে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম সেতুবন্ধ তৈরি করেছে ঐতিহাসিক এই ব্রিজটি।

পাবনা জেলা আর কুষ্টিয়া জেলাকে সংযুক্তকারী রেলসেতু হলো হার্ডিঞ্জ ব্রিজ যা বাংলাদেশের দীর্ঘতম রেলসেতু। এই রেলসেতুটি পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশি হতে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে।

ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজ স্থাপনের এক বিশাল ইতিহাস রয়েছে। ১৮৮৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কলকাতার সঙ্গে আসাম, ত্রিপুরাসহ উত্তরাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এই ব্রিজ তৈরির প্রস্তাব করেছিলেন। সেই সময়ে প্রস্তাবটি কার্যকরী না হলেও তার কয়েক দশক পর ১৯০৯ সাল থেকে ব্রিজটি নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। এই ব্রিজ নির্মাণের সময়কাল ছিল ১৯০৯ থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত।

এটি নির্মাণে ২৪ হাজার ৪০০ শ্রমিক অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন এবং তৎকালীন হিসাব অনুযায়ী এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার ১৬৪ ভারতীয় রুপি। তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের নাম অনুসারে ব্রিজটির নামকরণ করা হয়েছিল হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৭৯৮ দশমিক ৩২ মিটার বা ৫ হাজার ৮৯৪ ফুট বা ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার। এর ওপরে রয়েছে দুইটি ব্রডগেজ রেললাইন। এই ব্রিজটির নকশা করেছিলেন আলেকজান্ডার মেয়াডোস রেন্ডেল। এই ব্রিজে স্প্যান রয়েছে মোট ১৫টি এবং প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১২০ মিটার। ঐতিহ্যবাহী এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি চালু করা হয়েছিল ১৯১৫ সালের আজকের এই ৪ মার্চে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী এই ব্রিজের ওপর দিয়ে ট্যাংক, যুদ্ধসরঞ্জামসহ সৈন্যও পারাপার করত। ফলে মিত্র বাহিনীর যুদ্ধবিমান থেকে এই ব্রিজের ওপর বোমা ফেলা হয়েছিল। এতে ব্রিজের ১২ নম্বর স্প্যান ভেঙে গিয়েছিল এবং ৯ ও ১৫ নম্বর স্প্যান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যা পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ সরকারের সাহায্যে মেরামত করা হয়েছিল। এরপর ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর থেকে পুনরায় ব্রিজটির ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। গত ২০১৫ সালে ঐতিহ্যবাহী এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজের শতবর্ষ পূরণ হয়।

শৈল্পিক কারুকার্যে খচিত বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক লাল রঙা এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ১০৯ বছর পেরিয়ে এখনো পর্যন্ত দর্শনার্থীদের মন আকৃষ্ট ও মুগ্ধ করে চলেছে। এছাড়া এই ব্রিজটির ঠিক পাশ দিয়েই ২০০৪ সালে তৈরি করা হয়েছে একটি সড়কসেতু যা কুষ্টিয়া জেলার বিখ্যাত সাধক ফকির লালন শাহের নামানুসারে “লালন শাহ সেতু” নামে পরিচিত। যা পদ্মার বুকের ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সঙ্গে এক অপরূপ সৌন্দর্যে মিলেমিশে রয়েছে।

প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমায় এখানে, কেউ-বা আসে নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে এই অপরূপ সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে। এছাড়া প্রতি বছর বিদেশি পর্যটকদেরও আনাগোনা দেখা যায় এই স্থানে। নির্মাণের ১০৯ বছর পেরিয়ে গেলেও উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ স্বচক্ষে দেখার কৌতূহল যেন আজও মানুষের মনে রয়ে গেছে।

 

শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ধারক পাকশী ‘হার্ডিঞ্জ ব্রিজ’ ১১০ বছরে পদার্পণ

আপডেট সময় : ০১:২৫:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ মার্চ ২০২৪

মফস্বল সম্পাদকঃ

একদিকে অপরূপ সৌন্দর্য আর অপরদিকে যুগে যুগে এসে যাওয়া অনেক শাসক-শোষক ও প্রজন্মের সাক্ষী হয়ে শতবর্ষ পেরিয়ে আজও বীরদর্পে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ।
১০৯ বছর আগে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর বুকে তৈরি করা হয়েছিল এই ব্রিজটি। তখন পদ্মার জলরাশি আর খরস্রোতা উত্তাল ঢেউ ছিল, ছিল ভরা যৌবন। সেই পদ্মার যৌবন হয়তো এখন শেষ হতে চলেছে, কিন্তু চিরযৌবনা সেই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পদ্মার বুকে এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের অমর কীর্তি হয়ে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম সেতুবন্ধ তৈরি করেছে ঐতিহাসিক এই ব্রিজটি।

পাবনা জেলা আর কুষ্টিয়া জেলাকে সংযুক্তকারী রেলসেতু হলো হার্ডিঞ্জ ব্রিজ যা বাংলাদেশের দীর্ঘতম রেলসেতু। এই রেলসেতুটি পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশি হতে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে।

ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজ স্থাপনের এক বিশাল ইতিহাস রয়েছে। ১৮৮৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কলকাতার সঙ্গে আসাম, ত্রিপুরাসহ উত্তরাঞ্চলের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এই ব্রিজ তৈরির প্রস্তাব করেছিলেন। সেই সময়ে প্রস্তাবটি কার্যকরী না হলেও তার কয়েক দশক পর ১৯০৯ সাল থেকে ব্রিজটি নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। এই ব্রিজ নির্মাণের সময়কাল ছিল ১৯০৯ থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত।

এটি নির্মাণে ২৪ হাজার ৪০০ শ্রমিক অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন এবং তৎকালীন হিসাব অনুযায়ী এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার ১৬৪ ভারতীয় রুপি। তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের নাম অনুসারে ব্রিজটির নামকরণ করা হয়েছিল হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৭৯৮ দশমিক ৩২ মিটার বা ৫ হাজার ৮৯৪ ফুট বা ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার। এর ওপরে রয়েছে দুইটি ব্রডগেজ রেললাইন। এই ব্রিজটির নকশা করেছিলেন আলেকজান্ডার মেয়াডোস রেন্ডেল। এই ব্রিজে স্প্যান রয়েছে মোট ১৫টি এবং প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১২০ মিটার। ঐতিহ্যবাহী এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি চালু করা হয়েছিল ১৯১৫ সালের আজকের এই ৪ মার্চে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী এই ব্রিজের ওপর দিয়ে ট্যাংক, যুদ্ধসরঞ্জামসহ সৈন্যও পারাপার করত। ফলে মিত্র বাহিনীর যুদ্ধবিমান থেকে এই ব্রিজের ওপর বোমা ফেলা হয়েছিল। এতে ব্রিজের ১২ নম্বর স্প্যান ভেঙে গিয়েছিল এবং ৯ ও ১৫ নম্বর স্প্যান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যা পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ সরকারের সাহায্যে মেরামত করা হয়েছিল। এরপর ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর থেকে পুনরায় ব্রিজটির ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। গত ২০১৫ সালে ঐতিহ্যবাহী এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজের শতবর্ষ পূরণ হয়।

শৈল্পিক কারুকার্যে খচিত বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক লাল রঙা এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ১০৯ বছর পেরিয়ে এখনো পর্যন্ত দর্শনার্থীদের মন আকৃষ্ট ও মুগ্ধ করে চলেছে। এছাড়া এই ব্রিজটির ঠিক পাশ দিয়েই ২০০৪ সালে তৈরি করা হয়েছে একটি সড়কসেতু যা কুষ্টিয়া জেলার বিখ্যাত সাধক ফকির লালন শাহের নামানুসারে “লালন শাহ সেতু” নামে পরিচিত। যা পদ্মার বুকের ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সঙ্গে এক অপরূপ সৌন্দর্যে মিলেমিশে রয়েছে।

প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমায় এখানে, কেউ-বা আসে নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে এই অপরূপ সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে। এছাড়া প্রতি বছর বিদেশি পর্যটকদেরও আনাগোনা দেখা যায় এই স্থানে। নির্মাণের ১০৯ বছর পেরিয়ে গেলেও উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী এই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ স্বচক্ষে দেখার কৌতূহল যেন আজও মানুষের মনে রয়ে গেছে।

 

শেয়ার করুন