ঈশ্বরদীতে বোরো চাষে বাড়তি খরচে, শঙ্কায় কৃষকরা
- আপডেট সময় : ১২:২৫:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ এপ্রিল ২০২৩ ২৬৭ বার পড়া হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার।
পাবনার ঈশ্বরদীতে বেড়েছে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি। এছাড়া সেচযন্ত্রের জ্বালানি ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এতে বোরো ধান চাষে খরচ বাড়ছে। এবার পাবনার ঈশ্বরদীতে বোরো ধান চাষে প্রতি বিঘা জমিতে বাড়তি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানান কৃষকেরা।
কৃষকরা বলছেন, বোরো চাষে খরচ বেড়েছে। কিন্তু মৌসুম শেষে ধানের বাড়তি দাম না পেলে তাদের উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা তা আমাদের অজানা।
উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কৃষকদের কাঙ্খিত বোরো আবাদের চিত্র। চারদিকে এখন গাঢ় সবুজের বিপ্লব। এখন কৃষকের স্বপ্নই হচ্ছে তার রোপণ করা ফসলের ভালো ফলন কিভাবে ঘরে তোলবে। তবে কীটনাশক ও শ্রমিকসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বোরো চাষিরা খুবই হতাশ।
ঈশ্বরদী উপজেলার পৌর এলাকার কৃষক সের আলী বলেন, এভাবে যদি প্রতি বছর উৎপাদন খরচ বাড়তে থাকে, তাহলে চাষাবাদ ছেড়ে অন্য কিছু ভাবতে হবে। এবার ২ বিঘা জমি বর্গা (আদি)) নিয়ে বোরো ধান রোপণ করেছেন। তিনি বলেন, গত বছর থেকে এ বছর বোরো ধান চাষে খরচ অনেক বেশি বেড়েছে। জমিতে হাল চাষ, সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরির খরচ বেড়েই চলেছে। গত বছর ১২শ-১৩শ টাকা বিঘা হিসেবে শ্রমিক দিয়ে ধান লাগিয়ে নিয়েছিলাম এবার ১৫শ টাকা বিঘা হিসেবে জমিতে ধান লাগাতে হচ্ছে ।
এছাড়াও সব ধরণের সারের দাম বেশি। কিটনাশকের দাম প্রায় দ্বিগুন হয়ে গেছে। এখন একজন শ্রমিক এক বেলা খাওয়া দিয়ে ৫শ টাকা দিতে হচ্ছে। সব মিলে এবার বিঘা জমিতে ধান রোপণ থেকে শুরু করে ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রায় ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হবে। ধান পাবো ২০ মণ। এর মধ্যে জমির মালিককে বিঘাতে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। তাহলে ধান চাষ করে কি লাভ হবে। এবার ধানের মণ তিন-চারশ টাকা বেশি না হলে কৃষকরা বাঁচবে না বলে মনে করেন তিনি।
কৃষকরা বলছেন, এ বছর প্রতি বিঘায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা চাষে খরচও বেড়ে যাওয়ায় বোরো আবাদের অতিরিক্ত খরচে চরম হিমসিম খেতে হচ্ছে তাদের। সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে বর্গা নিয়ে ধান চাষ করা কৃষকরা। মৌসুম শেষে ধানের বাড়তি দাম না পেলে তাদের উৎপাদন খরচ উঠা নিয়ে যেমন আছেন শঙ্কায়, অন্যদিকে ফসলের ভালো ফলন ঘরে তোলা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
একই গ্রামের কৃষক আবদুল আজিজ তিন বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, সার, বীজ, কীটনাশক কোনোটাই এখন আর আগের দামে পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ করায় খরচ অনেক বেড়েছে।শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। কৃষকরা এত টাকা কেমন করে যোগান দিবে। এখন মরণ দশা কৃষকদের।
গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি বিঘা বোরো আবাদের শুরুতেই তার খরচ বেড়েছে ২ থেকে ২৫শ টাকা। শ্রমিকের মজুরি গত বছর ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে থেকে ৫শ টাকা। ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে সেচ ও জমিতে এই ধার-দেনার টাকায় ধান কাটার পরেই তা বিক্রি করতে হয়। তখন আবার ধানের দামও পাওয়া যায় না। ধান ঘরে তোলার সময় শ্রমিক পাওয়া যায় না। শ্রমিককে বেশি টাকা দিয়ে ধান কেটে নিতে হয়। তাই এবছর সরকার কৃষকের দিকে নজর না দিলে কৃষকরা মরে যাবে বলে জানান।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদী উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌর সভায় মোট ২ হাজার ৬ শত ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলার তালিকাভুক্ত পাঁচ হাজার কৃষকদের সার বিতরণ করা হয়েছে। এবার উপজেলায় জিরাশাইল, কাটারি, সম্পা কাটারি, ব্রি-৮৯, ব্রি- ৯২, বিনা-২৫, হাইব্রিড,তেজগল্ড, ময়না, টিয়া জাতের ধানের আবাদ করেছেন কৃষকরা।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ মিতা সরকার জানান এরই মধ্যে উপজেলায় বোরো ধান রোপণ শেষ হয়েছে। তবে কিছু এলাকায় দেরিতে রোপণ হয়। গত বছরের মতো এবারো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এবারো বাম্পার ফলন হবে এমন লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ধানের বাম্পার ফলন হবে।