ঢাকা ০৩:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবিসি ন্যাশনাল নিউজ২৪ ইপেপার

ব্রেকিং নিউজঃ
ঠাকুরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মশালা । লালমনিরহাটে সাংবাদিকের উপর হামলাকারী মাইদুল গ্রেফতার চাঁদাবাজির মামলায় নিষিদ্ধ সংগঠনের ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার ঠাকুরগাঁওয়ে পীরগঞ্জে স্ত্রীর নির্যাতন মামলায় উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার বরখাস্ত ! কাজী আখতার উল আলম ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান ১০ বছরের জন্য এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে ইজতেমার উদ্দেশে যাওয়ার পথে কুড়িগ্রাম ব্রহ্মপুত্রে নৌ-ডাকাতি ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের বাসায় দুর্ধষ চুরি ! ঠাকুরগাঁওয়ে রানীশংকৈলের খুনিয়াদীঘি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের উপর জুতা পরে হিরো আলমের টিকটক, ভিডিও সমালোচনার ঝড় ! ঠাকুরগাঁওয়ে ইএসডিও’র ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা — অংশীজনের প্রত্যাশা শীর্ষক সভা ।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) ও জশনে জুলুস  

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:০৫:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০২২ ২৩৩ বার পড়া হয়েছে

খুলনা সদর প্রতিনিধি

প্রতিবছর রবিউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখ মিলাদুন নবী( সঃ)পালন করা হয়। যেন মিলাদুন্নবী(সঃ) পালন করা নেকির কাজ মনে করা হয়। অথচ মিলাদুন্নবী সঃ পালনের কথা কুরআন হাদিস বা ফিকাহ শাস্ত্রে নেই। খোলাফায়ে রাশিদীনের ৩০ বছর, সাহাবীগণের ১২০ বছর, তাবিঈদের ১৭০ বছর এবং প্রায় তাবে-তাবিঈগণের প্রায় ২০০ বছরকাল পর্যন্ত এই মিলাদুন্নবী পালনের কোনো অস্তিত্বই ছিল না।

 

মিলাদ ও মিলাদুন্নবী এর অর্থ জন্মের সময়, জন্ম তারিখ, জন্মদিন। (আলকামুস-১/২১৫

 

ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থ হচ্ছে নবী (সা.) এর জন্ম দিনের উৎসব যা বর্তমানে ১২ রবিউল আওয়ালে নবী (সা.) এর জন্মের আনন্দোৎসব দিবস বলে প্রচার ও পালন করা হচ্ছে।

 

মিলাদুন্নবীর সূচনা ইতিহাসঃ

নবী (সা.) এর সময়, খোলাফায়ে রাশিদিনের সময় এবং উমাইয়া খলিফাদের সময়ে ঈদে মিলাদুন্নবী উৎসব ছিল না। আব্বাসীয় খলিফাদের যুগে বাদশা হারুনুর রশীদের মাতা খায়জুরান বিবি (১৭৩ হিজরি) মদিনা শরীফে নবী (সা.) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করার ও সেখানে দরূদ ও দু’আ পাঠ করার যে ব্যবস্থা রয়েছে, ঠিক সেভাবে নবী (সা.) মক্কায় যে ঘরে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন, সেই ঘরটির জিয়ারত ও সেখানে দু’আ করার প্রথা সর্ব প্রথম চালু আব্বাসীয় খলিফাদের যুগে বাদশা হারুনুর রশীদের মাতা খায়জুরান বিবি (১৭৩ হিঃ) করেন।

পরবর্তী কালে ১২ রবিউল আওয়ালে ঐ নারীর নেতৃত্বে র্তীথযাত্রীগণ প্রতি বছর নবী (সা.) এর জন্ম দিবস ধরে নিয়ে ঐ ঘরে আনন্দোৎসব পালন করেন। (ইবনে জারীর- ১১৪-১১৫পৃঃ)

 

অতঃপর হিজরি ৪০০ শতকে উবাঈদ নামে এক ইহুদী ইসলাম গ্রহণ করে তার নাম রাখে ওবায়দুল্লাহ। তিনি নিজেকে ফাতেমা (রা). এর বংশধর বলে দাবি করেন এবং মাহাদি উপাধি ধারণ করেন। এরই প্রপৌত্র (পৌত্রের ছেলে) মুয়ীযলি-দীনিল্লাহ ইহুদী ও খ্রিস্টানদের অনুকরণে ৫ রকম জন্মবার্ষিকী ইসলামে চালু করেন।

 

মিসরে ফাতেমী শিয়া শাসকরা মুসলিমদের মধ্যে জন্ম বার্ষিকী পালনের রীতি চালু করেন। মিসরে শিয়া খেলাফতের প্রতিষ্ঠাতা আবু মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ ইবনে মাইমুন জন্মসূত্রে প্রথমে ইহুদী ছিলেন। যেমন, তাদের ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধ শিয়া ব্যক্তিত্ব হলেন আবদুল্লাহ বিন সাবা। সেও ইয়েমেনের একজন ইহুদী ছিলেন। ইসলাম গ্রহণ করার পরও চিন্তা চেতনায় ইহুদী মতবাদ তাদের মাঝে বিদ্যমান ছিল। (আলহিদায়া ওয়ান নিহাইয়া- ১১/১৭২)

 

ইতিহাস থেকে জানা যায় মিসর সম্রাট ফেরাউন ইহুদীদের মাঝে জন্মবার্ষিকী রীতি প্রথম প্রচলনকারী, আর সে নিজেও একজন ইহুদী ছিলেন। ঐ ইহুদীর রীতি খ্রিষ্টানদের মধ্যে ইহুদীরাই প্রথম চালু করে। ফলে খ্রিষ্টানরা তাদের মধ্যে ঈসা (সা.) এর জন্মবার্ষিকী ‘ক্রিস মাস ডে’ পালন করে থাকে।

 

মুসলিমদের মাঝে এই জন্মবার্ষিকী চালু হওয়ার পর আফজাল ইবনে আমিরুল জাইশ (৪৮৫-৫১৫) মিসরের ক্ষমতা দখল করে এই মীলাদুন্নবীসহ আরো ৫টি (আলী (রা.), ফাতেমা (রা.), হাসান (রা.), হোসাইন (রা.), জাইনুল আবেদীন (রা.)) জন্মবার্ষিকির প্রথা বাতিল করে দেন। (আহসানউল কালাম ফি হায়াতি আমালিল আলাকু বিস সুন্নাতি ওয়াল বিদআতি -৪৪-৪৫ পৃ.)

 

৫১৫ হিজরিতে শিয়া খলিফা আমির বিল আহ-কা-মিল্লা তা পুনরায় চালু করেন। পরবর্তীতে কুরআন সুন্নাহর অনুসারী গাজী সালাহউদ্দীন আইয়্যুবী (৫৩২-৫৮৭ হিজরি) ঈদে মিলাদুন্নবীসহ সকল জন্মবার্ষিকী উৎসব বন্ধ করে দেন।

 

৬০৪ হিজরিতে ইরবীলের শাসক আবু সাইদ মুজাফফর উদ্দীন কুকবরী আবার মিলাদুন্নবী প্রথা চালু করেন। তার এই মাহফিলে ফজর হতে জোহর পর্যন্ত সূফী নামদারী ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকত এবং এই মাহফিলে লক্ষ লক্ষ স্বর্ণ মুদ্রা খরচ করা হত। (মীর আতুজ জামান ফি তারীখিল আইয়্যম- ৮/৩১০)

 

স্পেনের অধিবাসী আবুল খাত্তাব উমার ইবনে হাসান ইবনে দিহইয়াহ বাদশাকে মিলাদ সম্পর্কীয় “কিতাবুল তানভীল ফি মাউলিদিস সীরা-জিল মুনির” নামে একটি কিতাব লিখে ১০০০ হাজার স্বর্ণ মুদ্রা লাভ করার মাধ্যমে মিলাদুন্নবী পালনে উৎসাহিত করে। (আফাইয়াতুলআ’য়ান- ৩/১২২)

 

ভারতীয় উপমহাদেশে মিলাদুন্নবী (সঃ) এর প্রচলনঃ ভারতীয় উপমহাদেশে এর প্রচলনকরীরা ছিল শিয়া সম্প্রদায়। ইসলামের মধ্যে মিলাদ, মিলাদুন্নবী প্রচলরকারী হল ফাতেমীয় শাসক শিয়া মুয়ীযলি দীনিল্লাহ, আর ভারত উপমহাদেশে মিলাদ প্রচলনকারী হলেন মোঘল সম্রাট হুমায়ুন ও সম্রাট আকবরের মাতা ও অভিভাবক বৈরাম খাঁ । এরা দু‘জনেই কট্টর শিয়া ছিলেন।

 

সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাষ্ট্রদূত, শেষ সম্রাট বাহদুর শাহও ছিলেন শিয়া। মোট কথা সম্রাটদের মাধ্যমে এই উপমহাদেশে সুন্নীদের মাঝে মিলাদুন্নবীর প্রচলন হয়। ফলে শিয়া মতাদর্শী মিলাদ ও মিলাদুন্নবীর আনুষঙ্গিক ব্যাপারগুলো সুন্নিদের মধ্যে প্রচলিত হয়। (শাইখ আইনুল বারী, মিলাদুন্নবী ও বিভিন্ন বার্ষিক- ৩৩ পৃ.)

 

ইমামুল হিন্দ হযরত সরহিন্দী মুজাদ্দেদী আলফে সানী (রা.) কে মিলাদ সমর্থক আলেমগণ জিজ্ঞাসা করেন, মিলাদ মাহফিল অনাচারমুক্ত হলেও তাতে দোষের কিছু আছে কি? উত্তরে তিনি বলেন আমি মনে করি যতক্ষণ পর্যন্ত এই উৎসবের দরজা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত স্বার্থপর লোকেরা এর থেকে বিরত থাকবে না। যদি এর কিঞ্চিত জায়েজ হওয়ার ফতোয়া দেওয়া হয় তাহলে আমি জানি না ব্যাপারটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। (মাকতুবাতে ইমাম রব্বানী, দপ্তর-৩,

 

প্রখ্যাত আলিম মাওঃ আঃ. রহীম হানাফি (রা.) বলেন, মিলাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস হলো, রাসূল (সা.) এর ইন্তেকালের ২০০ শত বছর পর এমন একজন বাদশা প্রচলন করেছে, যাকে ইতিহাসে ফাসিক বাআল্লামা তাজুদ্দীন ফাকেহানী (রা.) বলেন, মিলাদের এই প্রথা কুরআনে নেই হাদিসে নেই। এবং পূর্ববাসীদের থেকে বর্ণিত ও নেই বরং এটি একটি বিদআত কাজ। (বারাহীনে ক্বাত্বেআ- ১৬৪ পৃ.)

 

এই প্রথা/রীতি খ্রিষ্টান ও হিন্দুদের থেকে মুসলিম সমাজে প্রবেশ করেছে। খ্রিস্টানজাতই প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর ঈসা আঃ. এর জন্ম দিবস “ক্রিস মাস ডে” এবং হিন্দু জাতি প্রতি বছর ৮ ভাদ্র “শ্রী কৃষ্ণের জন্ম দিবস” উপলক্ষে জন্মাষ্টমী পালন করে থাকে।

 

খ্রিষ্টান ও হিন্দুরা এই উপলক্ষে জুলুস/মিছিলের আয়োজন করে থাকে। তেমনি ভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনকারীরা জুলুস/ মিছিলের আয়োজন করে থাকে।

(মাহনামায়ে দারুল উলুম-এপ্রিল সংখ্যা ১৯৯০)

 

লেখকঃ

মুফতি আশরাফুল ইসলাম খুলনা

শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সঃ) ও জশনে জুলুস  

আপডেট সময় : ১২:০৫:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০২২

খুলনা সদর প্রতিনিধি

প্রতিবছর রবিউল আওয়াল মাসের ১২ তারিখ মিলাদুন নবী( সঃ)পালন করা হয়। যেন মিলাদুন্নবী(সঃ) পালন করা নেকির কাজ মনে করা হয়। অথচ মিলাদুন্নবী সঃ পালনের কথা কুরআন হাদিস বা ফিকাহ শাস্ত্রে নেই। খোলাফায়ে রাশিদীনের ৩০ বছর, সাহাবীগণের ১২০ বছর, তাবিঈদের ১৭০ বছর এবং প্রায় তাবে-তাবিঈগণের প্রায় ২০০ বছরকাল পর্যন্ত এই মিলাদুন্নবী পালনের কোনো অস্তিত্বই ছিল না।

 

মিলাদ ও মিলাদুন্নবী এর অর্থ জন্মের সময়, জন্ম তারিখ, জন্মদিন। (আলকামুস-১/২১৫

 

ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থ হচ্ছে নবী (সা.) এর জন্ম দিনের উৎসব যা বর্তমানে ১২ রবিউল আওয়ালে নবী (সা.) এর জন্মের আনন্দোৎসব দিবস বলে প্রচার ও পালন করা হচ্ছে।

 

মিলাদুন্নবীর সূচনা ইতিহাসঃ

নবী (সা.) এর সময়, খোলাফায়ে রাশিদিনের সময় এবং উমাইয়া খলিফাদের সময়ে ঈদে মিলাদুন্নবী উৎসব ছিল না। আব্বাসীয় খলিফাদের যুগে বাদশা হারুনুর রশীদের মাতা খায়জুরান বিবি (১৭৩ হিজরি) মদিনা শরীফে নবী (সা.) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করার ও সেখানে দরূদ ও দু’আ পাঠ করার যে ব্যবস্থা রয়েছে, ঠিক সেভাবে নবী (সা.) মক্কায় যে ঘরে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন, সেই ঘরটির জিয়ারত ও সেখানে দু’আ করার প্রথা সর্ব প্রথম চালু আব্বাসীয় খলিফাদের যুগে বাদশা হারুনুর রশীদের মাতা খায়জুরান বিবি (১৭৩ হিঃ) করেন।

পরবর্তী কালে ১২ রবিউল আওয়ালে ঐ নারীর নেতৃত্বে র্তীথযাত্রীগণ প্রতি বছর নবী (সা.) এর জন্ম দিবস ধরে নিয়ে ঐ ঘরে আনন্দোৎসব পালন করেন। (ইবনে জারীর- ১১৪-১১৫পৃঃ)

 

অতঃপর হিজরি ৪০০ শতকে উবাঈদ নামে এক ইহুদী ইসলাম গ্রহণ করে তার নাম রাখে ওবায়দুল্লাহ। তিনি নিজেকে ফাতেমা (রা). এর বংশধর বলে দাবি করেন এবং মাহাদি উপাধি ধারণ করেন। এরই প্রপৌত্র (পৌত্রের ছেলে) মুয়ীযলি-দীনিল্লাহ ইহুদী ও খ্রিস্টানদের অনুকরণে ৫ রকম জন্মবার্ষিকী ইসলামে চালু করেন।

 

মিসরে ফাতেমী শিয়া শাসকরা মুসলিমদের মধ্যে জন্ম বার্ষিকী পালনের রীতি চালু করেন। মিসরে শিয়া খেলাফতের প্রতিষ্ঠাতা আবু মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ ইবনে মাইমুন জন্মসূত্রে প্রথমে ইহুদী ছিলেন। যেমন, তাদের ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধ শিয়া ব্যক্তিত্ব হলেন আবদুল্লাহ বিন সাবা। সেও ইয়েমেনের একজন ইহুদী ছিলেন। ইসলাম গ্রহণ করার পরও চিন্তা চেতনায় ইহুদী মতবাদ তাদের মাঝে বিদ্যমান ছিল। (আলহিদায়া ওয়ান নিহাইয়া- ১১/১৭২)

 

ইতিহাস থেকে জানা যায় মিসর সম্রাট ফেরাউন ইহুদীদের মাঝে জন্মবার্ষিকী রীতি প্রথম প্রচলনকারী, আর সে নিজেও একজন ইহুদী ছিলেন। ঐ ইহুদীর রীতি খ্রিষ্টানদের মধ্যে ইহুদীরাই প্রথম চালু করে। ফলে খ্রিষ্টানরা তাদের মধ্যে ঈসা (সা.) এর জন্মবার্ষিকী ‘ক্রিস মাস ডে’ পালন করে থাকে।

 

মুসলিমদের মাঝে এই জন্মবার্ষিকী চালু হওয়ার পর আফজাল ইবনে আমিরুল জাইশ (৪৮৫-৫১৫) মিসরের ক্ষমতা দখল করে এই মীলাদুন্নবীসহ আরো ৫টি (আলী (রা.), ফাতেমা (রা.), হাসান (রা.), হোসাইন (রা.), জাইনুল আবেদীন (রা.)) জন্মবার্ষিকির প্রথা বাতিল করে দেন। (আহসানউল কালাম ফি হায়াতি আমালিল আলাকু বিস সুন্নাতি ওয়াল বিদআতি -৪৪-৪৫ পৃ.)

 

৫১৫ হিজরিতে শিয়া খলিফা আমির বিল আহ-কা-মিল্লা তা পুনরায় চালু করেন। পরবর্তীতে কুরআন সুন্নাহর অনুসারী গাজী সালাহউদ্দীন আইয়্যুবী (৫৩২-৫৮৭ হিজরি) ঈদে মিলাদুন্নবীসহ সকল জন্মবার্ষিকী উৎসব বন্ধ করে দেন।

 

৬০৪ হিজরিতে ইরবীলের শাসক আবু সাইদ মুজাফফর উদ্দীন কুকবরী আবার মিলাদুন্নবী প্রথা চালু করেন। তার এই মাহফিলে ফজর হতে জোহর পর্যন্ত সূফী নামদারী ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকত এবং এই মাহফিলে লক্ষ লক্ষ স্বর্ণ মুদ্রা খরচ করা হত। (মীর আতুজ জামান ফি তারীখিল আইয়্যম- ৮/৩১০)

 

স্পেনের অধিবাসী আবুল খাত্তাব উমার ইবনে হাসান ইবনে দিহইয়াহ বাদশাকে মিলাদ সম্পর্কীয় “কিতাবুল তানভীল ফি মাউলিদিস সীরা-জিল মুনির” নামে একটি কিতাব লিখে ১০০০ হাজার স্বর্ণ মুদ্রা লাভ করার মাধ্যমে মিলাদুন্নবী পালনে উৎসাহিত করে। (আফাইয়াতুলআ’য়ান- ৩/১২২)

 

ভারতীয় উপমহাদেশে মিলাদুন্নবী (সঃ) এর প্রচলনঃ ভারতীয় উপমহাদেশে এর প্রচলনকরীরা ছিল শিয়া সম্প্রদায়। ইসলামের মধ্যে মিলাদ, মিলাদুন্নবী প্রচলরকারী হল ফাতেমীয় শাসক শিয়া মুয়ীযলি দীনিল্লাহ, আর ভারত উপমহাদেশে মিলাদ প্রচলনকারী হলেন মোঘল সম্রাট হুমায়ুন ও সম্রাট আকবরের মাতা ও অভিভাবক বৈরাম খাঁ । এরা দু‘জনেই কট্টর শিয়া ছিলেন।

 

সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাষ্ট্রদূত, শেষ সম্রাট বাহদুর শাহও ছিলেন শিয়া। মোট কথা সম্রাটদের মাধ্যমে এই উপমহাদেশে সুন্নীদের মাঝে মিলাদুন্নবীর প্রচলন হয়। ফলে শিয়া মতাদর্শী মিলাদ ও মিলাদুন্নবীর আনুষঙ্গিক ব্যাপারগুলো সুন্নিদের মধ্যে প্রচলিত হয়। (শাইখ আইনুল বারী, মিলাদুন্নবী ও বিভিন্ন বার্ষিক- ৩৩ পৃ.)

 

ইমামুল হিন্দ হযরত সরহিন্দী মুজাদ্দেদী আলফে সানী (রা.) কে মিলাদ সমর্থক আলেমগণ জিজ্ঞাসা করেন, মিলাদ মাহফিল অনাচারমুক্ত হলেও তাতে দোষের কিছু আছে কি? উত্তরে তিনি বলেন আমি মনে করি যতক্ষণ পর্যন্ত এই উৎসবের দরজা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত স্বার্থপর লোকেরা এর থেকে বিরত থাকবে না। যদি এর কিঞ্চিত জায়েজ হওয়ার ফতোয়া দেওয়া হয় তাহলে আমি জানি না ব্যাপারটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। (মাকতুবাতে ইমাম রব্বানী, দপ্তর-৩,

 

প্রখ্যাত আলিম মাওঃ আঃ. রহীম হানাফি (রা.) বলেন, মিলাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস হলো, রাসূল (সা.) এর ইন্তেকালের ২০০ শত বছর পর এমন একজন বাদশা প্রচলন করেছে, যাকে ইতিহাসে ফাসিক বাআল্লামা তাজুদ্দীন ফাকেহানী (রা.) বলেন, মিলাদের এই প্রথা কুরআনে নেই হাদিসে নেই। এবং পূর্ববাসীদের থেকে বর্ণিত ও নেই বরং এটি একটি বিদআত কাজ। (বারাহীনে ক্বাত্বেআ- ১৬৪ পৃ.)

 

এই প্রথা/রীতি খ্রিষ্টান ও হিন্দুদের থেকে মুসলিম সমাজে প্রবেশ করেছে। খ্রিস্টানজাতই প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর ঈসা আঃ. এর জন্ম দিবস “ক্রিস মাস ডে” এবং হিন্দু জাতি প্রতি বছর ৮ ভাদ্র “শ্রী কৃষ্ণের জন্ম দিবস” উপলক্ষে জন্মাষ্টমী পালন করে থাকে।

 

খ্রিষ্টান ও হিন্দুরা এই উপলক্ষে জুলুস/মিছিলের আয়োজন করে থাকে। তেমনি ভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনকারীরা জুলুস/ মিছিলের আয়োজন করে থাকে।

(মাহনামায়ে দারুল উলুম-এপ্রিল সংখ্যা ১৯৯০)

 

লেখকঃ

মুফতি আশরাফুল ইসলাম খুলনা

শেয়ার করুন