ঢাকা ০২:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবিসি ন্যাশনাল নিউজ২৪ ইপেপার

ব্রেকিং নিউজঃ
বগুড়ায় বাদীর কাছ থেকে টাকা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে এসআই প্রত্যাহার আদালতের নারী হাজত খানায় নারীর সাথে তুফানের সাক্ষাতের ঘটনায় বেড়িয়ে এলো আসল রহস্য গাজীপুরে পোশাক শিল্পে আবারও অসনি সংকেত  ঘোড়ার মাংশ বিক্রি বন্ধ ঘোষণা  গাজীপুর প্রতিনিধি আমতলীতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকদের মানববন্ধন কর্মসূচী পালন, বরগুনায় নিহত মন্টু দাসের পরিবারের পাশে আফরোজা আব্বাস  সাধারণ মানুষের স্বার্থে ট্রাফিক ও জানজট মুক্ত করতে সাব ট্রাফিক স্টেশন উদ্বোধনে পুলিশ সুপার  বগুড়ায় পরকীয়া প্রেমিকাকে হত্যার দায়ে একজনের যাবজ্জীবন বাগজানায় ছাত্রশিবিরের ইফতার মাহফিল  ভাসমান ডিপোতে তেল নেই ৫ বছর ধরে, ভোগান্তিতে ৪ জেলার মানুষ

প্রত্যন্ত গ্রামে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে ‘বঙ্গভাষা লেখক জাদুঘর’

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
  • আপডেট সময় : ০১:০৯:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫ ৫ বার পড়া হয়েছে

আনোয়ার সাঈদ তিতু,

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:-

কুড়িগ্রাম জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রয়াত কবি-সাহিত্যিকদের দুর্লভ ছবি ও জীবন বৃত্তান্তসহ দুর্লভ পত্রপত্রিকা নিয়ে গড়ে উঠেছে বঙ্গভাষা লেখক জাদুঘর ও পাঠাগার। ব্যক্তি উদ্যোগে এ জাদুঘর ও পাঠাগার গড়ে তুলেছেন স্কুল শিক্ষক তৌহিদ উল-ইসলাম, যা এ অঞ্চলের সাহিত্যনুরাগী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর বড়ভিটা গ্রাম। এ গ্রামের স্কুলশিক্ষক তৌহিদ উল-ইসলাম। তিনি ফুলবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালেযের শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে এই উপমহাদেশের বাংলা ভাষাভাষী প্রখ্যাত কবি, লেখক ও সাহিত্যিকদের ছবি ও জীবনবৃত্তান্তসহ বিভিন্ন পান্ডুলিপি ও দুর্লভ পত্রপত্রিকা সংগ্রহ করেন। পরে তার সংগ্রহশালার পরিধি বড় হয়ে উঠলে নিজ উদ্যোগে নিজের বাজির উঠোনে গড়ে তুলেন ‘বঙ্গভাষা লেখক জাদুঘর ও পাঠাগার’।

 

জাদুঘরে ঠাঁই পেয়েছে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের সম্পাদিত দেড়শ বছর পূর্বের বঙ্গদর্শন পত্রিকা, প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত শতবছর পূর্বের সবুজ পত্রের প্রথম সংখ্যা। শতবর্ষী প্রবাসী নিরুপমা, ভারতবর্ষ ও সাহিত্য পরিষদ পত্রিকাসহ প্রায় দুই শতাধিক কবি ও লেখকের ছবি। বিলুপ্ত পত্র-পত্রিকার মধ্যে রয়েছে সচিত্র ভারতী, মৃদঙ্গ, উল্টোরথ, জলসা, পাক-সমাচার, এলান, পাকিস্তানি খবরসহ দুই শতাধিক মূল পত্র-পত্রিকা। সংগ্রহশালায় রয়েছে মধ্যেযুগের হাতে লেখা তালপাতার পুঁতি, গাছের বাঁকলে লেখা পুঁতি এবং তুলট কাগজে লেখা পুঁতিসহ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আর্দশলিপি, বর্ণপরিচয় ও বিশ্বের সবচেয়ে ছোট কোরআন শরিফ। প্রতিদিন এ জাদুঘর পরিদর্শনে আসেন বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাহিত্যপ্রেমীরা।

 

পাঠাগার দেখতে আশা স্কুলছাত্রী আশামনি বলে, ‘প্রতি শুক্র ও শনিবার আমরা পাঠাগারে আসি। এখানে অনেক প্রাচীন বইপত্র ও ছবি দেখি। এখানে অনেক কবির ছবিসহ পরিচয় দেয়া আছে, যা দেখে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। পাশাপাশি অনেক অজানা বিষয়ও জানতে পারছি।’

 

আরেক স্কুলছাত্র ফাহিম বলে, ‘পাঠাগারটি হওয়ার পর থেকে আমি এখানে আসি। এই পাঠাগারে বিখ্যাত বিখ্যাত কবির নাম ও ইতিহাস সম্পর্কে বলা হয়েছে। যা দেখে ও পড়ে আমি জ্ঞান অর্জন করতে পারছি।’

 

স্থানীয় মোস্তাফিজুর রহমান জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমাদের এলাকার শিক্ষক তৌহিদ উল-ইসলাম। এখানকার শিক্ষার মান উন্নয়ন ও স্থানীয় ছাত্র ছাত্রীদের বাংলা সাহিত্যের যে অতিথ ঐতিহ্য ধরে রাখতে তিনি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি তার নিজ উদ্যোগে এই পাঠাগার ও লেখক জাদুঘর করেন। আমরা এলাকাবাসী হিসেবে যখন এখানে আসি ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে আলাদা একটা পরিবর্তন দেখি। কেন না মোবাইল আসক্তের এই সময়ে এখানে বই ও জাদুঘর দেখে সময় পার করছেন ছাত্র ছাত্রীরা। তার এমন উদ্যোগে আমরা কৃতজ্ঞ।

 

কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার বঙ্গভাষা লেখক জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা তৌহিদ উল-ইসলাম বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস- ঐতিহ্য আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই এ উদ্যোগ আমার। এটি বড় পরিসরে করতে ১৮ শতক জমি জাদুঘরের নামে দানপত্র করে দিয়েছি। সরকারি কিংবা বেসরকারি ভাবে সহায়তা না পেলে অবসর কালীন সময়ে আমি নিজ উদ্যোগে ভবন নির্মাণ করে পাঠাগারের পরিধি বাড়াবো ইনশাআল্লাহ।

 

এদিকে বঙ্গভাষার লেখক জাদুঘরের গ্যালারিতে রয়েছে বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রমথ চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জসিম উদ্দিন, কামিনী রায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, শহীদুল্লাহ কায়সার, আনোয়ার পাশা, জীবনানন্দ দাশ, হুমায়ূন আহমেদ, বেগম রোকেয়া, সাখাওয়াত হোসেন, কাজি নজরুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, মীর মোশারফ হোসেন, শামসুর রহমান, সুফিয়া কামালসহ ২ শতাধিক প্রয়াত বরেণ্য ব্যক্তির ছবি, জীবন বৃত্তান্ত ও পান্ডুলিপি।

শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুন

প্রত্যন্ত গ্রামে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে ‘বঙ্গভাষা লেখক জাদুঘর’

আপডেট সময় : ০১:০৯:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

আনোয়ার সাঈদ তিতু,

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:-

কুড়িগ্রাম জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রয়াত কবি-সাহিত্যিকদের দুর্লভ ছবি ও জীবন বৃত্তান্তসহ দুর্লভ পত্রপত্রিকা নিয়ে গড়ে উঠেছে বঙ্গভাষা লেখক জাদুঘর ও পাঠাগার। ব্যক্তি উদ্যোগে এ জাদুঘর ও পাঠাগার গড়ে তুলেছেন স্কুল শিক্ষক তৌহিদ উল-ইসলাম, যা এ অঞ্চলের সাহিত্যনুরাগী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর বড়ভিটা গ্রাম। এ গ্রামের স্কুলশিক্ষক তৌহিদ উল-ইসলাম। তিনি ফুলবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালেযের শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে এই উপমহাদেশের বাংলা ভাষাভাষী প্রখ্যাত কবি, লেখক ও সাহিত্যিকদের ছবি ও জীবনবৃত্তান্তসহ বিভিন্ন পান্ডুলিপি ও দুর্লভ পত্রপত্রিকা সংগ্রহ করেন। পরে তার সংগ্রহশালার পরিধি বড় হয়ে উঠলে নিজ উদ্যোগে নিজের বাজির উঠোনে গড়ে তুলেন ‘বঙ্গভাষা লেখক জাদুঘর ও পাঠাগার’।

 

জাদুঘরে ঠাঁই পেয়েছে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের সম্পাদিত দেড়শ বছর পূর্বের বঙ্গদর্শন পত্রিকা, প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত শতবছর পূর্বের সবুজ পত্রের প্রথম সংখ্যা। শতবর্ষী প্রবাসী নিরুপমা, ভারতবর্ষ ও সাহিত্য পরিষদ পত্রিকাসহ প্রায় দুই শতাধিক কবি ও লেখকের ছবি। বিলুপ্ত পত্র-পত্রিকার মধ্যে রয়েছে সচিত্র ভারতী, মৃদঙ্গ, উল্টোরথ, জলসা, পাক-সমাচার, এলান, পাকিস্তানি খবরসহ দুই শতাধিক মূল পত্র-পত্রিকা। সংগ্রহশালায় রয়েছে মধ্যেযুগের হাতে লেখা তালপাতার পুঁতি, গাছের বাঁকলে লেখা পুঁতি এবং তুলট কাগজে লেখা পুঁতিসহ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আর্দশলিপি, বর্ণপরিচয় ও বিশ্বের সবচেয়ে ছোট কোরআন শরিফ। প্রতিদিন এ জাদুঘর পরিদর্শনে আসেন বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাহিত্যপ্রেমীরা।

 

পাঠাগার দেখতে আশা স্কুলছাত্রী আশামনি বলে, ‘প্রতি শুক্র ও শনিবার আমরা পাঠাগারে আসি। এখানে অনেক প্রাচীন বইপত্র ও ছবি দেখি। এখানে অনেক কবির ছবিসহ পরিচয় দেয়া আছে, যা দেখে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। পাশাপাশি অনেক অজানা বিষয়ও জানতে পারছি।’

 

আরেক স্কুলছাত্র ফাহিম বলে, ‘পাঠাগারটি হওয়ার পর থেকে আমি এখানে আসি। এই পাঠাগারে বিখ্যাত বিখ্যাত কবির নাম ও ইতিহাস সম্পর্কে বলা হয়েছে। যা দেখে ও পড়ে আমি জ্ঞান অর্জন করতে পারছি।’

 

স্থানীয় মোস্তাফিজুর রহমান জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমাদের এলাকার শিক্ষক তৌহিদ উল-ইসলাম। এখানকার শিক্ষার মান উন্নয়ন ও স্থানীয় ছাত্র ছাত্রীদের বাংলা সাহিত্যের যে অতিথ ঐতিহ্য ধরে রাখতে তিনি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি তার নিজ উদ্যোগে এই পাঠাগার ও লেখক জাদুঘর করেন। আমরা এলাকাবাসী হিসেবে যখন এখানে আসি ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে আলাদা একটা পরিবর্তন দেখি। কেন না মোবাইল আসক্তের এই সময়ে এখানে বই ও জাদুঘর দেখে সময় পার করছেন ছাত্র ছাত্রীরা। তার এমন উদ্যোগে আমরা কৃতজ্ঞ।

 

কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার বঙ্গভাষা লেখক জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা তৌহিদ উল-ইসলাম বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস- ঐতিহ্য আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই এ উদ্যোগ আমার। এটি বড় পরিসরে করতে ১৮ শতক জমি জাদুঘরের নামে দানপত্র করে দিয়েছি। সরকারি কিংবা বেসরকারি ভাবে সহায়তা না পেলে অবসর কালীন সময়ে আমি নিজ উদ্যোগে ভবন নির্মাণ করে পাঠাগারের পরিধি বাড়াবো ইনশাআল্লাহ।

 

এদিকে বঙ্গভাষার লেখক জাদুঘরের গ্যালারিতে রয়েছে বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রমথ চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জসিম উদ্দিন, কামিনী রায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, শহীদুল্লাহ কায়সার, আনোয়ার পাশা, জীবনানন্দ দাশ, হুমায়ূন আহমেদ, বেগম রোকেয়া, সাখাওয়াত হোসেন, কাজি নজরুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, মীর মোশারফ হোসেন, শামসুর রহমান, সুফিয়া কামালসহ ২ শতাধিক প্রয়াত বরেণ্য ব্যক্তির ছবি, জীবন বৃত্তান্ত ও পান্ডুলিপি।

শেয়ার করুন