ঢাকা ১০:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবিসি ন্যাশনাল নিউজ২৪ ইপেপার

ব্রহ্মপুত্রে নাব্যতা সংকট চরমে, ৩ মাস ধরে বন্ধ ফেরি 

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:-
  • আপডেট সময় : ০৩:২৯:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫ ৬ বার পড়া হয়েছে

আনোয়ার সাঈদ তিতু,

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:-

নাব্যতা সংকট দে‌খি‌য়ে প্রায় তিন মাস ধরে চিলমারী-রৌমারী নৌরুটে ফে‌রি চলচাল বন্ধ রয়েছে। এর আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ব্রহ্মপুত্র নদে পানির গভীরতা কম হওয়ায় ফেরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।

 

অভিযোগ রয়েছে, নাব্যতা সংকটে নদী খননের নামে বিআইডব্লিউটিএর দা‌য়িত্বশীল এক‌টি চক্র ব্রহ্মপুত্র নদের বালু বি‌ক্রির সঙ্গে জ‌ড়িয়ে পড়েছে। অপরদিকে নাব্যতার সংকট দে‌খি‌য়ে ফে‌রি চলাচল বন্ধ থাকায় চক্রটি নৌকা মা‌লিক‌দের স‌ঙ্গে যোগসাজশ ক‌রে ক‌মিশন বাণিজ্য কর‌ছে।

 

এদিকে মাসের পর মাস ফেরি বন্ধ থাকায় কো‌নো ভ্রূক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের। ফলে সরকা‌রের লোকসা‌নের পাশাপা‌শি জনগণের ‌প‌কেট কাটা যা‌চ্ছে। ফেরি চলাচল না হওয়ায় প্রায় প্রতি মাসে সা‌ড়ে ১২ লাখ টাকা গচ্ছা দিচ্ছে বিআইডব্লিউটিসি। পাশাপাশি ফেরি বন্ধ থাকায় ফেরির ইঞ্জিন ক্ষতির মুখে পড়ছে।

 

জানা গেছে, চিলমারী নৌ-বন্দর ঘাট থেকে রৌমারীর ফলুয়ার চর ঘাটের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। এই ২২ কিলোমিটার নদী পথ পাড়ি দিতে নানা সংগ্রাম করতে হয় এ অঞ্চলের মানুষদের। দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চিলমারী-রৌমারী নৌ রুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়।

 

অপরদিকে দীর্ঘদিন ধরে ফেরি বন্ধ থাকায় রৌমারী ফেরিঘাট দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের বালু ভর্তি ট্রাক্টর, ডাম্পার যাতায়াত করায় ঘাটটি নষ্ট হয়ে গেছে। ফেরি বন্ধ থাকায় আসন্ন ঈদুল ফিতরে ঘর ফেরা মানুষদের ভোগা দ্বিগুণ হবে।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উত্তরাঞ্চলের যানবাহনগুলো ১৫০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিয়ে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করে। ফেরিটি রমনা ঘাট হতে ফকিরেরহাট ঘাটে স্থানান্তর করা হলে অনেক কম সময়ে এ অঞ্চলের বাস, ট্রাক, ছোট গাড়িগুলো ফেরি পারাপার করে অল্প সম‌য়ে ঢাকা যাতায়াত করতে পারবে। এতে যানবাহনগুলোর সময় এবং জ্বালানি খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। এ ছাড়া নাইট নেভিগেশন (বাতি) ব্যবস্থা চালু থাকলে রাতের বেলা ফেরি চলা করা সম্ভব হ‌বে ব‌লে জানায় সূত্রটি।

 

দিনাজপুর থে‌কে চিলমারীর ফ‌কি‌রেরহা‌টের ঘাটে চাল নি‌য়ে আসা ট্রাকচালক লোকমান আলী বলেন, এই ঘাট (ফ‌কি‌রেরহাট ঘাট) দি‌য়ে ফেরি চলাচল করলে রুটটি অনেক ছোট হতো ও দিবারাত্রি চলাচল কর‌তে পারলে উত্তর অঞ্চলের যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, ছোট গাড়িগুলো এই রুট ব্যবহার করে ঢাকা চলাচল করতো। এই রু‌টের সমস্যাগু‌লো সমাধান করলে এ ফে‌রি উত্তর অঞ্চলের প্রধান প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করবে।

 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন ক‌র্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চিলমারীর ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান বলেন, গত ২৩ ডিসেম্বর নাব্যতা সংকটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কদম এবং কুঞ্জলতা নামে দুটি ফেরি চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাখা আছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক নৌরুটের প্রয়োজনীয় সমস্যা সমাধান করে ফেরি চলাচলের নির্দেশনা এলে সঙ্গে সঙ্গেই সার্ভিস চালু করা হবে।

 

বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক শেখ রবিউল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ওয়াটার লেভেল না বাড়া পর্যন্ত ফেরি চলাচল করা সম্ভব নয়। কেননা প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে ফেরি চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। ত‌বে ‌রৌমারীর ঘাট দি‌য়ে বালু যাওয়ার কারণে ঘাট নষ্ট হওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।

শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুন

ব্রহ্মপুত্রে নাব্যতা সংকট চরমে, ৩ মাস ধরে বন্ধ ফেরি 

আপডেট সময় : ০৩:২৯:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫

আনোয়ার সাঈদ তিতু,

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:-

নাব্যতা সংকট দে‌খি‌য়ে প্রায় তিন মাস ধরে চিলমারী-রৌমারী নৌরুটে ফে‌রি চলচাল বন্ধ রয়েছে। এর আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ব্রহ্মপুত্র নদে পানির গভীরতা কম হওয়ায় ফেরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।

 

অভিযোগ রয়েছে, নাব্যতা সংকটে নদী খননের নামে বিআইডব্লিউটিএর দা‌য়িত্বশীল এক‌টি চক্র ব্রহ্মপুত্র নদের বালু বি‌ক্রির সঙ্গে জ‌ড়িয়ে পড়েছে। অপরদিকে নাব্যতার সংকট দে‌খি‌য়ে ফে‌রি চলাচল বন্ধ থাকায় চক্রটি নৌকা মা‌লিক‌দের স‌ঙ্গে যোগসাজশ ক‌রে ক‌মিশন বাণিজ্য কর‌ছে।

 

এদিকে মাসের পর মাস ফেরি বন্ধ থাকায় কো‌নো ভ্রূক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের। ফলে সরকা‌রের লোকসা‌নের পাশাপা‌শি জনগণের ‌প‌কেট কাটা যা‌চ্ছে। ফেরি চলাচল না হওয়ায় প্রায় প্রতি মাসে সা‌ড়ে ১২ লাখ টাকা গচ্ছা দিচ্ছে বিআইডব্লিউটিসি। পাশাপাশি ফেরি বন্ধ থাকায় ফেরির ইঞ্জিন ক্ষতির মুখে পড়ছে।

 

জানা গেছে, চিলমারী নৌ-বন্দর ঘাট থেকে রৌমারীর ফলুয়ার চর ঘাটের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। এই ২২ কিলোমিটার নদী পথ পাড়ি দিতে নানা সংগ্রাম করতে হয় এ অঞ্চলের মানুষদের। দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চিলমারী-রৌমারী নৌ রুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়।

 

অপরদিকে দীর্ঘদিন ধরে ফেরি বন্ধ থাকায় রৌমারী ফেরিঘাট দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের বালু ভর্তি ট্রাক্টর, ডাম্পার যাতায়াত করায় ঘাটটি নষ্ট হয়ে গেছে। ফেরি বন্ধ থাকায় আসন্ন ঈদুল ফিতরে ঘর ফেরা মানুষদের ভোগা দ্বিগুণ হবে।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উত্তরাঞ্চলের যানবাহনগুলো ১৫০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিয়ে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করে। ফেরিটি রমনা ঘাট হতে ফকিরেরহাট ঘাটে স্থানান্তর করা হলে অনেক কম সময়ে এ অঞ্চলের বাস, ট্রাক, ছোট গাড়িগুলো ফেরি পারাপার করে অল্প সম‌য়ে ঢাকা যাতায়াত করতে পারবে। এতে যানবাহনগুলোর সময় এবং জ্বালানি খরচ অনেকাংশে কমে যাবে। এ ছাড়া নাইট নেভিগেশন (বাতি) ব্যবস্থা চালু থাকলে রাতের বেলা ফেরি চলা করা সম্ভব হ‌বে ব‌লে জানায় সূত্রটি।

 

দিনাজপুর থে‌কে চিলমারীর ফ‌কি‌রেরহা‌টের ঘাটে চাল নি‌য়ে আসা ট্রাকচালক লোকমান আলী বলেন, এই ঘাট (ফ‌কি‌রেরহাট ঘাট) দি‌য়ে ফেরি চলাচল করলে রুটটি অনেক ছোট হতো ও দিবারাত্রি চলাচল কর‌তে পারলে উত্তর অঞ্চলের যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, ছোট গাড়িগুলো এই রুট ব্যবহার করে ঢাকা চলাচল করতো। এই রু‌টের সমস্যাগু‌লো সমাধান করলে এ ফে‌রি উত্তর অঞ্চলের প্রধান প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করবে।

 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন ক‌র্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চিলমারীর ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান বলেন, গত ২৩ ডিসেম্বর নাব্যতা সংকটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কদম এবং কুঞ্জলতা নামে দুটি ফেরি চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাখা আছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক নৌরুটের প্রয়োজনীয় সমস্যা সমাধান করে ফেরি চলাচলের নির্দেশনা এলে সঙ্গে সঙ্গেই সার্ভিস চালু করা হবে।

 

বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক শেখ রবিউল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ওয়াটার লেভেল না বাড়া পর্যন্ত ফেরি চলাচল করা সম্ভব নয়। কেননা প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে ফেরি চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। ত‌বে ‌রৌমারীর ঘাট দি‌য়ে বালু যাওয়ার কারণে ঘাট নষ্ট হওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।

শেয়ার করুন