কুড়িগ্রামে রিমোট কন্ট্রোল বিমান তৈরি করে প্রশংসিত স্কুলছাত্র
- আপডেট সময় : ০৮:৪০:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২ বার পড়া হয়েছে
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
দেশের উত্তরের শেষ জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহলে রিমোট কন্ট্রোল বিমান তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে স্কুলছাত্র শামীম রানা। তার তৈরি বিমানটি এক নজর দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা।
জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিলুপ্ত ছিটমহলের হাবিবপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলামের বড় ছেলে শামীম রানা। ফুলবাড়ী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সে। ছোট বয়স থেকেই বিমান তৈরির স্বপ্ন ছিল। এক দেড় বছর ধরে ইউটিউব ও গুগলে বিমান তৈরি দেখে তা তৈরির ইচ্ছা জাগে তা। অভাব-অনটনের সংসারে বিমান তৈরির টাকা কোথায় পাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকলেও থেমে যায়নি শামীম। বাবা-মা থেকে টাকা টাকা নিয়ে শুরু করে বিমান তৈরির কাজ। ইন্টারনেট ঘেঁটে দীর্ঘ ৯ মাসের চেষ্টায় বিমান তৈরি করে সে। তৈরি শেষে বিমানটি সফলভাবে ৫ থেকে ১০ মিনিট ধরে আকাশে উড়িয়েও দেখে।
শামীমের গ্রাম হাবিবপুরসহ পুরো ছিটমহলবাসী দীর্ঘ ৬৮ বছর অন্ধকার জীবন থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখেছেন। এক সময় বন্দিদশায় জীবন-কাটতো তাদের। ছিল না চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা। আধুনিক ঘরবাড়ি তো দূরের কথা, চলাচলের কোনো রাস্তা-ঘাটও ছিল না। নদী, খাল, ডোবা এমনকি জমির আইলের ওপর দিয়ে মানুষজন কোনোমতে যাতায়াত করতেন। পরিচয় গোপন রেখে বাংলাদেশের বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে পড়াশুনা করেছেন। ভয়ে ভয়ে করে চিকিৎসা নিয়েছেন। এভাবেই চলেছে তাদের ৬৮ বছরের অবরুদ্ধ জীবন। সেই অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের অবসান ঘটেছে সাবেক ছিটমহল বাসিন্দাদের।
স্কুলছাত্র শামীম রানা জানায়, তার বিমানটি বাংলাদেশ বিমানের আদলে তৈরি। এটির দৈর্ঘ্যে ৫৬ ইঞ্চি, আর প্রস্থে ৫০ ইঞ্চি লম্বা। ওজন ১ কেজি ৩০০ গ্রাম। ওই বিমানে ৯৪০ গ্রাম ওজনের ২টি ব্রাশলেস ড্রোন মোটর ব্যবহার করা হয়েছে। রিচার্জেবল লিপো ব্যাটারির শক্তিতে চালিত বিমানটি রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বর্তমানে ওই বিমানটি তিন কেজি ওজন বহন করতে পারে।
শামীম আরও জানান, বিমান তৈরিতে এ পর্যন্ত তার ১৯ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিমানটি আকাশে টানা সর্বোচ্চ ১০ মিনিট উড়তে পারে। আমি এর নাম দিয়েছি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স (অচিন পাখি)। টাকা জোগাড় হলে বিমানটি ১ থেকে ২ জন মানুষ নিয়ে চলাচলের উপযোগী করে তৈরি করবো। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে চীন ও আমেরিকার মতো উন্নত প্রযুক্তির মনুষ্যবিহীন প্লেন বানাতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস।
শামীম রানার বাবা শহিদুল ইসলাম জানান, আমার ছেলের তার স্বপ্ন সে বিমান তৈরি করবে। টাকার জন্য আমাকে চাপ দিতো। প্রথমে আমি নিষেধ করেছি। পরে অনেক কষ্টে তাকে টাকা দিয়েছি। সেই টাকা দিয়ে ৯ মাসে পড়াশুনার পাশাপাশি বিমানটি তৈরি করেছে। এখন আমার ছেলের তৈরি করা বিমানটি আকাশে উড়ছে। বিমানটি দেখতে প্রতিদিনেই বাড়ীতে মানুষে ভিড় জমে। এখন সত্যি খুবই ভালো লাগছে।
ওই গ্রামের সিয়াম আমিনুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমান বলেন, টানা ৬৮ বছর অন্ধকারে ছিলাম। এখন আমাদের প্রতিটি পরিবারের মাঝে আলো ছড়িয়ে পড়েছে। তার জ্বলন্ত উদাহরণ শামীম রানা। সে নিজেই তৈরি করেছে বিমান। তার তৈরি বিমানটি আকাশে উড়তে দেখে আমাদের মধ্যে অনেক আনন্দ লাগে।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জানান, এক স্কুলছাত্র একটি বিমান তৈরি করেছে বিষয়টি জানি। নিঃসন্দেহে একটা ভালো কাজ করেছে। এটা ফুলবাড়ীর গর্ব। তার সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জেনে তাকে সহায়তা করার আশ্বাস দেন ইউএনও।