শেরপুরে গারোদের ওয়ানগালা উৎসব পালন
- আপডেট সময় : ০৭:৫৩:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ২৬ বার পড়া হয়েছে
রাকিবুল আওয়াল পাপুল, শেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
গারো পাহাড়ের আদিবাসী নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ও কৃষ্টির অন্যতম প্রধান উৎসব নবান্ন বা ওয়ানগালা উৎসব। ফসল ঘরে উঠানোর পর প্রতিবছর পালন করা হয় ওয়ানগালা উৎসব। শেরপুরের সীমান্তবর্তী ও দেশের ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড় এলাকায় গারোরা এবারও ওয়ানগালা উৎসবের আয়োজন করে। এখানে তারা নেচে-গেয়ে উৎসবে মেতে ওঠে।
আজ রোববার ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ের মরিয়মনগরে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় এ ওয়ানগালা উৎসব। এ বছর ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় ওয়ানগালা উৎসব ছিল মরিয়মনগর ধর্মপল্লিতেই।
একসময় গারো পাহাড়ি এলাকায় জুম চাষ হতো। তখন ওই জুম বা ধান ঘরে উঠানোর সময় গারোদের শস্য দেবতা ‘মিসি সালজং’কে উৎসর্গ করে এই উৎসবের আয়োজন করা হতো। এ সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে, তাদের শস্য দেবতা একসময় পাহাড়ি এলাকার গারোদের হাতে কিছু শস্য দিয়ে বলেছিল, ‘তোমরা এটা রোপণ কর তাতে তোমাদের আহারের সংস্থান হবে এবং তোমরা যে শস্য পাবে তা থেকে সামান্য কিছু শস্য আমার নামে উৎসর্গ করবে।’ এরপর থেকেই গারোরা তাদের শস্য দেবতাকে এই ফসল উৎসর্গ করে আসছিল। কিন্তু গারো পাহাড়ের অধিকাংশ গারো ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হওয়ায় এখন ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে একত্রে করে পালন করা হয় এ উৎসব। এখন নতুন ফসল কেটে যিশু খ্রিস্ট বা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করেন তারা। সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার গারো পাহাড়ের নৃ-গোষ্ঠীর বা আদিবাসীরা মনে করে ঈশ্বরের দয়ায় তারা ফসল উৎপাদন করে থাকে। তাই তারা প্রতি বছরের ন্যায় আয়োজন করে থাকে নবান্ন বা গারোদের ভাষায় ওয়ানগালা উৎসব।
মরিয়মনগর ধর্মপল্লিতে ১৯৮৫ সাল থেকে ওয়ানগালা উৎসব পালন করা শুরু হয়। এবারও আজ গারো পাহাড়ের মরিয়মনগর ধর্মপল্লিতে ধুমধামে আয়োজন করা হয় ওয়ানগালা উৎসব।
মূলত থক্কা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয় এ উৎসব। এরপর প্রার্থনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাচ গান ও খাওয়া-দাওয়া, খেলাধুলা ও র্যাফেল ড্রসহ উৎসবে মেতে ওঠে নৃ-গোষ্ঠীর নারী, পুরুষ ও শিশুরা। এখানে অনেকেই তাদের ফসলের কিছু অংশ প্রভুর নামে উৎসর্গ করেন, আবার কেউ প্রভুর কাছে দয়া চান।
শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা ভালো ফলাফল করতে প্রভুর কাছে এসেছে। তাদের বিশ্বাস প্রভু আশীর্বাদ করলে সবকিছুই ভালো হবে। প্রভু তাদের পরিবারের জন্য দয়া করে থাকেন।
সমিকা ম্রং বলেন, ‘আমরা আসলে নতুন ফসল প্রভুকে উৎসর্গ করার জন্যই এই উৎসব পালন করে থাকি। নতুন ফসল হওয়ার পর আমরা প্রভুকে আগে উৎসর্গ করে থাকি। তারপর আমরা খাই। এইটা নবান্ন উৎসবের মতোই। কিন্তু আমরা এইটাকে ওয়ানগালা হিসেবে পালন করি। এ উৎসবের মাধ্যমে খ্রিস্টকে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই।’
ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের বিসপ পনেন পল কুবি বলেন, ‘আমাদের মান্দি সমাজে আদি পিতামাতা যারা ছিলেন সাংসারিক ধর্ম পালন করতেন। তারা আনন্দে ওয়ানগালা উৎসব পালন করতেন। এ ওয়ানগালা হলো আমাদের উৎসব। যেখানে জমির নতুন ফসল ঈশ্বরকে দেওয়া বা কৃতজ্ঞতা জানানো। এই দিবসে আমরা খ্রিস্ট রাজাকে সম্মান ও বিশ্বাস প্রদর্শন করে থাকি। আমরা যখন এই উৎসব পালন করি তখন চিন্তা করি কীভাবে আমরা আগামী বছর যিশুকে সাথে নিয়ে পথ চলতে পারি।’
প্রাচীনকাল থেকে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্ম ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরাই এর মূল লক্ষ্য। উৎসব ঘিরে ধর্মপল্লির পাশে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও শিশুদের নানা রকমের খেলনা নিয়ে বসে মেলা। রাতব্যাপী চলে গান-বাজনা, আনন্দ-উৎসব।