বাংলাদেশের সঙ্গে ‘দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারে’ ঢাকায় ডোনাল্ড লু
- আপডেট সময় : ১০:৪৮:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪ ১৫১ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের সঙ্গে ‘দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারে’ ঢাকায় ডোনাল্ড লু
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট ডোনাল্ড লু ‘দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার’ করতে এবং একটি অবাধ, উন্মুক্ত ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রদর্শন করতে মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছেছেন।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রিন্সিপাল ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, বাংলাদেশে তিনি সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের নেতা এবং অন্যান্য বাংলাদেশিদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা গভীর করার বিষয়ে কথা বলবেন। যার মধ্যে জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলায় দুই দেশ যাতে আরও সহযোগিতা করতে পারে সেজন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করার বিষয়ও থাকবে।
এই অঞ্চলে তার ত্রিদেশীয় সফরের (১০-১৫ মে) অংশ হিসেবে লু ঢাকায় এসেছেন। এর আগে তিনি ভারত ও শ্রীলঙ্কা সফর করেন।
গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করার পর এটাই তার প্রথম বাংলাদেশ সফর।
প্যাটেল বলেন, ‘তিনি প্রতিটি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করতে এবং একটি অবাধ, উন্মুক্ত ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য মার্কিন সমর্থন প্রদর্শন করতে এই সফরে রয়েছেন।’
এক জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান আজ তার বাসভবনে ডোনাল্ড লু ও তার সফরসঙ্গীদের সম্মানে এক নৈশভোজের আয়োজন করবেন।
৩ দিনের সফরকালে লু পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা) খন্দকার মাসুদুল আলম হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক জানতে চান, ১৭ মাসের মধ্যে বাংলাদেশে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লু এই তৃতীয় সফরে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক না করার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ আছে কিনা। যদিও আগের দুটি সফরে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।
সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে এই অবস্থান পরিবর্তন করেছে?’
জবাবে প্যাটেল বলেন, তাদের সরকারি কর্মকর্তারা কাদের সঙ্গে দেখা করেন বা না করেন, তার মধ্যে অনেকগুলো বিষয় নির্ভর করে – সময়সূচি, দিনের সময়, অন্যান্য অনেক বিষয়।
তিনি আরও বলেন, ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লু দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ- বিশেষ করে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে সফর করছেন।’
সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, লু’র সফরে ভিসা নীতি ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বানের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
একজন সাংবাদিক বাংলাদেশ এসব বিষয় উত্থাপন করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়গুলো স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসতে পারে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক বজায় রয়েছে এবং এ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে তারা একসঙ্গে কাজ করবে।
তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন প্রশাসন থেকে যারাই বাংলাদেশ সফর করেন না কেন, সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা রয়েছে।’
৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের একদিন পর যুক্তরাষ্ট্র এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য এগিয়ে নিতে বাংলাদেশে মানবাধিকার ও নাগরিক সমাজকে সমর্থন এবং আমাদের জনগণের মধ্যে ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক এইলিন লুবাখার, ইউএসএআইডির এশিয়া ব্যুরোর সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন।
ওই সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন,‘দু’দিক থেকেই সদিচ্ছা আছে। আমরা একসঙ্গে আমাদের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় তৈরি করতে চাই।’
বাংলাদেশ বলছে, বাংলাদেশের সার্বিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বিবেচনায় বড় অংশীদাররা নতুন স্থিতিশীল সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমাদের স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও অন্যান্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সবাই আকৃষ্ট হয়েছে। তারা আরও বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তারা (বড় দেশগুলো) অবশ্যই একে অপরের সঙ্গে তুলনা করছে। ‘আমি বলব না যে এটি একটি প্রতিযোগিতা তবে আমি বলব যে তাদের সবারই অনেক আগ্রহ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন-পূর্ব প্রেক্ষাপট আর বর্তমান প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। একটি স্থিতিশীল সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে তার কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সব দেশই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কথা চিন্তা করছে।’।
তিনি বলেন, পারস্পরিক সম্পর্কের সব উপাদান যেমন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এমনকি নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে।