আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
সম্প্রতি বন্যায় কুড়িগ্রামের চিলমারীতে চর শাখাহাতী ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। পরে স্কুলটি অন্যত্র সরিয়ে স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে জায়গা নির্ধারণ করা হলেও, স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা প্রভাব ও ক্ষমতা দেখিয়ে অন্য একটি স্থানে স্কুলটি সরিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। ফলে দুটি পক্ষের মানা না মানা নিয়ে চার মাস ধরে স্কুলটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতী এলাকায় স্কুলটির অবস্থান। প্রতিষ্ঠানটিতে ১৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে; কিন্তু জায়গা নির্বাচন করা নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বে এখনো স্কুলে পাঠদান সমস্যা দেখা দিয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা অফিস বলছে, দ্রুত উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে সমাধান করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরের জুন মাসে ভয়াবহ নদীভাঙনের কারণে চর শাখাহাতী ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনটি টিনশেড ঘর পার্শ্ববর্তী শাখাহাতী আরডিআরএস গ্রামে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ওই ইউনিয়নের শাখাহাতী গ্রামের বাসিন্দারা আরডিআরএস গ্রামে স্কুল স্থাপনের জন্য জায়গা নির্বাচন ও ২ লাখ টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাট করেছেন। পরে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার প্রভাব খাটিয়ে স্কুল স্থাপনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন স্বজনরা।
স্থানীয়রা বলছেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গওছল হক, তার ভাই জহুরুল ইসলাম (ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা) এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান যোগসাজশে স্কুলটি তাদের পছন্দের জায়গায় করার পাঁয়তারা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন করে স্কুলের স্থান নির্ধারণ করতে গিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। ৩০ বছর থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আসছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি গয়ছল হক। তিনি এসএমসি কমিটিতে কখনো নিজে সভাপতি আবার কখনো স্ত্রীকে সভাপতি বানিয়ে স্কুলের নামে বরাদ্দকৃত অর্থসহ নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন।
নতুন নীতিমালায় সভাপতি হতে হলে লাগবে স্নাতক পাস। আইনের ধারা অনুযায়ী লেখাপড়া না জানা গয়ছল হক ধরা খেয়ে যান। তাই নিজে সভাপতি না হয়ে মামাতো ভাই মশিউর রহমানকে অবৈধভাবে সভাপতি বানান।
এ নিয়ে এলাকাবাসীর আপত্তি থাকলেও সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ডিও লেটার দেখিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমানকে সভাপতি পদে এবং নিজের মেয়ে শরিফা আক্তারকে এসএমসির সদস্য পদে সিলেকশন করেন এ আওয়ামী লীগ নেতা।
২০২০ সাল থেকে মশিউর রহমান, তার স্ত্রী ও তিন বছরের শিশু বাচ্চাসহ উলিপুরে বসবাস করছেন। সেখানে তিনি গুনাইগাছ কমিটির ক্লিনিকের সিএইচসিপি হিসেবে চাকরি করা অবস্থায় দুই বছর ছিলেন স্কুল কমিটির সভাপতি।
এ নিয়ে স্কুলটির সাবেক সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, আমি উলিপুরে চাকরি করি স্কুলের বিষয়ে কিছু জানি না। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ এই মসিউর রহমান হচ্ছেন নাটের গুরু। তিনি এলাকায় বলে বেড়াচ্ছেন আমি প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে ৪ লাখ টাকা খরচ করেছি। স্কুল আমার পছন্দের স্থানেই হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুজা মিয়া বলেন, টিও-এটিও স্যাররা এসেছিলেন। উনারা জায়গা নির্ধারণ করে গেছেন। আমরা সে অনুযায়ী জমিতে মাটি ফেলেছি প্রায় ২ লাখ টাকা দিয়ে। আমরা চাই শাখাহাতীতে যেন স্কুল হয়। তা না হলে অন্য জায়গায় হলে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে যেতে কষ্ট হবে। স্কুল নিয়ে চিলমারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গয়ছল হক, তার ভাই জহুরুল ইসলাম এবং মশিউর রহমান মিলে তাদের এলাকায় স্কুলটি নিয়ে যাওয়ার জন্য পাঁয়তারা করছেন। এতদিন স্কুলটির কমিটিতে থাকায় লেখাপড়ার মান ভালো করতে পারেনি, শুধু দুর্নীতি করেছে।
স্থানীয় এই আওয়ামী লীগ নেতা নিজের আত্মীয়স্বজনের কমিটিতে রেখে দপ্তরি কাম প্রহরী পদে বোনের ছেলে মিলন মিয়াকে দিয়েছেন নিয়োগ। এ ছাড়াও অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হয়ে যাওয়া প্রতিটি নির্বাচনে এ স্কুলটি ভোট সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করে ৬০ ভাগ ভোট কাস্ট দেখিয়েছেন!
এ বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান গয়ছল হক মণ্ডল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এখানে জড়িত নই। স্থানীয়রাই ভালো জানেন।
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি ইউএনওকে বারবার বলছি, তারা এসেছিলেন। কিন্তু কেন তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, আমার জানা নেই। এভাবে চলতে থাকলে বাচ্চাদের লেখাপড়া বিঘ্ন হবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. জাহিদুর রহমান বলেন, এলাকার মানুষ দুই স্থানে স্কুল চাওয়ায় আমরা খুব সমস্যায় পড়েছি। ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করা হবে। আমি স্থানীয়দের বলব, তারা উভয়পক্ষ বসে সমাধান করলে ভালো হয়। এভাবে স্কুল চললে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া বিঘ্ন ঘটতে পারে।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নঈম উদ্দীন জানান, সরেজমিন গিয়েছিলাম। নদীভাঙন এলাকা হওয়ায় জায়গা নির্ধারণের কাজ চলছে।
Board of Directors of ABC National News : Chief Editor and Advisor-Adv Monir Uddin, Ex.Editor and Advisor-Lion Eng.Ashraful Islam, Ex.Editor-Lion Dr.Mana and Lion Palash, Acting Editor-Tawhid Sarwar, News Editor-Aftab Parvez,News Sub Editor-Pojirul Islam and
Co-Editor Siam and Neon.
Dhaka Office : 67/4,5 Chaya Neer, Shanti Bagh Dhaka 1212.
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার