সংকারের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে সান্তাহার রেলওয়ে ওয়াহেদ বক্স!!
- আপডেট সময় : ১২:১১:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ অক্টোবর ২০২২ ৭১ বার পড়া হয়েছে
মিরু হাসান বাপ্পী, বগুড়া জেলা সংবাদদাতা
এক সময়ের দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার প্রাচীন শহর সান্তাহারের রেলওয়ে ওয়াহেদবক্স মিলনায়তন অযন্ত আর অবহেলায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌছেছে। হারিয়ে গেছে এর জৌলুস বন্ধ হয়ে গেছে সকল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড। এখন শুধু পরিত্যাক্ত জরাজীর্ণ ভবন ছাড়া আর কিছুই নেই এখানে।
সান্তাহার পৌর এলাকার ইয়ার্ড কলোনীতে বৃটিশ আমলে নির্মিত এই ওয়াহেদ বক্স মিলনায়তনকে এলাকার সবাই ‘রেলওয়ে ইন্সটিটিউট’ নামে চেনে। ৯০ দশক পর্যন্ত সান্তাহারের সকল সভা-সমাবেশ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এই ওয়াহেদ বক্স মিলনায়তনকে রাখতো জমজমাট। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলতো সকল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড। মিলনায়তনের চারদিকে আলোকশয্যা, বর্ণাঢ্য গেট, সাউন্ড বক্স আর মাইকের শব্দে পুরো শহর থাকতো মুখরিত। মিলনায়তনের ভিতরে চলতো স্থানীয় ও জাতীয় শিল্পীদের সঙ্গীত, নাটক-নাটিকা, কৌতুকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
শত শত নারী-পুরুষের কলকাকলীতে মুখরিত থাকতো এই মিলনায়তন। প্রতি বছর এই মিলানায়তনে হতো আন্তঃ জেলা নাট্য উৎসব। সারা দেশের একাধিক নাট্য দল অংশ নিতো প্রতিযোগীতায়। দেশ বরেন্য চিত্র পরিচালক আজিজুর রহমান, নাজমুল হুদা মিন্টু ও অভিনেতা কামরজ্জামান বাহাদুর ভাইয়ের দেশের বাড়ী সান্তহারে হওয়ায় তাদের পদ চারনায় এক সময় মুখরিত থাকতো ওয়াহেদ বক্স মিলানায়তন। এ ছাড়া সান্তাহারের নাটক পাগল মানুষ হিসাবে পরিচিত ছিল শহিদুল্লাহ, ওয়াদুদ, আলম খান, পূর্নিন্দ, বেবী, কিবরিয়া সহ আরো অনেক নাট্য শিল্পীদের নাটক দেখে মুগ্ধ হতো এলাকাবাসী। প্রতিষ্ঠানের বাহিরে সুপরিসর একটি খেলার মাঠও রয়েছে। সেখানে সব ধরণের খেলা চলতো সারা বছর ব্যাপী। মাঝে মধ্যে রাজনৈতিক জনসভা কিংবা ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিল হতো এই মাঠে। সবকিছু মিলে বৃটিশ আমল থেকে ৯০ দশক পর্যন্ত এই ইন্সটিটিউট ছিল উপজেলার প্রাণকেন্দ্র।
সান্তাহার রেলওয়ে ওয়াহেদ বক্স মিলনায়তনে দর্শক আসন সংখ্যা ছিল ৪শ’। এখন ওইসব আসন ও মঞ্চ সব কিছুই বিলিন হয়ে গেছে। ভবনটি কেউ দেখলে বিশ্বাস করবেনা এর অতীত ইতিহাস। অযত্ন আর অবহেলায় যেন রুগ্ন জীর্ণ এক পরিত্যাক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে। খেলার মাঠেও খেলাধুলা হয় না আর। নাট্য অভিনেতা আব্দুল মান্নান আক্ষেপ করে বলেন, নাটক করার জন্য আর মানুষ খুজে পাওয়া যায়না। এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ও নাটক পছন্দ করে না। নাটক নেই বলে সমাজের যুবক শ্রেনী অবক্ষয়ের দিকে পা বাড়াচ্ছে। এলাকার সকল মানুষ আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে এই মিলনায়তনকে। কিন্তু সান্তাহার রেলওয়ে ইন্সটিটিউট পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এই ভবনের আশে-পাশের এলাকা গো-চরণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। ওয়াহেদ বক্স মিলনায়তনকে সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য রেলওয়ে উর্দ্ধতন কর্তকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সচেতন মহল।