শিশু তাবাচ্ছুম হত্যা মামলায় চারজনের ফাঁসি!!
- আপডেট সময় : ০৯:৪৫:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর ২০২২ ২৫০ বার পড়া হয়েছে
মিরু হাসান বাপ্পী
বগুড়া জেলা সংবাদদাতা
বগুড়ায় ৭ বছরের শিশু তাবাচ্ছুমকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চারজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নং-২ এর বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর এ আদেশ দেন। রায়ে সাজাপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা ও তা অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়(গত ২৩ অক্টোবর ২০২২ইং)।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বগুড়ার ধুনট উপজেলার নশরতপুর গ্রামের মোজাম্মেলের ছেলে বাপ্পি আহম্মেদ (২৪), দলিল উদ্দিন তালুকদারের ছেলে কামাল পাশা (৩৭), ছানোয়ার হোসেনের ছেলে শামিম রেজা (২৪) এবং মৃত সাহেব আলীর ছেলে লাভলু শেখ (২৩)। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা সবাই আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ধুনটের নশরতপুর গ্রামের বেলাল হোসেন খোকন ও তার স্ত্রী মরিয়ম ডেইজি ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করতেন। তাদের মেয়ে মাহী উম্মে তাবাচ্ছুম দাদা আবদুস সবুরের বাড়িতে থেকে স্থানীয় পাঁচথুপি-নশরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ত। ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর গ্রামের জান্নাতুল ফেরদৌস কবরস্থান চত্বরে দুই দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করা হয়। শিশু তাবাচ্ছুম তার দাদা ও ফুফুর সঙ্গে প্রথম দিনের তাফসির শুনতে গিয়ে রাত ১০টার দিকে সে মিষ্টি কিনতে মঞ্চের পাশের দোকানে যায়। সেখানে খোকনের সাথে পারিবারিক বিরোধ থাকা কলেজছাত্র বাপ্পী আহমেদ তাফসিরে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করছিল।
বাপ্পী শিশুটিকে দেখতে পেয়ে প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করে। সে বাদাম কিনে দেয়ার প্রলোভনে তাবাচ্ছুমকে স্থানীয় হাজী কাজেম জুবেদা টেকনিক্যাল কলেজে নিয়ে যায়। সেখানে বাপ্পী তার তিন বন্ধু কামাল পাশা, শামীম রেজা ও লাবলু শেখ পালাক্রমে শিশুটিকে ধর্ষণ করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শিশু তাবাচ্ছুম নিস্তেজ হয়ে যায়। এ সময় বাপ্পী তাকে গলাটিপে হত্যা করে। এছাড়া তাকে কোনো প্রাণী কামড়ে হত্যা করেছে এমন প্রমাণ করতে কাটিং প্লাস দিয়ে হাতের একটি আঙুল কেটে দেয়। এরপর লাশটি কাঁধে তুলে মঞ্চের কাছে বাদশা মিয়ার বাঁশঝাঁড়ে ফেলে দেয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে দেয়। পরেরদিন ১৫ ডিসেম্বর নিহত তাবাচ্ছুমের বাবা খোকন অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
এঘটনায় পুলিশ বাপ্পীর সঙ্গে পারিবারিক বিরোধকে সামনে রেখে তদন্ত শুরু করে। সন্দেহভাজন বাপ্পী ও তার তিন বন্ধুকে পর্যবেক্ষণে রাখে পুলিশ। ২৫ ডিসেম্বর রাতে প্রথমে বাড়ি থেকে শামীম রেজাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তিতে নিজ নিজ বাড়ি থেকে বাপ্পী, রেজা ও লাবলুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে চারজনই শিশু তাবাচ্ছুমকে ধর্ষণ এবং হত্যার কথা স্বীকার করে। এরপর ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর দণ্ডিত চারজনকে আসামীকে করে ধুনট থানার তৎকালীন ইন্সপেক্টর(তদন্ত) জাহিদুল হক চার্জশীট জমা দেন। পরে সকল সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
আইনজীবী আশিকুর রহমান সুজন জানান, তাবাচ্ছুম হত্যা মামলায় আদালত যে রায় দিয়েছেন তাতে তারা সন্তুষ্ট।
আসামিপক্ষে এড. জাহাঙ্গীর হোসেন, এড. মন্তেজার রহমান মন্টু, এড. আব্দুর রশিদ ও এড. নজরুল ইসলাম বাবলু মামলা পরিচালনা করেন।