শিক্ষক যদি জালিয়াত চক্রের প্রধান হয় তবে আমাদের সমাজ কোথায়
- আপডেট সময় : ১১:৫৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২২ ৭৭ বার পড়া হয়েছে
কামরুল ইসলাম চট্টগ্রাম
দেশের সর্বনাশের মুল হোতা যদি শিক্ষক হয় চিন্তা করুন আমাদের সমাজ, দেশ আজ কোথায় গিয়ে, দাড়িয়ছে।
বার্মা থেকে পালিয়ে আশা রোহিঙ্গারা আজ সাবেক এক শিক্ষকের সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশি হয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে এক সাবেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
বিস্তারিত জানতে গিয়ে জানাযায় দেশীয় কিছু দালালের সহযোগিতায় এক লাখ থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় রোহিঙ্গারা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়ে হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশি নাগরিক।
বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অনেকে সংগ্রহ করছেন বিদেশ যাওয়ার পাসপোর্টও।
এমন অভিযোগে রোহিঙ্গা, এনআইডি করে দেওয়ার দালাল ও নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী কর্মচারীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আছেন প্রাইমারি স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক, আছেন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। গত মঙ্গলবার নগরীর হালিশহর হাউজিং এস্টেট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দুই রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তারের পরই এমন তথ্য জানতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মোহাম্মদ আলী হোসেন।
পরে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে দুই রোহিঙ্গাসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. কামাল হোসেন ওরফে মোহাম্মদ (৪৫), পারভীন আক্তার (২৫), মো. নুরুল আবছার (২৮), শামসুর রহমান প্রকাশ শামসু মাস্টার (৬০), মো. ইয়াছিন আরাফাত (২২), নির্বাচন কমিশনের চুক্তিবদ্ধ ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. নুর নবী প্রকাশ রাহাত (২৫), মো. মিজানুর রহমান (২৩), ফরহাদুল ইসলাম (২৮), ইমন দাশ (২০) ও মো. কামাল (৪২)। এদের মধ্যে কামাল হোসেন ও পারভীন আক্তার রোহিঙ্গা। কামাল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি বেসরকারি এনজিওতে কর্মরত ছিলেন। আর পারভীন আক্তার দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তার স্বামী বাংলাদেশি। শামসু মাস্টার কক্সবাজারের পোকখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে এনআইডি কার্ড জালিয়াতির দুইটি মামলা রয়েছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, নগরীর হালিশহর হাউজিং এস্টেট উচ্চ বিদ্যালয়ে এনআইডি করতে এসেছিলেন দুই রোহিঙ্গা। পরে তাদের গ্রেপ্তারের পর এনআইডি করে দেওয়া ইসির পাঁচ অস্থায়ী ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জনৈক আবছার ও শামসু মাস্টার নামে দুই দালালের সংশ্লিষ্টতার কথা জানান। এসময় ওই দুই দালালকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, শামসু মাস্টার কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের সংগ্রহ করে নুরুল আবছারকে সরবরাহ করেন। পরে নুরুল আবছার বিভিন্ন মাধ্যমে ওই রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন প্রস্তুত করে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এনআইডি কার্ড তৈরিতে চুক্তিবদ্ধ ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের পাঁচ অস্থায়ী কর্মচারীর মাধ্যমে কার্ড তৈরি করে। এই চক্রটি দীর্ঘদিন বিভিন্ন প্রকার জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের এনআইডিসহ বিভিন্ন প্রকার ডকুমেন্ট তৈরি করে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল।
জানা গেছে, আসামি শামসু মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক। রোহিঙ্গাদের এনআইডি কার্ড তৈরির কাজে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তিনি চাকরিচ্যুত হন। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার থানায় এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা হয়। তাকে এনআইডি জালিয়াতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে জামিনে বেরিয়ে একই জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনায় নতুন করে মামলা করা হয়েছে। পুরো চক্রে জড়িতদের শনাক্তে গ্রেপ্তার আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন সিএমপির উপ-কমিশনার (গোয়েন্দা-দক্ষিণ) মোহাম্মদ আলী হোসেন। তিনি বলেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং মোবাইল চেক করে বিভিন্ন মেসেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যে কাগজপত্রগুলো তাদের বেশি প্রয়োজন হয় তার মধ্যে জন্মনিবন্ধন একটি। তাদের এ জন্মনিবন্ধন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জনৈক ব্যক্তির মাধ্যমে সেখান থেকে করা হয়। তবে ঢাকা থেকে জন্মনিবন্ধন করা হলেও ঠিকানা দেওয়া হয় চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলের। এসবের সঙ্গে যুক্ত নির্বাচন কমিশন অফিসের আরও কয়েকজনের নম্বর এবং ব্যক্তিদের নাম আমরা জানতে পেরেছি। যারা সার্ভারের মাধ্যমে এনআইডির কাজটা শেষ করে।
তিনি বলেন, বিষয়টি আরও পরিষ্কার হওয়ার জন্য নির্বাচন অফিসে যাচাই-বাছাই করতে হবে। কারণ গ্রেপ্তার রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে যে ৬টি ফরম পেয়েছি সেই ফরমগুলো রোহিঙ্গা বা সাধারণ পাবলিক কারও কাছেই থাকার কথা নয়। ফরমগুলো নির্বাচন অফিসেই থাকার কথা। সবগুলো পূরণ করা ফরম। এসব তাদের কাছে কিভাবে এলো সেটাও যাচাই-বাছাই করা হবে। এটা সত্য যে, ওই রোহিঙ্গারা এসব ফরম গ্রেপ্তারকৃত আবছারের মাধ্যমে পেয়েছে। তবে নির্বাচন অফিসের যে কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আবছার পেয়েছে তাদের কিছু কিছু নাম পাওয়া যাচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া নির্বাচন অফিস তদন্ত করলে তারাও হয়তো জানতে পারবে; এ ফরম কিভাবে পাবলিক বা রোহিঙ্গাদের হাতে এসেছে। তবে ফরমের বিষয়ে আমরা প্রাথমিকভাবে যে তথ্য পেয়েছি তাতে জানতে পেরেছি সেগুলো চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে নয়। এটি অন্য কোনো অঞ্চল থেকে এসেছে। তদন্তের মাধ্যমে সেটিও বেরিয়ে আসবে।
চট্টগ্রামের আরও একজনের মাধ্যমে এ ফরম সাধারণ পাবলিকের হাতে আসে জানিয়ে মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, সাদ্দাম নামে একজন ব্যক্তির নাম জানা গেছে। যার বাড়ি হাটহাজারী উপজেলায়। তবে শুধু সাদ্দাম নয় আরও কয়েকজন আছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আর যদি নির্বাচন অফিসের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী জড়িত থাকে; তাহলে নির্বাচন অফিসকে বিষয়টি জানানো হবে। তারা সেটা তদন্ত করে বের করবে, কারা এসবের সঙ্গে জড়িত। রোহিঙ্গা ও দালালদের গ্রেপ্তারের পর ফরমের বিষয়ে পাহাড়তলী নির্বাচন অফিসের আঞ্চলিক কর্মকর্তাকেও জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। তবে এটি তাদের অফিসের নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। তাই তদন্তের পরই জানা যাবে ফরমটি কোথা থেকে এসেছে।