লেবার পার্টি কীভাবে পরিবর্তন আনবে বিধ্বস্ত কনজারভেটিভদের ভবিষ্যৎ কী?
- আপডেট সময় : ১১:১২:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪৮ বার পড়া হয়েছে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক নিউজ:
কনজারভেটিভদের নির্বাচনি পারফরম্যান্স সম্পর্কে সবচেয়ে ইতিবাচক দিকটি বলা যেতে পারে যে, তারা সম্পূর্ণ পরাজয় এড়াতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এটা ঋষি সুনাকের জন্য তেমন ভালো সংবাদ নয়। তারা পরাজয় বরণ করেছে এবং পরবর্তী সময়ে তাদের আসন পুনরুদ্ধার করার জন্য লড়াই করতে হবে। লিজ ট্রাস, জেকন রিস-মগ, পেনি মর্ডান্ট এবং গ্রান্ট শ্যাপসের মতো বেশ কয়েক জন জনপ্রিয় নেতা তাদের আসন হারিয়েছেন। তবে দুঃখের বিষয় হলো, তারা যে আসনগুলো হারিয়েছেন সেখানে, যেখানে কনজারভেটিভ পার্টির বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। এই আসনগুলো হারানোর কারণে সেগুলো পুনরুদ্ধার করা তাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে।
এর চেয়ে খারাপ সংবাদ হলো নাইজেল ফারাজ, দি অ্যান্ডারসন ও রিচার্ড টাইচসহ রিফর্ম পার্টির এমপিরাও নীতিপ্রণয়নকারী দলে শক্তিশালী অবস্থানে চলে যাবে। এই দলটা নিশ্চিত গোলমাল করবে, যা কনজারভেটিভদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করবে। এর ফলে তাদের কামব্যাক করাটা আরো বেশি কঠিন হয়ে পড়বে। সামনে কনজারভেটিভ দলের নেতা কে হবেন সেই প্রতিযোগিতায় যে প্রশ্নটি ঘুরেফিরে সামনে আসবে তা হলো নাইজেল ফারাজ ও তার দলের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? তাদেরকে দলের সঙ্গে রাখা হবে নাকি তাদের ছাড়াই এগিয়ে যাবে তারা? রিফর্ম দলের লেটাররা কনজারভেটিভ দলের বিপর্যয়মূলক পরাজয়ে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। কনজারভেটিভ দলের জন্য একমাত্র সুসংবাদ হলো লেবার পার্টির ভূমিধস বিজয়ের পরেও তাদের ভোটারের সংখ্যা ২০১৯ সালের নির্বাচনের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি। কনজারভেটিভদের ভোটার অন্যান্য দলের মধ্যে বিভক্ত হয়ে গেছে। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠতার আকার স্টারমারের মনে তেমন আশা জাগাতে পারবে না। তার পরও পরবর্তী নির্বাচনে আরো শক্তিশালীভাবে ফিরে আসার জন্য তাদেরকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে। প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে লেবার পার্টি চাপের মুখে পড়বে। টম বেলজার ৫ হাজার ১৭৩ দিন হয়ে গেছে যখন লেবার পার্টি সর্বশেষ ক্ষমতায় ছিল। এই দীর্ঘ সময়টাই বলে দেয়, এই বিজয় তাদের জন্য কতটা আনন্দের। তবে তাদেরকে উদ্যাপনের জন্য বেশি সময় ব্যয় না করে দ্রুত কাজে নেমে পড়তে হবে। লেবার পার্টির নেতৃবৃন্দ স্পষ্টতই তাদের নির্বাচনি পরিকল্পনা তৈরিতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে কী করতে হবে, সে বিষয়ে খুব বেশি কাজ যে হয়নি সেটা সবাই জানে। ১০০ দিনের মধ্যে তারা সিভিল সার্ভিসের ওপর নতুন আইন করবেন বলে জানিয়েছেন। কথা রাখার জন্য তাদেরকে খুব দ্রুতই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। চলতি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন থেকে শুরু করে ইউরোপীয় রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের শীর্ষ সম্মেলনেও তাদের অনেক সময় চলে যাবে। এক্ষেত্রে তাদের সব ধরনের চাপ কাটিয়ে উঠে সাফল্য অর্জনে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হবে। লেখক লেবারলিন্টের সম্পাদক
‘রিফর্ম’ দলের উত্থান দেবার পার্টির বিজয়ের ওপর একটি অন্ধকার ছায়া। আদিত্য চক্রবর্তী
আপনি যে দলকেই সমর্থন করুন না কেন, এবারের নির্বাচনের সবচেয়ে উদ্বেগজনক খবরটি হচ্ছেড় এখন থেকে কট্টর ডানপন্থিরা ব্রিটিশ সংসদে বসবে। ভোট গণনার ভিত্তিতে, এই মুহূর্তে যুক্তরাজ্যের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হলো রিফর্ম পার্টি। ব্রিটেনের প্রতি সাত জন ভোটারের এক জন এমন একটি দলকে সমর্থন করেন, যার প্রতিনিষিরা হিটলারকে ‘অসাধারণ ব্যক্তিত্ব’ এবং কালো মানুষদের ‘জংলি’ বলে অভিহিত করেছেন। রিফর্ম দলের নেতৃবৃন্দের ফ্যাসিস্ট সংগঠনের সঙ্গে যোগসূত্র ছিল। নাইজেল ফারাজকে জিততে সাহায্যকারী একজন কর্মীকে এর আগে ঋষি সুনাককে অকথ্য ভাষায় গালি দিতে এবং ইসলামকে ‘মৃত্যুর যম’ বলে অভিহিত করতে শোনা গেছে। এছাড়া তারা সেনাবাহিনীকে আহ্বান করেছিল, তারা যেন শরণার্থীদের গুলি করে মেরে ফেলে। এই লোকেরা এখন সংসদে বসে কট্টরপন্থি আইন পাশ করবে। রিফর্ম দলের নেতৃবৃন্দ এই দেশের লাখ লাখ জাতিগত সংখ্যালঘু মানুষের জন্য ও ব্রিটিশ গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। লেখক: দ্য গার্ডিয়ানের কলামিন্ট কনজারভেটিভদের রক্ষণশীল মূল্যবোধ ত্যাগ করা উচিত হয়নি। ক্রিস ডিডমোর
এই ঐতিহাসিক পরাজয়ের দায় শেষ পর্যন্ত কনজারভেটিভ পার্টির ঐতিহ্যবাহী ও বিশ্বস্ত রক্ষণশীল মূল্যবোধ ত্যাগ করার ওপর বর্তায়। অথচ এমন হওয়ার কথা ছিল না। যখন ঋষি সুনাক ব্যক্তিগতভাবে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে করণীয় কাজ বাদ দিয়ে নতুন করে তেল ও গ্যাসের ব্যবহার চালু করেছিলেন, এমনকি নতুন কয়লা খনি চালু করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন, তখন আমি বলেছিলাম যে, এটি তার প্রধানমন্ত্রিত্বের সবচেয়ে বড় ভুল হবে। এখন দেখা যাচ্ছে, এটি ছিল তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় স্কুল। তার এমন সিদ্ধান্তের কারণে অনেক ভোটার মনে করেছেন, কনজারভেটিভরা
পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে চিন্তা করে না। যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভোটার তাদের মত পরিবর্তন করেছেন। রাজনৈতিক আদর্শ পাশে রেখে বলতে পারি, সংসদে নতুন যারা এসেছেন তারা অন্তত আমাদের পরিবেশের জন্য যে পরিবর্তন দরকার তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। লেখক কনজারভেটিভ দলের সাবেক জ্বালানি মন্ত্রী কনজারভেটিভদের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে ফ্রান্সেস রায়ান
লম্বা সময় ধরে চলা লেবার পার্টির জনমত জরিপে আগে থেকেই কেয়ার স্টারমারের বিজয়ের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু কনজারভেটিভ পার্টি এত বড় ব্যবধানে হারবে, সেটা হয়তো কেউ অনুমান করতে পারেনি। যেভাবেই দেখা হোক না কেন, এই নির্বাচনে কনজারভেটিভ দল শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের সঙ্গে পেনি মর্ডান্ট, জেকব রিস-মণ ও গ্রান্ট শ্যাপসসহ একাধিক মন্ত্রিপরিষদ সদস্যকে জনগণ ভোটের মাধ্যমে উৎখাত করেছে। এই নির্বাচনে জনগণ বলতে চেয়েছে, তারা লেবার
শার্টিকে স্বাগত জানানোর চেয়ে কনজারভেটিভদের বিদায় জানানোর জন্য বেশি উৎসাহী। ব্রেক্সিট থেকে পার্টিগেট পর্যন্ত জনগণ অভূতপূর্ব বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতির যুগ পার করেছে। যদি রাজনীতিতে এক সপ্তাহ অনেক লম্বা সময় হয়, তবে ১৪ বছর ধরে কনজারভেটিভদের অপশাসন কার্যত একটি আজীবন শান্তি ছিল। অধিকাংশ লোক মনে করেন, লেবার পার্টি খুব শিণিখরই ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবে না। সামনের দিনগুলোতে কেয়ার স্টারমারের দলকে এই ধারণা ভুল প্রমাণ করতে হবে।
লেখক: দ্য গার্ডিয়ানের কলামিস্ট (দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ)