মজিদা ডিগ্রী কলেজের এডহক কমিটি নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাজলামো
- আপডেট সময় : ০৯:৫৫:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪ ৪৩ বার পড়া হয়েছে
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
শুক্রবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং ০৯:০১ পিএম.
কুড়িগ্রাম শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ নিয়ে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। এবার শুরু হয়েছে কলেজের এডহক কমিটি নিয়ে নানা নাটকীয়তা। আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত কলেজটির সাবেক এক অধ্যক্ষকে প্রতিষ্ঠানটির এডহক কমিটির সভাপতি ঘোষণা, বাতিল ও পুনর্বহাল নিয়ে গত এক মাসে তিন বার পত্র চালাচালি করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমন ঘটনাকে ‘ফাজলামী’ বলছেন কলেজটির শিক্ষকরা।
কলেজ সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে গভর্নিং বডির সভাপতি নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ৯ সেপ্টেম্বর সাবেক অধ্যক্ষ খাজা শরীফ উদ্দিন আলী আহমেদ (রিন্টু) কে সভাপতি এবং বিএনপি নেতা এসএম আশরাফুল হক রুবেলকে বিদ্যোৎসাহী সদস্য করে এডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সাবেক অধ্যক্ষ খাজা শরীফ উদ্দিন আলী আহমেদ (রিন্টু) কে নিয়ে শুরু হয় নানা বিতর্ক।
সাবেক অধ্যক্ষ রিন্টু ‘আওয়ামীপন্থি’ এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত কুড়িগ্রাম-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. হামিদুল হক খন্দকারের নিকটাত্মীয়। গত জানুয়ারির নির্বাচনের পর তিনি সাবেক এমপি সহ টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কবর জেয়ারত করতেও গিয়েছিলেন। তাকে সভাপতি করায় কলেজের শিক্ষক ও স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দের মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়। বিতর্কিত সাবেক অধ্যক্ষকে এডহক কমিটির সভাপতির পদ থেকে বাদ দেওয়ার দাবি ওঠে। এর মধ্যে গত ১ অক্টোবর এডহক কমিটি সভাপতি ও বিদ্যোৎসাহী সদস্যের নাম পরিবর্তন করে পত্র জারি করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চিলমারী সরকারি কলেজের সাবেক সহকারী অধ্যাপক ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাসিবুর রহমানকে সভাপতি এবং বিএনপিপন্থি অ্যাডভোকেট মোঃ রুহুল আমিনকে বিদ্যোৎসাহী সদস্য করে নতুন পত্র জারি করা হয়। খাজা শরীফ উদ্দিন আলী আহমেদ (রিন্টু) কে বাদ দেওয়ায় শিক্ষকদের মনে স্বস্তি ফিরলেও বিএনপি নেতা এসএম আশরাফুল হক রুবেল বাদ পড়ায় স্থানীয় বিএনপির একটি অংশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় মজিদা আর্দশ ডিগ্রি কলেজ। শুরু হয় নানা গুঞ্জন। গুঞ্জন সত্যি করে ৩ অক্টোবর আবারও এডহক কমিটির সভাপতি ও বিদ্যোৎসাহী সদস্য পরিবর্তন করে পত্র দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ভাইস চ্যান্সেলরের (ভিসি) অনুমোদনক্রমে কলেজ পরিদর্শক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার সাক্ষরিত পত্রে জানানো হয়, ‘১ অক্টোবর জারিকৃত পত্রটি বাতিল করা হলো।’ একই সাথে ৯ সেপ্টেম্বর জারিকৃত পত্রের সূত্র উল্লেখ করে খাজা শরীফ উদ্দিন আলী আহমেদ (রিন্টু) কে সভাপতি এবং বিএনপি নেতা এসএম আশরাফুল হক রুবেলকে বিদ্যোৎসাহী সদস্য করা সংক্রান্ত এডহক কমিটি বহাল রাখা হয়।
১২ দিনের ব্যবধানে কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি পরিবর্তন: এডহক কমিটি নিয়ে এমন বাদ-বহাল ‘খেলায়’ বিব্রত কলেজটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। তারা বলছেন, ‘ কমিটি নিয়ে এমন ঘটনা প্রমাণ করে কলেজের শিক্ষার মান উন্নয়ন নয়, ভিন্ন কোনও উদ্দেশ্যে এমন নাটক শুরু হয়েছে। এতে করে কলেজের সাথে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে।’ পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছা প্রকাশ করে কলেজটির সাবেক এক শিক্ষক প্রতিনিধি বলেন, ‘ আমরা বিব্রত। ফাজলামো শুরু হয়েছে। শিক্ষকরা পাঠদান করবেন নাকি কমিটি নিয়ে খেলা দেখবেন!’ ওই শিক্ষক বলেন, এটা ঠিক সাবেক অধ্যক্ষ খাজা শরীফ উদ্দিন আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ। তার দায়িত্বকালীন সময়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগ নিয়ে বাণিজ্য ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি ভুয়া সনদ দিয়ে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম টুকুকে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি করেছিলেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ আমলে নানা অনৈতিক সুবিধা নেওয়ায় তাকে নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।’ এই শিক্ষক নেতা আরও বলেন, ‘ জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ এবং গত সংসদ নির্বাচনের পর এই আসনের সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে খাজা শরীফ উদ্দিন আলী আহমেদ নানা সুবিধা নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কলেজ তহবিলের অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগও রয়েছে।’
সভাপতি পদ পাওয়ার পরও বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হাসিবুর রহমান বলেন, ‘ আওয়ামী লীগের দোসর ও দালাল বলে চিহ্নিত একজন ব্যক্তিকে জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি করায় অনেকের মতো আমিও আশ্চর্য হয়েছি। তার বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারির সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকার পরও তাকে কীভাবে ওই কলেজের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হলো সেটা বোধগম্য নয়।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক অধ্যক্ষ ও নব গঠিত এডহক কমিটির সভাপতি খাজা শরীফ উদ্দিন আলী আহমেদ বলেন, ‘ অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ মিথ্যা। আমি অধ্যক্ষ থাকাকালীন সরকারি নির্দেশ পালন করেছি।কারও দোসর ছিলাম না।’ কলেজের অধ্যক্ষ আবেদ আলী বলেন, ‘ আমি বিষয়টি ভালো চোখে দেখছি না। এডহক কমিটি নিয়ে যে চিঠিগুলো জারি হয়েছে তাতে আমার মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। সাবেক অধ্যক্ষকের বিরুদ্ধে দায়িত্বকালীন সময়ে অর্থকেলেঙ্কারি সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আমিও জেনেছি।’ কমিটি নিয়ে এমন ‘ফাজলামো’ বিষয়ে জানতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এএসএম আমানুল্লাহকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা দিয়ে কথা বলতে চাইলেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।