আনোয়ার সাঈদ তিতু,
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলায় পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন বিটরুট চাষ করে সফলতা পেয়েছেন এক চাষি। তার এ সাফল্য দেখে স্থানীয় অনেক কৃষক বিটরুট চাষে আগ্রহী হয়েছেন। ফলে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে।
উপজেলার ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের পণ্ডিতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে সাইদুর রহমান সজীব। পেশায় একজন সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা। উপজেলায় প্রথমবারের মতো ২৫ শতাংশ জমিতে বিটরুট চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।
তবে তার সফলতার গল্পের শুরুটা বেদনার ও আক্ষেপের। তিনি জানান, বাবা- মায়ের মৃত্যুর পরে তিন বোন ও তিন ভাইয়ের সংসারে সুখ-স্বাচ্ছন্দের কমতি ছিল না। তবে এই সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি তার। বড় বোনের শরীরে বাসা বাঁধে মরণব্যাধি ক্যান্সার। বোনের চিকিৎসার জন্য পাড়ি জমান ভারতের মুম্বাই শহরে। নামকরা চিকিৎসকের তত্বাবধানে শুরু করেন বোনের চিকিৎসা। সেখানে ক্যান্সারের ঔষধের পাশাপাশি চিকিৎসক রোগীকে পথ্য হিসেবে বিটরুট খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দেশে ফিরেন।
কিন্তু দেশে ফিরে বোনের পথ্য যোগাতে হিমশিম খেতে হয় সজীবকে। উপজেলা, জেলা সহ বিভাগীয় শহরে হন্যে হয়ে খুঁজেও চাহিদা মতো পুষ্টি ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন বিটরুট জোগাড় করতে ব্যর্থ হন তিনি। এদিকে দিনে দিনে সজিবের বোনের শারীরিক অবস্থারও অবনতি ঘটতে থাকে। কিছুদিন পরে মরণব্যাধি ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধে হার মানেন সজিবের বোন। পাড়ি জামান না ফেরার দেশে।
সেই থেকে সজীবের মনে বিটরুট চাষাবাদের প্রবল জেদ চেপে বসে। তার মতো আর কোন ভাইকে কে যেন বোনের জন্য পথ্য জোগাতে হিমশিম খেতে নাহয় সেজন্য বিটরুট চাষের সিদ্ধান্ত নেন। খুঁজতে শুরু করেন বিটরুটের বীজ। একটা সময় নিকট আত্মীয়র সহযোগিতায় ভারতের শিলিগুড়ি থেকে জোগাড় করতে সক্ষম হন কাঙ্খিত বিটরুটের বীজ। নিজের ২৫ শতাংশ জমিতে হাল চাষ করে বীজ বপন করেন। বপনের কয়েকদিন পর জমিতে বীজ থেকে চারা গজায়। চারা গজালেও ক্ষেতের পরিচর্যায় বিপাকে পড়েন তিনি। কেননা বিটরুট চাষের কোন অভিজ্ঞতা নেই তার। পরে ইউটিউব দেখে দেখে ক্ষেতের পরিচর্যা করতে থাকেন। পাশাপাশি ক্ষেতের পরিচর্যায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে পাশে দাঁড়ায় উপজেলা কৃষি বিভাগ। অবশেষে দুর হয়ে যায় সব শঙ্কা। নিবিড় পরিচর্যায় ক্ষেতে বেড়ে ওঠে বিটরুট।
সাইদুর রহমান সজীব বলেন, ‘২৫ শতক জমিতে বিটরুট চাষ করেছি। আমার ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জমি থেকে ২০০ কেজি বিটরুট তুলে বিক্রি করেছি। জমিতে এখনো প্রায় ১ হাজার কেজি বিটরুট আছে। গড়ে প্রতিটি বিটরুটের ওজন ৩০০থেকে ৪০০ গ্রাম। প্রতিকেজি ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা দামে বিক্রি করছি। আশা করছি ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার মুনাফা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ' পুষ্ঠিকর ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন বিটরুট চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক। এর চাষ পদ্ধতিও খুব কঠিন নয়। এখানকার মাটি বিটরুট চাষের উপযোগী। যার ফলে আমি সফলতা পেয়েছি। আমি চাই এলাকায় এই লাভজনক সবজি চাষ বিস্তার লাভ করুক। আমি সরকারি চাকরি করি তারপরও আগ্রহী কৃষকরা যদি আমার কাছে পরামর্শ চায় আমি সাধ্যমতো তাদের সহযোগীতা করবো। পাশাপাশি এ সুপার ফুড সবজির চাষ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা কামনা করছি।'
বিটরুট চাষের সাফল্য দেখে উৎসাহী একই গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বার, আহাম্মদ আলী, গোলাম রব্বানী, ইসমাইল হোসেন ও একাব্বর আলী বলেন, 'আমাদের এলাকায় প্রথমবার বিটরুট চাষ করে সজীব সবাইকে তাক লাগিয়েছে। তার ক্ষেতে ভালো ফলন হয়েছে। এই সবজির প্রচুর চাহিদা। ক্ষেতের সবজি পাইকাররা এসে ক্ষেত থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছে। দামও মোটামুটি ভালো। এই ফসল আবাদ করে লোকসানের সম্ভাবনা নাই। কৃষি অফিস থেকে বীজ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ পেলে আমরাও আগামীতে বিটরুট চাষ করবো।'
উলিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, উলিপুরে সাইদুর রহমান সজীব বিটরুট চাষ করে সফল হওয়ায় তাকে অভিনন্দন। তার মাধ্যমে এ অঞ্চলের কৃষিতে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলেছে। নতুন নতুন ফসলের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা ধারাবাহিক ভাবে কাজ করছি। আগামীতে বিটরুট চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
Board of Directors of ABC National News : Chief Editor and Advisor-Adv Monir Uddin, Ex.Editor and Advisor-Lion Eng.Ashraful Islam, Ex.Editor-Lion Dr.Mana and Lion Palash, Acting Editor-Tawhid Sarwar, News Editor-Aftab Parvez,News Sub Editor-Pojirul Islam and
Co-Editor Siam and Neon.
Dhaka Office : 67/4,5 Chaya Neer, Shanti Bagh Dhaka 1212.