বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে কুড়িগ্রামর ফুলবাড়ীর সাহসী ৩ কন্যা
- আপডেট সময় : ১০:২১:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭ বার পড়া হয়েছে
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
‘বাল্যবিয়ে প্রবণ এলাকা’ খ্যাত কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় বাল্যবিয়েকে ‘না’ বলে এ ব্যাধিকে লালকার্ড দেখিয়েছে তিন সাহসী কন্যা। সেই সঙ্গে তারা বাল্যবিয়ের প্রবণতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মনোবল দৃঢ় রেখে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রত্যেকে আদর্শ শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
সাহসী এ তিন কন্যা হলেন- উপজেলা সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা বালাটারী গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে সানজিদা আক্তার সাথী, একই গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে নিশরাত জাহান রিমু ও কুটিচন্দ্রখানা সেনপাড়া গ্রামের সুবাস চন্দ্র সেনের মেয়ে সুবর্ণা রানী সেন।
তারা তিনজনই এখন এলাকার বৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজে সুনামের সঙ্গে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে সানজিদা আক্তার সাথী এইচএসসি প্রথমবর্ষে, নিশরাত জাহান রিমু এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে ও সুবর্ণা রানী সেন ডিগ্রি প্রথমবর্ষে অধ্যায়ন করছেন। জানা গেছে, এ তিন সাহসী কন্যা বিশেষ করে যখন ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী তখনই পরিবার তাদের বাল্যবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। সে সময় তাদের পাশে দাঁড়ান মহিদেব যুবসমাজ কল্যাণ সমিতি (এমজেএসকেএস) এর ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর আফরোজা হ্যাপী।
তিনি বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে তিন কিশোরী ও তাদের পরিবারকে সচেতন করেন। এর পর তারা বাল্যবিয়ে থেকে নিজেদের রক্ষা পাওয়ার সুযোগ পায়।
সানজিদা আক্তার সাথী জানান, এমজেএসকেএস’র সহযোগিতায় আমি বাল্যবিয়ে ঠেকাতে পেরেছি। এখন কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি এখন একজন আদর্শ শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।’
নিশরাত জাহান রিমু জানান, ‘আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা আমাকে বিয়ে দেওয়ার জোড় চেষ্টা চালান। মা লাকী বেগম ১৫ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে বিয়ে হওয়ায় বাল্যবিয়ের কুফলের শিকার হন। এ কারণে মা আমার বাল্যবিয়ের বিষয়ে প্রতিবাদ করেন।’
রিমু আরও জানান, পরবর্তীতে আমাকে নানাবাড়ি পাঠিয়ে দিলে আমি সেখান থেকে লেখাপড়া শুরু করি এবং বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা পাই। এখন আমি এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। আমি স্বপ্ন দেখছি একজনআদর্শ শিক্ষক হওয়ার। পাশাপাশি আমি যুব সমাজকল্যাণ সমিতির যুব সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সামাজিক কাজ করছি।’
সুবর্ণা রানী সেন জানান, ‘আমি ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন আমার পরিবার বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। আমি এমজেএসকেএসের সহযোগিতায় বাল্যবিয়ের কুফল জানতে পেরে নিজের বিয়ে আটকাই। এখন আমি আমার আরেক বোনসহ এলাকায় বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করছি। আমার স্বপ্ন আমি একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই।’
উলেস্নখ্য, বাল্যবিয়ে একটি সামাজি ব্যাধি। এই ব্যাধিপ্রবণ দেশ হিসেবে এশিয়া মহাদেশের শীর্ষে বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের জেলা কুড়িগ্রাম বাল্যবিয়ে প্রবণতায় প্রথম স্থানে রয়েছে বলে এক জরিপে প্রকাশ পেয়েছে। এ জেলার ৯টি উপজেলায় বাল্যবিয়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে। তবে কিছু এনজিও কুড়িগ্রামে বাল্য বিয়ের প্রবণতা বন্ধের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে এমজেএসকেএস অন্যতম।
এ এনজিও’র চাইল্ড নট ব্রাইড (সিএনবি) প্রকল্পের মাধ্যমে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় বাল্যবিয়ে ও জোরপূর্বক বিয়ের হার কমানোর জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে।