ঢাকা ০৩:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবিসি ন্যাশনাল নিউজ২৪ ইপেপার

ব্রেকিং নিউজঃ
গীবত বা পরনিন্দা মহাপাপ কোরআন ও হাদীসের আলোকে: হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী। ঠাকুরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মশালা । লালমনিরহাটে সাংবাদিকের উপর হামলাকারী মাইদুল গ্রেফতার চাঁদাবাজির মামলায় নিষিদ্ধ সংগঠনের ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার ঠাকুরগাঁওয়ে পীরগঞ্জে স্ত্রীর নির্যাতন মামলায় উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার বরখাস্ত ! কাজী আখতার উল আলম ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান ১০ বছরের জন্য এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে ইজতেমার উদ্দেশে যাওয়ার পথে কুড়িগ্রাম ব্রহ্মপুত্রে নৌ-ডাকাতি ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের বাসায় দুর্ধষ চুরি ! ঠাকুরগাঁওয়ে রানীশংকৈলের খুনিয়াদীঘি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের উপর জুতা পরে হিরো আলমের টিকটক, ভিডিও সমালোচনার ঝড় !

ফিলিস্তিনকে ভালোবাসা, তাদের পাশে থাকা ঈমানের দাবী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:২৫:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ অক্টোবর ২০২৩ ১৪৯ বার পড়া হয়েছে

 

মুসলিমদের সব দল, উপদল, মাজহাব— এ ব্যাপারে একমত যে, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস, মসজিদে আকসা এবং সমগ্র ফিলিস্তিনের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য অনেক উচ্চ।

এর সংরক্ষণ, পবিত্রতা রক্ষা করা শুধু ফিলিস্তিনিদের নয়; বরং সব মুসলিমের ওপর ওয়াজিব। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে ফিলিস্তিনের অসংখ্য ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।

এক. ইসরা ও মিরাজের ভূমি

আল্লাহ বলেন, পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তার বান্দাকে রাত্রে ভ্রমণ করিয়েছিলেন আল-মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত-১)

জেরুজালেম হলো ইসরা বা রাসুলুল্লাহর (সা.) রাত্রিকালীন ভ্রমণের সর্বশেষ জমিন। এখানে তিনি সকল নবীর নামাজের ইমামতি করেন। তার পর তিনি এখান থেকে ঊর্ধ্ব আকাশে ভ্রমণ করেন।

এর দ্বারা আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, বিশ্ব ধর্মীয় নেতৃত্ব ইহুদীদের কাছ থেকে নতুন রাসুল, নতুন কিতাব ও নতুন উম্মতের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এখানে যদি ফিলিস্তিনিদের গুরুত্ব না থাকত, তা হলে আল্লাহ তার প্রিয় নবীকে মক্কা থেকেই সরাসরি ঊর্ধ্ব আকাশে ভ্রমণ করাতেন।

দুই. প্রথম কিবলা

মসজিদুল আকসা, ফিলিস্তিন হলো মুসলিমদের প্রথম কিবলা। যার দিকে মুখ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবিরা ১০ বছর নামাজ আদায় করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি যেখান থেকে বাহির হওনা কেন মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাকো না কেন ওর দিকে মুখ ফিরাবে।’( সুরা বাকারা, আয়াত-১৫০)

তিন. নবুয়ত ও বরকতময় ভূখণ্ড

আল-কোরআনের ৫ স্থানে মহান আল্লাহ ফিলিস্তিনকে বরকতময়, পুণ্যময় ভূখণ্ড বলেছেন।

১. সুরা বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতে। ‘যার আশপাশে আমি বরকত নাজিল করেছি।’

২. সাইয়িদুনা ইবরাহিম (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনার সময়- ‘আর আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সেই ভূখণ্ডে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্য।’( সুরা আম্বিয়া, আয়াত-৭১)

৩. মুসা (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনায়, যখন ফিরাউনের কবল থেকে মুসা (আ.) ও বান ইসরাইলকে উদ্ধার করে আনা হয় এবং ফেরাউন ও তার সৈন্যদলকে পানিতে ডুবিয়ে মারা হয়। আল্লাহ বলেন, ‘যে সম্প্রদায়কে দুর্বল মনে করা হতো, তাদের আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি; এবং বনি ইসরাইল সমন্ধে আপনার প্রতিপালকের শুভ বাণী সত্যে পরিণত হলো, যেহেতু তারা ধৈর্যধারণ করেছিল। (সুরা আ’রাফ: ১৩৭)

৪. হজরত সুলায়মান (আ.)-এর ঘটনায়। মহান আল্লাহ তাকে রাজ্য দান করেছিলেন এবং সব কিছুকে তার অধীনস্থ করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর সুলায়মানের বশীভূত করে দিয়েছিলাম উদ্দাম বায়ুকে; সে তার আদেশক্রমে প্রবাহিত হতো সেই ভূখণ্ডের দিকে যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি; প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কে আমিই সম্যক অবগত।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত-৮১)

৫. সাবা-এর ঘটনায় আল্লাহ তাদের কীভাবে সুখ-শান্তিতে রেখেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘ওদের ও যেসব জনপদের প্রতি আমি অনুগ্রহ করেছিলাম সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে দৃশ্যমান বহু জনপদ স্থাপন করেছিলাম এবং ওইসব জনপদে ভ্রমণের যথাযথ ব্যবস্থা করেছিলাম এবং ওদেরকে বলেছিলাম— ‘তোমরা এসব জনপদে নিরাপদে ভ্রমণ কর দিনে ও রাতে।’ ( সুরা সাবা: আয়াত-১৮)

আল্লামা মাহমুদ আলুসী তাফসিরে রুহুল মাআনীতে উল্লেখ করেছেন, এই জনপদ বলতে শামকে ঝানো হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস বলেন, এ জনপদ হলো,বায়তুল মুকাদ্দাস। (রুহুল মা’আনী, ২২/১২৯)

প্রাচীন শামদেশ (Levant) হলো— বর্তমান সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন ও ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন।

চার. তৃতীয় সম্মানিত শহর

হাদিসের আলোকে প্রমাণিত যে তিনটি শহর সম্মানিত— মক্কা, মদিনা ও ফিলিস্তিন বা বায়তুল মুকাদ্দাস।

সহিহ বুখারিও মুসলিমে হজরত আবু সাইদ খুদুরি (রা.) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো (জায়গা ইবাদাতের) উদ্দেশ্যে ভ্রমণে বের হওয়া যাবে না- মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আকসা এবং আমার এই মসজিদ। (হাদিস, ৭০৭)

অন্য হাদিসে এসেছে, মসজিদুল আকসায় ১ রাকাত নামাজ আদায় অন্যান্য মসজিদের তুলনায় ৫০০ গুণ, মসজিদুল হারাম এবং মসজিদুন নববী ব্যতীত। (বুখারি, মুসলিম)

এসব কারণে ফিলিস্তিনকে ভালোবাসা, তাদের পাশে থাকা ঈমানের দাবী। আল্লাহ পাক যেন আমাদেরকে উপরোক্ত আলোচনার প্রতি গুরুত্ব ও আমল করার তাওফিক দান করেন আমীন।

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী ছাহেব।

শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ফিলিস্তিনকে ভালোবাসা, তাদের পাশে থাকা ঈমানের দাবী

আপডেট সময় : ০৫:২৫:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ অক্টোবর ২০২৩

 

মুসলিমদের সব দল, উপদল, মাজহাব— এ ব্যাপারে একমত যে, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস, মসজিদে আকসা এবং সমগ্র ফিলিস্তিনের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য অনেক উচ্চ।

এর সংরক্ষণ, পবিত্রতা রক্ষা করা শুধু ফিলিস্তিনিদের নয়; বরং সব মুসলিমের ওপর ওয়াজিব। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে ফিলিস্তিনের অসংখ্য ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।

এক. ইসরা ও মিরাজের ভূমি

আল্লাহ বলেন, পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তার বান্দাকে রাত্রে ভ্রমণ করিয়েছিলেন আল-মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত-১)

জেরুজালেম হলো ইসরা বা রাসুলুল্লাহর (সা.) রাত্রিকালীন ভ্রমণের সর্বশেষ জমিন। এখানে তিনি সকল নবীর নামাজের ইমামতি করেন। তার পর তিনি এখান থেকে ঊর্ধ্ব আকাশে ভ্রমণ করেন।

এর দ্বারা আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, বিশ্ব ধর্মীয় নেতৃত্ব ইহুদীদের কাছ থেকে নতুন রাসুল, নতুন কিতাব ও নতুন উম্মতের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এখানে যদি ফিলিস্তিনিদের গুরুত্ব না থাকত, তা হলে আল্লাহ তার প্রিয় নবীকে মক্কা থেকেই সরাসরি ঊর্ধ্ব আকাশে ভ্রমণ করাতেন।

দুই. প্রথম কিবলা

মসজিদুল আকসা, ফিলিস্তিন হলো মুসলিমদের প্রথম কিবলা। যার দিকে মুখ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবিরা ১০ বছর নামাজ আদায় করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি যেখান থেকে বাহির হওনা কেন মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাকো না কেন ওর দিকে মুখ ফিরাবে।’( সুরা বাকারা, আয়াত-১৫০)

তিন. নবুয়ত ও বরকতময় ভূখণ্ড

আল-কোরআনের ৫ স্থানে মহান আল্লাহ ফিলিস্তিনকে বরকতময়, পুণ্যময় ভূখণ্ড বলেছেন।

১. সুরা বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতে। ‘যার আশপাশে আমি বরকত নাজিল করেছি।’

২. সাইয়িদুনা ইবরাহিম (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনার সময়- ‘আর আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সেই ভূখণ্ডে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্য।’( সুরা আম্বিয়া, আয়াত-৭১)

৩. মুসা (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনায়, যখন ফিরাউনের কবল থেকে মুসা (আ.) ও বান ইসরাইলকে উদ্ধার করে আনা হয় এবং ফেরাউন ও তার সৈন্যদলকে পানিতে ডুবিয়ে মারা হয়। আল্লাহ বলেন, ‘যে সম্প্রদায়কে দুর্বল মনে করা হতো, তাদের আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি; এবং বনি ইসরাইল সমন্ধে আপনার প্রতিপালকের শুভ বাণী সত্যে পরিণত হলো, যেহেতু তারা ধৈর্যধারণ করেছিল। (সুরা আ’রাফ: ১৩৭)

৪. হজরত সুলায়মান (আ.)-এর ঘটনায়। মহান আল্লাহ তাকে রাজ্য দান করেছিলেন এবং সব কিছুকে তার অধীনস্থ করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর সুলায়মানের বশীভূত করে দিয়েছিলাম উদ্দাম বায়ুকে; সে তার আদেশক্রমে প্রবাহিত হতো সেই ভূখণ্ডের দিকে যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি; প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কে আমিই সম্যক অবগত।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত-৮১)

৫. সাবা-এর ঘটনায় আল্লাহ তাদের কীভাবে সুখ-শান্তিতে রেখেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘ওদের ও যেসব জনপদের প্রতি আমি অনুগ্রহ করেছিলাম সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে দৃশ্যমান বহু জনপদ স্থাপন করেছিলাম এবং ওইসব জনপদে ভ্রমণের যথাযথ ব্যবস্থা করেছিলাম এবং ওদেরকে বলেছিলাম— ‘তোমরা এসব জনপদে নিরাপদে ভ্রমণ কর দিনে ও রাতে।’ ( সুরা সাবা: আয়াত-১৮)

আল্লামা মাহমুদ আলুসী তাফসিরে রুহুল মাআনীতে উল্লেখ করেছেন, এই জনপদ বলতে শামকে ঝানো হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস বলেন, এ জনপদ হলো,বায়তুল মুকাদ্দাস। (রুহুল মা’আনী, ২২/১২৯)

প্রাচীন শামদেশ (Levant) হলো— বর্তমান সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন ও ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন।

চার. তৃতীয় সম্মানিত শহর

হাদিসের আলোকে প্রমাণিত যে তিনটি শহর সম্মানিত— মক্কা, মদিনা ও ফিলিস্তিন বা বায়তুল মুকাদ্দাস।

সহিহ বুখারিও মুসলিমে হজরত আবু সাইদ খুদুরি (রা.) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো (জায়গা ইবাদাতের) উদ্দেশ্যে ভ্রমণে বের হওয়া যাবে না- মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আকসা এবং আমার এই মসজিদ। (হাদিস, ৭০৭)

অন্য হাদিসে এসেছে, মসজিদুল আকসায় ১ রাকাত নামাজ আদায় অন্যান্য মসজিদের তুলনায় ৫০০ গুণ, মসজিদুল হারাম এবং মসজিদুন নববী ব্যতীত। (বুখারি, মুসলিম)

এসব কারণে ফিলিস্তিনকে ভালোবাসা, তাদের পাশে থাকা ঈমানের দাবী। আল্লাহ পাক যেন আমাদেরকে উপরোক্ত আলোচনার প্রতি গুরুত্ব ও আমল করার তাওফিক দান করেন আমীন।

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী ছাহেব।

শেয়ার করুন