তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কের বেহালদশা, ৩০ বছরেও সম্পন্ন হয়নি নির্মাণ কাজ
স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সদরের সাথে তিনটি ইউনিয়নের যাতায়াতের একমাত্র উঁচু সড়ক তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক। আট কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের কাজ শুরু হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। ৩০ বছরেও সড়কটির নির্মাণ কাজ হয়নি। তাছাড়া আওয়ামীলীগ সরকারের দীর্ঘ ১৫বছরেও এই সড়কের কাজ না করার ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী ও বিএনপি নেতারা। বর্তমানে সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাচল করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন উত্তর বড়দল, উত্তর শ্রীপুর ও বাদাঘাট ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ পোহাত হচ্ছে।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দ্রুত এ সড়কটির কাজ শুরু করার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
তবে সড়কটি আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে গত সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর উড়াল সেতু প্রকল্পভুক্ত হয় এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। খুব তাড়াতাড়ি এ সড়কের কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কালবেলাকে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। তবে সরকার পরিবর্তনের কারনে কাজ দ্রুত শুরু হওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা শঙ্কায়ও রয়েছেন দপ্তরের কর্মকর্তারা।
এলাকাবাসী সাথে কথা বললে তারা জানায়, তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক দিয়ে উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন উত্তর বড়দল, উত্তর শ্রীপুর ও বাদাঘাট ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ বারমাস উপজেলা সদরে যাতায়াত করে থাকেন। বাদাঘাট বাজারটি উপজেলার সব চেয়ে বড় একটি বাজার। বাদাঘাট বাজার থেকে উপজেলার কয়েকটি বাজারের ব্যবসায়ীরা পাইকারি মূল্যে বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করে আনতে হয়। সেক্ষেত্রে মালামাল পরিবহনে ব্যবসায়ীদেরও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
এছাড়াও জেলার তিনটি শুল্ক স্টেশন উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এগুলো হচ্ছে বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী। এসব স্টেশনে উপজেলা সদর থেকে যাতায়াতে এই সড়কটি ব্যবহার করতে হয়। উপজেলার খনিজ বালু ও পাথর সমৃদ্ধ যাদুকাটা নদীতেও এ সড়ক দিয়ে যেতে হয়। বর্তমানে সারাদেশের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান উপজেলার জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান, বারিক্কা টিলা, নীলাদ্রী লেক ও লাকমাছড়াতে উপজেলা সদর থেকে যাতায়াতের একমাত্র সড়কও এটি।
সড়কের বাদাঘাট ইউনিয়নের হুসনার ঘাট থেকে পাতারগাঁও পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁচা। এর মধ্যে এক কিলোমিটার পার হতে হয় ছোট নৌকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে। বাকি এক কিলোমিটার হেঁটে পার হওয়াও কঠিন। সড়কের দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের টাকাটুকিয়া সেতুর উত্তর অংশের মাটি প্রতিবর্ষায় সরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। হুসনার ঘাট থেকে জামালগড় রাস্তার সম্মুখ পর্যন্ত এবং পাতারগাঁও থেকে বাদাঘাট বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার এলাকা সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে।
বাদাঘাট বাজারে ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং এর পরিচালাক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সাপ্তায় তিন-চার দিন ব্যাংক লেনদেন করতে উপজেলা সদরে যেতে হয়। ১৫মিনিটের রাস্তা ফেড়ি নৌকা মিস করলে আসা যাওয়ায় প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। বৃষ্টি হলে এ রাস্তা এতো ঝুঁকিপূর্ণ হয়। গাড়ি নিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পরে।
তাহিরপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা সৈজ উদ্দিন বলেন, আমরা অনেকেই বাদাঘাট বাজার থেকে পাইকারি সবজি এনে বিক্রি করি। সবজি আনতে গিয়ে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গাড়ি ও নৌকা মিলিয়ে অনেক টাকা পরিবহনে খরচ হয়। কষ্টও অনেক বেশি। রাস্তা ভালো থাকলে এমন দুর্ভোগে পোহাতে হতোনা।
ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক আজাদ হোসেন বলেন, এ রাস্তায় যাত্রী বা মালামাল নিয়ে চলাচল অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। একটু বৃষ্টিতেই কাঁচা রাস্তা কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল হয়ে ওঠে। তখন মোটরসাইকেল চলাচলও বন্ধ হয়ে পড়ে। তবে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে মালামাল বা যাত্রী পরিবহন করে থাকেন। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে এ সড়কে।
তাহিরপুর সদর ইউপি সদস্য তুজাম্মিল হক নাছরুম বলেন, তাহিরপুর- বাদাঘাট সড়কটি উপজেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। আওয়ামীলীগ সরকার ১৫বছরেও এই সড়কের কাজ করতে পারেনি এটি আসলেই দুঃখজনক। শুনেছি এই কাজের টেন্ডার হয়েছে। যারা টেন্ডার পেয়েছে তারা যেন দ্রুত কাজ শুরু করে।
উত্তর বড়দল ইউপি চেয়ারম্যান মাসুক মিয়া বলেন, উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়নগুলো ব্যবসা বাণিজ্যে জেলার গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নগুলোর সাথে উপজেলা সদরের যোগাযোগ ভলো হলে ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ কমবে। এতে ব্যবসা বাণিজ্যের গতি তরান্বিত হবে। দ্রব্যমূল্যের দামও কমবে।
তাহিরপুর উপজেলা এলজিডি অফিসের ইঞ্জিনিয়ার সাজু আহমেদ জানান , তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কটি উড়াল সড়কের আওতায় এসেছে। এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। যারা কাজ পেয়েছে তারা খুব দ্রুত কাজ শুরু করার কথা। আপাতত ছোটখাটো ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় মেরামত করে দেয়া হয়।
তাহিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, দীর্ঘ ১৫-১৬বছর আওয়ামীলীগ সরকার এই এলাকার তেমন কোন উন্নয়ন করতে পারেনি এই সড়কটি হল তার প্রমাণ। বিএনপি সরকারের আমলে এই সড়কের কাজ শুরু করে। পরে আওয়ামীলীগ সড়ক এই জন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের প্রতি কোন নজর দেয়নি। অথচ এই সড়কটি তাহিরপুর উপজেলার সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
Board of Directors of ABC National News : Chief Editor and Advisor-Adv Monir Uddin, Ex.Editor and Advisor-Lion Eng.Ashraful Islam, Ex.Editor-Lion Dr.Mana and Lion Palash, Acting Editor-Tawhid Sarwar, News Editor-Aftab Parvez,News Sub Editor-Pojirul Islam and
Co-Editor Siam and Neon.
Dhaka Office : 67/4,5 Chaya Neer, Shanti Bagh Dhaka 1212.