তাহিরপুরের যাদুকাটায় টোল আদায়ের নামে যুবলীগ নেতার চাঁদাবাজি
- আপডেট সময় : ০৭:২৩:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৩ ১১১ বার পড়া হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার।।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটায় টোল আদায়ের নামে অবৈধ চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক উপজেলা যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে।
জানা যায়, যাদুকাটা নদীর লাউড়েরগড়-ঘাগড়া নৌকা ঘাটটি আগ্রহী দরদাতা না পাওয়ায় ও মামলা সংক্রান্ত জটিলতা দেখিয়ে উপজেলা প্রশাসন চলতি বছরের পহেলা বৈশাখ থেকে ওই ঘাটে খাস কালেকশনের মাধ্যমে টোল আদায়ের জন্য তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ওই ঘাটের সর্বোচ্চ দরদাতার হাইকোর্টের রিট পিটিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ জুন লাউড়েরগড়-ঘাগড়া নৌ-ঘাটে খাস কালেকশনের মাধ্যমে টোল আদায় বন্ধের আদেশ দেয় উপজেলা প্রশাসন।
কিন্তু কিছুদিন টোল আদায় বন্ধ থাকার পর উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে আবারও উপজেলা প্রশাসনের আদেশ খাস কালেকশনের মাধ্যমে টোল আদায়ে নামে তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য ইশারায় খাস কালেকশনের নামে মোদেরগাও গ্রামের মুক্তার উদ্দিন ওরোপে মুক্তুবের ছেলে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক রায়হান উদ্দিন রিপন ও একটি চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী গ্রুপ গত দুই মাসেরও অধিক সময় ধরে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে যাদুকাটা নদীর লাউড়েরগড়-ঘাগড়া নৌকা ঘাটে বালু-পাথরবাহী ও কয়লা নৌপরিবহন থেকে অবৈধভাবে জোরপূর্বকভাবে অতিরিক্ত টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি করে আসছে। এ সময় নৌ-শ্রমিকরা তাদের চাহিদা মতো চাঁদার টাকা না দিলে তাদের মারধর করে টাকা আদায় করছে চাঁদাবাজ রিপন ও তার লোকজন। যেখানে সরকারিভাবে একটি নৌকা থেকে সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা টোল আদায়ের কথা থাকলেও যুবলীগ নেতা রিপন ও তার লোকজন যাদুকাটা নদীর ঘাগড়া ঘাটে প্রতিদিন জোরপূর্বক প্রতি নৌকা থেকে চাঁদা আদায় করছে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। কিন্তু টোল আদায়ের রশিদে টাকার পরিমাণ ও রশিদ দেয়ার কথা থাকলে কোন রকম রশিদ দেয়া না ওই চাঁদাবাজ চক্রটি। এভাবে প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকা অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করছে রিপন ও তার লোকজন । ওই চাঁদাবাজ চক্রের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। রায়হান উদ্দিন রিপন তিনি নিজে তাহিরপুর উপজেলার এক তশিলদারের নাম প্রকাশ করেছেন।
চাঁদাবাজ চক্রটি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় নৌ-মালিক, শ্রমিক ও বালুপাথর ব্যবসায়ীরা তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়না। কথা বললেও চলে জোরজুলুম, মারপিট। এমনকি আটকে রাখা হয় নৌকা, নিয়ে যাওয়া হয় নৌকায় থাকা বিভিন্ন মালামাল এমন অভিযোগ নৌ-মালিক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের।
নদী-বাংলা নৌকার সুকানি সেলিম মিয়া বলেন, ঘাগড়া-লাউড়েরগড় ঘাটে আমার কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা টোল দাবি করা হয়। আমি এত টাকা দিতে অপরাগতা জানালে তারা আমাকে মারধর করার হুমকি দেয়। মারধরের ভয়ে তাদের চাহিদা মতো টাকা দিতে বাধ্য হয়। নির্যাতনের শিকার এক নৌকার মাঝি বলেন, এক টাকা কম দিলেই তারা আমাদের উপর নির্যাতন চালায়। আমরা কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাইনি। তারা এমপির লোক। অপর আরেক নৌকার মাঝি বলেন, তারা চাঁদা নেয় ঠিকই কিন্তু আমাদের কোন ধরণের রশিদ দেয়নি। রশিদের কথা বলাতে রিপনের লোকজন আমাকে মারধর করে। পরে আমি জানতে পারলাম এরা অন্যায় ভাবে আমাদের উপর নির্যাতন করে চাঁদা নিচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে এই চাঁদাবাজির সাথে যুক্ত রয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা মজিবুর রহমান তালুকদার, তাহিরপুর উপজেলার যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রায়হান উদ্দিন রিপনের লোকজন। তাদের নেতৃত্বে ১০/১৫ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ঘাগড়া-লাউড়েরগড় নৌ-ঘাটে টোল আদায়ের নামে প্রতি নৌকা থেকে জোরপূর্বক চাঁদাবাজি করে আসছে। এ ঘাট থেকে চাঁদাবাজ চক্রটি অন্তত কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলার যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রায়হান উদ্দিন রিপন বলেন, আমি এসবের কিছুই জানিনা। আমার প্রতিপক্ষের লোকজন এসব দুর্নাম ছড়াচ্ছে। আমার কোনো লোকজন এর সঙ্গে জড়িতও না। খাস কালেকশনের টোল আদায় করছে তহশিলদার।
এ নিয়ে বক্তব্য জানতে জেলা পরিষদের সদস্য মজিবুর রহমান তালুকদারের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে (০১৭১৩২২৬০৩০) একবাধিকবার কল করেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে। যেকারনে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, ঘাগড়া-লাউড়েরগড় নৌঘাটে আদালতের আদেশে আবারও টোল আদায় উপজেলা প্রশাসনের লোকজন টোল আদায় করছে। এখন কেউ যদি এর নাম করে চাঁদাবাজির কাজে জড়িত হন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।