মোঃ মজিবর রহমান শেখ
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি
শীতপ্রধান দেশ থেকে ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার অন্যতম প্রাচীন ও সর্ব বৃহৎ রামরাই রাণীসাগর দিঘিতে রং-বেরঙের নানা প্রজাতির অতিথি পাখিদের আগমনে মুখরিত এখন পুকুর প্রাঙ্গন। শীত মৌসুমে ভালোবাসার টানে লাখো হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে রামরায় দিঘিতে আসে এসব পাখি। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাখি ও জলাশয়ের প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। এসব পাখি দেখতে যেমন সুন্দর, ঠিক তেমনই আকর্ষণীয় তাদের খুনসুটি।প্রতিবছর শীত এলেই এসব পাখি এখানে এসে প্রকৃতিতে সাজাই নতুন সাজে। পাখিদের মুহুর্মুহু কলতানে পুরো এলাকা পরিণত হয়েছে পাখির স্বর্গরাজ্যে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির সমাগম হয়েছে এখানে। পাখিদের কলকাকলিতে পুরো এলাকা মুখরিত। পাখি প্রেমি ও সৌন্দর্য পিপাসুরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত পর্যটন কেন্দ্র’র পাখিগুলোকে দেখার জন্য ছুটে আসছেন।
প্রচন্ড শীতের কারণে সাইবার অঞ্চল থেকে আসা পাখিগুলো সারাদিন রামরাই দীঘি বা রাণীসাগরে আহার করে সন্ধ্যা হলে আসে পাশের জলাশয়গুলোতে আশ্রয় নেয়। সকাল হলেই আবার রাণীসাগরে ফিরে এসে খাবার সংগ্রহ করে। রানীশংকৈল উপজেলা শহর থেকে ৪ কিমি দূরে উত্তরগাঁও গ্রামের নিকটেই বরেন্দ্র অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তর জলাশয় রামরাই দিঘীর অবস্থান। শহর থেকে যে কোন যানবাহনে ১০ থেকে ১৫ টাকা ভাড়া নেয়। যেতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিটের রাস্তা। পুকুরটি ১৮.৩৪ একর সু-উচ্চ পাড় ও ২৩.৮২ একর জলভাগ সহ মোট ৪২.২০ একর বিশিষ্ট। পুকুরটির দৈর্ঘ্যে (উত্তর- দক্ষিণ) ৯০০ মিটার ও প্রস্থ (পূর্ব-পশ্চিম) ৪০০ মিটার। এর আয়তন প্রায় ৪২ একর। এর সঠিক ইতিহাস এখনো জানা যায়নি। ধারণা করা হয় দিঘিটি পাঁচশ থেকে হাজার বছরের পুরাতন হতে পারে। এক সময় এই দিঘি ছিল এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের পানির চাহিদা পূরণের উৎস। এ দিঘিকে ঘিরে নানা লোককথা শোনা যায়। পরবর্তীতে ২০০২ সালে রামরাই দিঘির নামকরণ করা হয় রানীসাগর। তবে লোকমুখে এটি রামরাই দিঘি নামেই পরিচিত। এর চারপাশে প্রায় ১২০০ এর অধিক লিচু গাছ সহ অন্যান্য গাছ লাগানো হয়েছে। চারিদিক যেনো সবুজের বিশাল সমারোহ আর দিঘীর টলটল জলরাশি মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের। প্রতিবছর শীত মৌসুমে ডিসেম্বরের শেষের দিকে ও জানুয়ারি মাসের প্রথম দিক প্রধানত উত্তর মরু, ইউরোপ, সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, হিমালয়ের পাদদেশ, তিব্বত অঞ্চল থেকে রামরাই দিঘিতে আসা পাখিদের মধ্যে রয়েছে: সাদা বক, বালিয়া, পানকৌড়ি, ঘুঘু , সারস, রাতচোরা, গাংচিল, পাতিহাঁস, বুনোহাঁস, খঞ্জনা, ওয়ার্বলার, হাড়গিলা, স্নাইপ বা কাদাখাঁচা, কোকিল সহ নানা প্রজাতির হাজার হাজার অতিথি পাখির আগমন রামরাই দিঘির সৌন্দর্য পাখি প্রেমিক ও পর্যটকদের মন আকৃষ্ট করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে থাকে অতিথি পাখির দল। সন্ধ্যা নামলেই দিঘীপাড়ের লিচু বাগানে আশ্রয় নেয় এসব পাখি। পাখিদের এই মুহুর্মুহু কলতানের টানে প্রতিদিনই দূর দুরান্ত থেকে রামরাই দিঘিতে ছুটে আসছেন পাখি প্রেমী পর্যটকরা। পাখিদের আসার মূল কারণ খাদ্য সংগ্রহ। মার্চ মাসের শেষের দিকে আপন আপন গন্তব্যে ফিরে যায় এসব পাখি। ইতিমধ্যে রানীশংকৈল উপজেলা পরিষদ থেকে রামরাই দিঘিকে নান্দনিক রুপ দেওয়ার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিঘির পাড়ের চারদিকে দর্শনার্থীদের বসার জন্য গাল আকৃতির ৩টি ছাতার ছাউনী ও ৫ টি বসার মাচা তৈরি করা হয়েছে। পুরো দিঘির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য একটি নৌকা রয়েছে। এছাড়াও রানীশংকৈল উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে একটি কাঠের ব্রীজ করা হয়েছে। রামরাই দিঘিটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হলে দেশের পর্যটন খাতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সরেজমিনে কথা হয়, দিনাজপুরের সেলিনা বেগমের সাথে। তিনি প্রতিবেদককে জানান, শুনেছিলাম রাণীসাগরে অনেক পাখি আসে। তাই দেখতে এসেছিলাম। এখানে এসে মনটা ভরে গেল। পুকুরের চারিদিকের শত শত লিচু গাছ দেখতে বেশ মনোরম। পুকুরের নীচ থেকে পাড়ের দিকে তাকালে মনে হয় আকাশের সাথে মিশে আছে। স্থানীয় পাখি প্রেমিক শেখ মেহেদী, শহীদুল ইসলাম রকি সহ বেশ কয়েকজন জানান, রামরাই-দিঘি এলাকাটি নির্জন এলাকা। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের তৎপরতা প্রয়োজন। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শীতের শুরুতে এখানে দেশি পাখি ছাড়াও অতিথি পাখি এসেছে। এখানে কয়েক মাস থাকার পর শীতের শেষে আবার পাখিরা ফিরে যায় নিজ নিজ দেশে। কিছু পাখি সারা বছরই থাকে এখানে। রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন, রামরাই দিঘি রাণীশংকৈলের জন্য একটি অহংকার। এটি এই এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে রাখছে। অতিথি পাখিগুলো আমাদের এই রামরাই দীঘিতে প্রতি শীতকালেই আসে।‘রামরাই-দিঘি অতিথি পাখির অভয়াশ্রমে পরিনত হয়েছে। রামরাই দীঘির পুরো এলাকা আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ইতোমধ্যে এটি রক্ষণাবেক্ষনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
Board of Directors of ABC National News : Chief Editor and Advisor-Adv Monir Uddin, Ex.Editor and Advisor-Lion Eng.Ashraful Islam, Ex.Editor-Lion Dr.Mana and Lion Palash, Acting Editor-Tawhid Sarwar, News Editor-Aftab Parvez,News Sub Editor-Pojirul Islam and
Co-Editor Siam and Neon.
Dhaka Office : 67/4,5 Chaya Neer, Shanti Bagh Dhaka 1212.