পাভেল ইসলাম মিমুল স্টাফ রিপোর্টার
প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া রাজশাহীর গ্রীণ প্লাজা রিয়েল অ্যাস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ‘ভুয়া’ আপসনামা দেখিয়ে আদালতে জামিন নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মামলার বাদী এজাজুল হক এ দাবি করেছেন। তিনি বিষয়টি আদালতের নজরে আনবেন বলেও জানিয়েছেন। এজাজুল হকের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায়।
এজাজুল হক বৃহস্পতিবার ভোররাতে মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলার অভিযোগে তিনি বলেন, মোস্তাফিজুরের কাছ থেকে একটি ফ্ল্যাট নিতে তিনি ১২ লাখ টাকা দেন। কিন্তু মোস্তাফিজুর চুক্তিপত্রের শর্ত ভেঙে ফ্ল্যাটটি অন্যজনের কাছে বিক্রি করে দেন। এ কারণে এজাজুল টাকা ফেরত চাইলে তা দিতে অস্বীকার করেন মোস্তাফিজুর। এই মামলা দায়েরের পরই মোস্তাফিজুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপর সকালেই তাকে থানা থেকে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিকালে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ মোস্তাফিজুর রহমানের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম তাঁর জামিন আবেদন করেন। এ সময় বিচারক মহিদুল ইসলাম আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। এ দিন স্বাধীনতা দিবসের ছুটি থাকার কারণে আদালতের কর্মচারীরা ছিলেন না। আদালতে দায়িত্বে থাকা পুলিশ এই মামলার নথিপত্র আদালতের কাছে উপস্থাপন করে।
আসামির জামিন পাওয়ার কথা শুনে অবাক হন বাদী এজাজুল হক। বুধবার বিকালে তিনি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) আদালত পরিদর্শকের কার্যালয় থেকে মামলার নথিপত্র তুলে দেখেন, আসামিপক্ষ একটি আপসনামা জমা দিয়েছে। এই আপসনামায় স্বাক্ষর রয়েছে ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর। আপসনামাটিতে উল্লেখ আছে, ‘ফ্ল্যাটের ক্রেতা এজাজুল হক চুক্তি বাতিল করছেন। চুক্তিপত্র অনুযায়ী মোস্তাফিজুর রহমান ১০ শতাংশ টাকা কেটে বাকি ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেন। এজাজুলের আর কোন দাবি থাকল না।
এজাজুল হক বলছেন, তিনি এক টাকাও ফেরত পাননি। কোন আপসনামাও হয়নি। মামলার নথিতে থাকা এই আপসনামাটি ভুয়া। সেখানে থাকা তাঁর স্বাক্ষরটি জাল। তিনি বলেন, ‘আমার নামে ভুয়া আপসনামা আদালতে দেওয়ার কারণে আমি মামলা করব।
এজাজুল হক বলেন,আসামি মোস্তাফিজুরের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম তার পূর্বপরিচিত। মোস্তাফিজুরকে আদালতে নেওয়ার পর তিনি আপস করার জন্য কয়েকদফা ফোন করেন। আইনজীবী শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথোপকথনের অডিও রেকর্ডও এজাজুল হক শোনান। এতে শফিকুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি থাকলে তোমার টাকা তো পাবাই। ১২ লাখ টাকায় তুমি কোটিপতি হয়ে যাবা? মানুষের মানসম্মান আছে না?’ এজাজুল বলেন, ‘এই চিটের জন্য আপনি অনুরোধ করছেন কেন?একপর্যায়ে আইনজীবী শফিকুল ইসলাম বাদী এজাজুল হককে বলেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। তোমাকে আমি আর রিকোয়েস্ট করব না। তুমি চুপ থাকো। তুমি এই মামলাতে পারলে জেল দিও।
ভুয়া আপসনামা দিয়ে আসামির জামিন করানোর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আপসনামা আমি দিব কেন? আমার মক্কেল দিয়েছে। আসল না নকল সেটা সে বলতে পারবে। আমি বলতে পারব না।
জামিন শুনানির আগে বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করে আপসের জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
আদালতে নথিপত্র উপস্থাপন করেছিলেন আরএমপির আদালত পরিদর্শকের কার্যালয়ের (জিআরও) বোয়ালিয়া ও মতিহার থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান। আপসনামাটি দেখে তিনি বলেন, ‘এই আপসনামা কাল আসামি মোস্তাফিজুরের আইনজীবী দিয়েছেন।
আপসনামাটি জাল,বাদীর এমন দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা তো আমি বলতে পারব না। এ রকম হয়ে থাকলে বাদী বিষয়টি আদালতের নজরে আনবেন।’
তিনি জানান, ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাজির হওয়ার শর্তে আসামিকে জামিন দিয়েছেন আদালত।এজাজুল হক মামলা করেন পেনাল কোডের ৪২০, ৪০৬ ও ৫০৬ ধারায়।
রাজশাহী জেলা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী পারভেজ তৌফিক জাহেদী জানান,এই তিন ধারার মধ্যে ৪০৬ ধারাটি অজামিনযোগ্য। তবে বাদীর সঙ্গে আসামির আপস হলে আদালত জামিন কিংবা মামলা নিষ্পত্তি করতে পারেন।আপসনামাটির কারণেই আসামি জামিন পেয়েছেন। এটি ভুয়া হলে মামলার পরবর্তী ধার্য্য তারিখে বাদী বিষয়টি আদালতের নজরে আনতে পারেন।
মোস্তাফিজুর রহমান রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট। ২০১০ সালের দিকে রাজশাহীতে পলিটেকনিকে ভর্তি হয়ে পড়াশোনার খরচ চালাতে তিনি এক নিঃসন্তান দম্পতির বাসায় পালক ছেলে হিসেবে আশ্রয় নেন। ২০১৯ সালে তিনি ডেভেলপার ব্যবসায় নাম লেখান। এখন তিনি দামি হ্যারিয়ার গাড়িতে চড়েন। ফ্ল্যাট বিক্রির নামে তার বিরুদ্ধে বহু মানুষের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।
তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি করেন এজাজুল হক। এরপর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নগরীর চন্দ্রিমা থানায় তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে। এই মামলার বাদীর নাম মো. রুবেল। ফ্ল্যাট বিক্রির নামে মোস্তাফিজুর তাঁর কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। বিষয়গুলো নিয়ে মামলার আসামি মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে বুধবার সন্ধ্যায় তাঁকে ফোন করা হয়। তবে তাঁর মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
Board of Directors of ABC National News : Chief Editor and Advisor-Adv Monir Uddin, Ex.Editor and Advisor-Lion Eng.Ashraful Islam, Ex.Editor-Lion Dr.Mana and Lion Palash, Acting Editor-Tawhid Sarwar, News Editor-Aftab Parvez,News Sub Editor-Pojirul Islam and
Co-Editor Siam and Neon.
Dhaka Office : 67/4,5 Chaya Neer, Shanti Bagh Dhaka 1212.
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার