জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংবাদিকদের জন্য ভোট কেন্দ্রে থাকছে ১৩ নীতিমালা

- আপডেট সময় : ০৭:০৬:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ৪৭৭ বার পড়া হয়েছে

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংবাদিকদের জন্য ভোট কেন্দ্রে থাকছে ১৩ নীতিমালা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে ইচ্ছুক গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ১৩টি নীতিমালা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন।নীতিমালার মধ্যে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর সাংবাদিকরা প্রিজাইডিং অফিসারকে জানিয়ে তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা এবং ভিডিও ধারণ করতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে। তবে ভোটকেন্দ্রে ১০ মিনিটের বেশি অবস্থান করা যাবে না।
একইসঙ্গে, সংবাদ সংগ্রহের কাজে সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের জন্য রেজিষ্ট্রেশনকৃত মোটরসাইকেলে স্টিকার ইস্যু করবে রিটার্নিং কর্মকর্তা।
আগামী ৭ই জানুয়ারী ২০২৪ সকাল ৮ টা হতে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের, ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহে নির্দেশনাগুলো হলো-
১. নির্বাচনি সংবাদ সংগ্রহে গণমাধ্যম ও সাংবাদিক:
ক. প্রিন্ট মিডিয়া: ডিক্লারেশন প্রাপ্ত এবং নিয়মিত প্রকাশিত দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক প্রভৃতি।
খ. টেলিভিশন: অনুমোদিত টেলিভিশন চ্যানেল যা বাংলাদেশ হতে প্রচারিত হয়;
গ. অনলাইন নিউজ পোর্টাল: অনুমোদিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল;
ঘ. আইপিটিডি: অনুমোদিত ইন্টারনেটভিত্তিক টেলিভিশন;
ঙ. ট্রি-ল্যান্স সাংবাদিকঃ তথ্য অধিদপ্তরের সাংবাদিক পাশধারী (PID Accreditation):
চ. আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাঃ তথ্য অধিদপ্তর হতে অনুমতিপ্রাপ্ত।
ছ. বিদেশী সাংবাদিক: কথ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে অন্যান্য দেশ হতে আগত সাংবাদিক।
২. অনুমোদন প্রক্রিয়া:
ক. কেন্দ্রীয় সাংবাদিক: রাজধানীকেন্দ্রিক গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় সাংবাদিক হিসেবে গণ্য করা হয়। এসব সাংবাদিকদের পাশ ও গাড়ির স্টিকার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ অধিশাখা হতে প্রদান করা হয়।
খ. স্থানীয় সাংবাদিকঃ সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকা। জেলা/উপজেলা হতে প্রকাশিত পত্রিকা এবং জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন, অনলাইন, আইপিটিডি এর স্থানীয় প্রতিনিধি। স্থানীয় পর্যায়ের এসব সাংবাদিকদের কার্ড ও গাড়ির স্টিকার সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বা তার কর্তৃক ক্ষমতা প্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদান করবেন।
৩. আবেদন প্রক্রিয়া: ভোটগ্রহণ দিনের অন্তত তিনদিন পূর্বে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের অফিসিয়াল প্যাডে নিউজ এডিটর চিফ রিপোর্টার, বার্তা প্রধান/ব্যুরো প্রধান/ জেলা প্রতিনিধি স্বাক্ষরিত আবেদন নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বা রিটার্নিং অফিসার বরাবর দাখিল করতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান হতে কতজন সাংবাদিককে এ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হলো- তাদের নাম, প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিক পরিচয়পত্র/পিআইডি কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, সদ্য তোলা ০১ কপি পাসপোর্ট ও ০১ কপি স্ট্যাম্প সাইজ রঙিন ছবি আবেদনের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।
৪. অনুমোদন ও কার্ড প্রদান: প্রাপ্ত আবেদনসমূহ ও দলিলাদি যথাযথভাবে যাচাই বাছাই করে নির্বাচনের কলেবর ও পুরুত্ব অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসার স্বীয় বিবেচনায় যৌক্তিক সংখ্যক সাংবাদিককে অনুমোদন ও কার্ড ইস্যু করবেন। জটিলতা এড়াতে কতসংখ্যক স্থানীয় সাংবাদিককে পরিচয়পত্র দেয়া যায় তা স্থানীয় প্রেসক্লাব বা প্রেসক্লাবসমূহ বা সাংবাদিক সংগঠন বা সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে নির্ধারণ করবেন। এছাড়া সাংবাদিকদের আবেদন যাচাই বাছাই করে পরিচয়পত্র ও গাড়ির স্টিকার প্রদানের জন্য রিটার্নিং অফিসার একটি কমিটি গঠন করে দিতে পারবেন কিনা তা দেখার জন্য গত এক সপ্তাহের পত্রিকা/ সাপ্তাহিকের ক্ষেত্রে তিনটি সংখ্যা জমা দেয়ার জন্য বলা যেতে পারে। সাংবাদিক পরিচয়পত্র বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার অন্য সংশ্লিষ্ট পত্রিকার এডিটর/ প্রেস ক্লাবের সভাপতির সাথে যোগাযোগ করা যাবে। যেসব সাংবাদিককে অনুমোদন দেয়া হবে তাদের বিস্তারিত তথ্য ইস্যু নম্বরসহ রেজিস্টারে লিখে রাখতে হবে এবং ইস্যুকৃত কার্ডে রিটার্নিং অফিসার/ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর, সিল ও তারিখ থাকতে হবে।
৫. সাপোর্ট স্টাফ: টেলিভিশনের সাংবাদিকদের প্রযুক্তিগতভাবে সহায়তা করার জন্য যে সকল সাপোর্ট স্টাফ (ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান) নিয়োজিত থাকবেন; তাদেরকে সাপোর্ট স্টাফ (মিডিয়া) কার্ড প্রদান করতে হবে।
৬. গাড়ির স্টিকার: সাংবাদিকদের যাতায়াতের জন্য যৌক্তিক সংখ্যক গাড়ির স্টিকার প্রদান করা হবে। প্রয়োজনীয়তার নিরীখে ও বাস্তবতার আলোকে স্থানীয় প্রশাসন (রিটার্নিং অফিসার, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার সমন্বিতভাবে) প্রকৃত সাংবাদিকদেরকে ভোটকেন্দ্রে গমনাগমন করত: সংবাদ সংগ্রহের লক্ষ্যে সীমিত পর্যায়ে মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপত্র, প্রেস আইডির কপি, এনআইডির কপি এবং যে মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হবে সেই মোটরসাইকেলের রেজিষ্ট্রেশনের কাগজপত্র, ড্রাইডিং লাইসেন্স এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র রিটার্নিং/সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট জমা দিলে তার সঠিকতা যাচাই করে রিটার্নিং অফিসার বা রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দিবেন। কোন সাংবাদিকের জন্য গাড়ির স্টিকার প্রদান করা হলে স্টিকারের ক্রমিক নম্বর রেজিস্টারে লিখে রাখতে হবে। সাংবাদিক কার্ড, সাপোর্ট স্টাফ (মিডিয়া) কার্ড, গাড়ির স্টিকার:
৭. নির্বাচন কমিশন সচিবালয় হতে বিভিন্ন নির্দেশনাসহ নির্বাচনভিত্তিক সাংবাদিক কার্ড, সাপোর্ট স্টাফ (মিডিয়া) কার্ড ও গাড়ির স্টিকার মুদ্রণ করা হয়। এগুলো বিভিন্ন নির্বাচনে চাহিদা অনুযায়ী সারাদেশে ব্যবহার করা হয়।
৮. ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের অবহিতকরণ। নির্বাচনি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের সময় সাংবাদিকদের বিষয়ে নির্দেশনাসমূহ প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিতে হবে। এছাড়া সাংবাদিকদের জন্য কার্ডের নমুনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটদের সরবরাহ করতে হবে। নির্দেশনাসমূহ যেসব সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র দেয়া হবে তাদেরকেও জানাতে হবে।
৯. সাংবাদিক কার্ড ও গাড়ির স্টিকার: মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাংবাদিক পরিচয়পত্র, সাপোর্ট স্টাফ (মিডিয়া) পরিচয়পত্র এবং গাড়ির স্টিকার অন্যান্য নির্বাচনি মালামাল সংগ্রহের সময় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখা হতে সংগ্রহ করতে হবে।
১০. নির্বাচনি এলাকা ও ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের পালনীয় নির্দেশাবলী: নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রদত্ত বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিজাইডিং অফিসারকে অবহিত করে ভোটগ্রহণ কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা এবং ভিডিও ধারণ করতে পারবেন, তবে কোনক্রমেই গোপন কক্ষের ভিতরের ছবি ধারণ করতে পারবেন না; একইসাথে দুইয়ের অধিক মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না এবং ১০ মিনিটের বেশি ভোটকক্ষে অবস্থান করতে পারবেন না। ভোটকক্ষে নির্বাচনি কর্মকর্তা, নির্বাচনি এজেন্ট বা ভোটারদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে পারবেন না। ভোটকক্ষের ভিতর হতে কোনভাবেই সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না; ভোটকেন্দ্রের ভিতর হতে সরাসরি সম্প্রচার করতে হলে ভোটকক্ষ হতে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে তা করতে হবে, কোনক্রমেই ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে বাঁধার সৃষ্টি করা যাবে না; সাংবাদিকগণ ভোটগণনা কক্ষে ভোট গণনা দেখতে পারবেন, ছবি নিতে পারবেন তবে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন। ভোটকক্ষ হতে ফেসবুকসহ কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি প্রচার করা যাবে না। কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম ব্যাহত হয় এমন সকল কাজ থেকে বিরত থাকবেন। ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকগণ প্রিজাইডিং অফিসারের আইনানুগ নির্দেশনা মেনে চলবেন। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রকার নির্বাচনি উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করতে পারবেন না। নির্বাচনি সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রার্থী বা কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে থেকোন ধরণের প্রচারণা বা বিদ্বেষমূলক প্রচারণা হতে বিরত থাকবেন; নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্য নির্বাচনি আইন ও বিধিবিধান মেনে চলবেন।
১১. উপরোল্লিখিত নির্দেশনা কোন সাংবাদিক পালন না করলে ফার্ড ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ তার সাংবাদিক পাশ বাতিল করতে পারবেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক বা উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১২. এ নীতিমালা নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন ও উপনির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য হবে।
১৩. নির্বাচন কমিশনের আদেশক্রমে এ নীতিমালা জারী করা হলো। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।