গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরে ঈদের আগে পোশাকশিল্পে অস্থিরতার আড়ালে একটি মহল নাশকতার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। গত কিছুদিন ধরে বেতন ভাতা, সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহতের ঘটনা এবং গুজবে গাজীপুরে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, কারখানা ও যানবাহন ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে গুজব ছড়িয়ে সৃষ্টি করা হয় অরাজক পরিস্থিতি। এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণে আনলেও এরই মধ্যে ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে যাচ্ছে।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা, শ্রমিকদের একাধিক সংগঠনের নেতা এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাত স্থান থেকে আওয়ামী লীগের এক নেতা অডিও বার্তায় গাজীপুরবাসীকে শান্তিতে ঘুমাতে না দেওয়ার যে কথা বলেছিলেন। সে ঘটনার পর গাজীপুরসহ দেশব্যাপী অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হয়। বিশেষ অভিযানে গাজীপুরে হাজারেরও বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে। তবে বেশিরভাগই পালিয়ে গিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জনবহুল গাজীপুরে এসে আত্মগোপনে রয়েছেন। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ নানা কারণে পোশাক শ্রমিকরা আন্দোলনে নামলে নেপথ্যে থেকে পলাতক এসব নেতাকর্মী আন্দোলনকারীদের সাথে মিশে নাশকতার চেষ্টা করছেন।
সম্প্রতি গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনে এর কিছু নজির মিলেছে। গত ৩ মার্চ গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস মোড়ে প্যানারোমা অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় এক শ্রমিক স্বামীর সঙ্গে রাগ করে কারখানার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। বিষয়টি কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ওই নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে কারখানাটিতে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। কারখানার অভ্যন্তরে পার্কিং করে রাখা প্রাইভেটকার ও কাভার্ডভ্যান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা।
ওই কারখানার শ্রমিক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলন শুরু হলে বাইরে থেকে নানা গুজব ছড়াতে থাকে একটি মহল। অনেকে বলতে থাকে ভেতরে কয়েকটি লাশ পড়ে আছে। কেউ বলছে, কারখানার কয়েকজন শ্রমিকের লাশ গুম করে ফেলা হয়েছে, কেউ বলছে শ্রমিকদের ভেতরে আটক করে রাখা হয়েছে। এসব গুজব ছড়িয়ে চালানো হয় নাশকতা। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সঙ্গে বহিরাগত অনেক লোককে অংশ নিতে দেখেছেন কারখানার শ্রমিক ও স্থানীয়রা।
গত ১১ মার্চ টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় বিএইচআইএস অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করে দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চারঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রাখেন। অপরদিকে শ্রমিক মারধরের অভিযোগ এনে বিচারের দাবিতে কালিয়াকৈরের মৌচাকে শ্রমিকরা ব্যস্ততম ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। এতে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের সড়কপথে যোগাযোগ চারঘণ্টা বন্ধ থাকে।
গত ১২ মার্চ গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় গোল্ডেন রিফিট নামে এক পোশাক কারখানার শ্রমিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের জেরে কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চারঘণ্টা ধরে অবরোধ সৃষ্টি করে। এ আন্দোলনেও শ্রমিকদের পাশাপাশি বহিরাগতরা যোগ দেয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। একইদিন নগরীর কোনাবাড়ি এলাকায় পোশাক শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। শ্রমিকদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক বহিরাগত লোক শ্রমিকদের আন্দোলনে উসকে দেয়। অতি উৎসাহীরা রাস্তায় যানবাহন ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। গত ১৪ মার্চ সকালে নগরীর তেলিপাড়া এলাকায় স্মাগ সোয়েটার নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে দুই ঘণ্টা ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ আন্দোলনেও বহিরাগতরা সাধারণ শ্রমিকদের নানাভাবে উসকে দিয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে।
গত ১৭ মার্চ নগরীর ভোগড়া বাসন সড়ক এলাকায় মীম ডিজাইন কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ সৃষ্টি করে। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ কারখানার শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে কখনোই মহাসড়ক অবরোধ করেনি। এবারই প্রথম কিছু লোকের পরামর্শে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করতে যায়।
এদিকে একইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকার গোল্ডেন রিপিট নামে একটি পোশাক কারখানার সাবিনা আক্তার নামে এক শ্রমিক ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পার হতে গিয়ে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ওই শ্রমিক মারা যান। এ ঘটনায় শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ ও অবরোধ সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে অতি উৎসাহী কিছু লোক কারখানা ভাঙচুরের জন্য এগিয়ে যায়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচেষ্টায় কারখানাটি রক্ষা পেলেও তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বেশ কিছু যানবাহনে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি এলাকার একটি শ্রমিক সংগঠনের নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেতন-ভাতা নিয়ে কারখানায় অসন্তোষ দেখা দিলে অতি উৎসাহী কিছু লোক শ্রমিকদের উসকে দেয়। তখন আমরাও সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। তিনি জানান, সুযোগসন্ধানী একটি মহল শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করতে চেষ্টা করেন।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রমিকদের আন্দোলনের সঙ্গে বহিরাগত কিছু লোক ওই আন্দোলনে যোগ দিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনটিকে সহিংস করে তুলে। এখানে কে শ্রমিক আর কে বহিরাগত তা চিহ্নিত করা কঠিন। তবে শ্রমিক ও স্থানীয়রা তাদের চিনতে পারেন।
গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যা জানান, একটি কারখানায় বেতন নিয়ে কোনো সমস্যা হলে ওই সুযোগসন্ধানী গ্রুপটি অন্যান্য কারখানায় গিয়ে হামলা চালায়। ফলে অন্য কারখানাগুলো ছুটি দিতে বাধ্য হয়। আর ছুটি না দিলে কারখানাটিতে ভাঙচুর চালানো হয়।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের এসপি জহিরুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন মার্চ মাসে ২০ তারিখের মধ্যে দেওয়ার কথা রয়েছে। ঢাকায় মালিক শ্রমিক ও বিজিএমইএর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। তারপরও কিছু কিছু কারখানা এ সময়ের আগেই বিক্ষোভ করছে। আর শ্রমিকদের আন্দোলনে বহিরাগত লোক যোগ দিয়ে আ
Board of Directors of ABC National News : Chief Editor and Advisor-Adv Monir Uddin, Ex.Editor and Advisor-Lion Eng.Ashraful Islam, Ex.Editor-Lion Dr.Mana and Lion Palash, Acting Editor-Tawhid Sarwar, News Editor-Aftab Parvez,News Sub Editor-Pojirul Islam and
Co-Editor Siam and Neon.
Dhaka Office : 67/4,5 Chaya Neer, Shanti Bagh Dhaka 1212.