উষ্ণতা খুঁজছে কুড়িগ্রাম, শীতবস্ত্র সংকটের সাথে ‘মরার ঘাঁ’ দারিদ্রতা
- আপডেট সময় : ০৯:৪৬:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০ বার পড়া হয়েছে
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে কুড়িগ্রামসহ উত্তরের জেলাগুলোতে জেঁকে বসছে শীত। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে যে শীতবস্ত্র দরকার, তার দামও বেড়ে গেছে। এমন বাস্তবতায় গা গরম করার কাপড় কেনা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কুড়িগ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষ।
শীতবস্ত্র কেনা নিয়ে শঙ্কায় থাকা কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের একজন সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের মাস্টারের হাট গ্রামের বুলবুলি আক্তার বলেন, ‘যে হারে বাড়ছে জিনিসপাতির দাম, বাচ্চা-কাচ্চার কাপড় কিনবার পাবাইছি (পারছি) না। শীত যে হারে পড়বাইছে (পড়ছে) এগলা কীভাবে কিনব? প্যাট বাঁচামো না জিনিসই কিনব?’
শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্য না থাকার কথা তুলে ধরে সদরের নওদাবশ গ্রামের বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, ‘ধানের বিছন তুলে সাড়ে ৪০০ টাকা মজুরি পাব। ১৩০ টাকায় ২ কেজি চাল, ৭০ টাকার আলু, নুন, মরিচ, পেঁয়েজ, তরিতরকারি কিনতে শেষ হবে সেই টাকা।’
পাঁচ শতাধিক চরবেষ্টিত কুড়িগ্রামে মাঝ নভেম্বরেই তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এতে ভোগান্তি বাড়ছে কম আয়ের মানুষ।
হলোখানা ইউনিয়নের মাস্টারের হাট গ্রামের বাসিন্দা কুলসুম বেগম বলেন, ‘কাজ নাই, আয় রোজগার নাই। যেভাবে শীত নামছে, তাতে নতুন কাপড় কেনার সামর্থ্য নাই। বেশি শীত হলে খড়,পাতা জ্বালায় দিন কাটামো।’
স্বল্পমূল্যের শীতবস্ত্র বিক্রেতা ফজলু বলেন, ‘এবার শীতবস্ত্রের দাম ৩ গুণ বেড়েছে। গত বছর শীতের বেল (গাইট) কিনেছি পাঁচ-ছয় হাজার টাকায়। এবার সেই বেল (গাইট) কিনতে হয়েছে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা। মানুষের হাতে টাকা-পয়সা না থাকায় এবার বিক্রি কম।’
দাম কেন বাড়ল জানতে চাইলে আরেক ব্যবসায়ী মনু মিয়া বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ার কারণে গত বছরের তুলনায় এবার পরিবহন খরচ বেশি পড়ছে। প্রতি বেল বা গাইটে বাড়তি পাঁচ থেকে ৮ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। শীতের তীব্রতা যদি আরও বাড়ে তাহলে স্বল্পমূল্যের পোশাকের দামও বাড়ার আশঙ্কা আছে।
পোশাক ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘এবার শীত শুরু হলেও বিক্রি কম। কেননা একদিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে অন্যদিকে ভ্যানে করে মৌসুমে শীতের কাপড় ব্যবসায়ীর সংখ্যাও বাড়ছে। গ্রামের মানুষ আর বাজারে এসে শীতের পোশাক কিনতে চায় না।
‘গ্রামে গ্রামে ভ্যানে করে শীতের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। বাজারে পোশাক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে কেনার বদলে ভ্যানে ১০০ থেকে দুই শর মধ্যে কিনতে পারায় বাজারে আসার আগ্রহ কমে গেছে মানুষের।’
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রেজা শীতে অঞ্চলটির মানুষের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বেশি হওয়ায় চরাঞ্চল ও নদীভাঙন কবলিত মানুষের সংকট বেড়েছে। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালীরা শীতে অসহায় মানুষদের পাশে না দাঁড়ালে তাদের টেকা মুশকিল হয়ে যাবে।’
কুড়িগ্রামে শীত পরিস্থিতি নিয়ে জেলার রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক সুবল চন্দ্র বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উত্তরাঞ্চলে এবার আগাম শীত পড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে দিনে ও রাতে তাপমাত্রা কমতে শুরু করায় শীত অনভূত হচ্ছে। আগামীতে শীতের তীব্রতা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’