ঈশ্বরদীর চাঞ্চল্যকর ছাত্রলীগ কর্মী মনা হত্যার রহস্য উদঘাটন,আগ্নেয়াস্ত্রসহ ১২ জন গ্রেফতার
- আপডেট সময় : ০১:০৩:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯৯ বার পড়া হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টারঃ পাবনা জেলার পুলিশ সুপার জনাব মোঃ আকবর আলী মুনসী মহোদয়ের নির্দেশনায় এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ মাসুদ আলম এর সার্বিক তত্বাবধানে গোপন সংবাদ এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় ঈশ্বরদী থানা এবং ওসি ডিবি মোঃ এমরান মাহমুদ তুহিন এর নেতৃত্বে ডিবির যৌথ টিম হত্যাকান্ডের অন্যতম মূলহোতা এবং হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী আসামী অনিককে গ্রেফতার করে ।
অনিক এর দেওয়া তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা, গাজীপুর, কুষ্টিয়া এবং পাবনার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিলিং মিশনে সরাসরি অংশগ্রহণ কারী আসামী মানিক সহ আরও ০৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় মানিক ও অনিকের ভাড়া বাসায় (ঈশ্বরদী জিগাতলা এলাকা) অভিযান পরিচালনা করে ১ টি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র তৈরীর কারখানার সন্ধান সহ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম এবং ০৩ টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। আসামীদের দেওয়া তথ্য মতে, কারখানাটিতে অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরি করা হতো যা পরবর্তীতে বিভিন্ন অপরাধ সংগঠনে ব্যবহার এবং অস্ত্র ব্যবসা করা হতো। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত শ্রমিকদের এ্যাপ্রোন ও হেলমেট (নিকিম কোম্পানির) ঈশ্বরদী শহর হতে বাইপাস গামী পাকা রাস্তার পাশে আখ ক্ষেত হতে উদ্ধার করা হয়। আসামিদেরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জানা যায় যে, আসামিদের সাথে ভিকটিমের পরিবারের দীর্ঘদিনের শত্রুতা, চাঁদাবাজি এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে।
এক নিখুঁত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হচ্ছে মনা হত্যা। ঘটনার দিন আগে থেকেই মনা সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল মনিরুল এবং আরিফ। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাত ১০.১৫ ঘটিকার দিকে মোটরসাইকেলে করে মানিক, অনিক এবং অজ্ঞাত ১ জন এমপি মার্কেটে এসে ট্রাক-লড়ি শ্রমিকের ঘরে বসে থাকা অবস্থায় মনাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। ব্যাক আপ পার্টি হিসেবে ৫/৬ জন আসামী ঘটনাস্থলের আশেপাশে অবস্থান নেয়। এসময় কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ কারী ৩ জন মোটরসাইকেল করে নতুন হাটে যায় এবং সেখানে আগে থেকেই অবস্থানকারী আসামী শাহীন এর প্রাইভেট কারে উঠে ঈশ্বরদী বাইপাস রোডে আখ ক্ষেতে নিকিম কোম্পানির পোশাক এবং হেলমেট ফেলে দিয়ে জিগাতলার ভাড়া বাসায় ফেরত আসে। ঐ রাতেই আনুমানিক ১২.৩০ মি: এর দিকে মানিক, অনিক এবং শাহীন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে। পরবর্তীতে ঈশ্বরদী থানাধীন জয়নগর এলাকা হতে উক্ত প্রাইভেট কার টি উদ্ধার করা হয়।
উল্লেখ্য, নিহত ছাত্রলীগ কর্মী তাসফির আহম্মেদ মনা গত ইং- ১৭/০৬/২০২৩ তারিখে লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামস্থ এমপি মার্কেটে ইকবুলের অফিসে আড্ডা দেওয়া অবস্থায় রাত্রী আনুমানিক ১০:২০ ঘটিকার দিকে ০৩ জন অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের শ্রমিকদের এ্যাপ্রোন ও হেলমেট পরে মোটর সাইকেলযোগে এসে মনাকে ৫/৬ রাউন্ড গুলি করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করে দ্রুত পালিয়ে যায়। নৃশংস এই হত্যাকান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে নিহত ছাত্রলীগ কর্মী মনার মাতা মোছা: নাহিদা আক্তার লিপি বাদী হয়ে ১৯/০৬/ ২০২৩ ইং তারিখে ঈশ্বরদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
উদ্ধারকৃত আলামতের বর্নণাঃ
১। ঘটনাস্থলে পরে থাকা গুলির খোসা
২। দুইটি ওয়ান শুটার গান এবং এক রাউন্ড তাজা কার্তুজ।
৩। একটি বিদেশি পিস্তল এবং এক রাউন্ড তাজা গুলি।
৪।আগ্নেয়াস্ত্র তৈরীর বিপুল সরঞ্জামাদি
৫। হত্যাকান্ডের সময় আসামীদের ব্যবহৃত পোশাক এবং হেলমেট।
৬। একটি প্রাইভেট কার।
ধৃত আসামীদের নাম ঠিকানা:
১। মো: মানিক (৩৬), পিতা-ইউনুস, সাং-নতূন রুপপুর, ঈশ্বরদী।
২। মো: ফসিউল আলম অনিক (২৭), পিতা-মহিদুল হক, সাং-দিয়ার সাহাপুর, ঈশ্বরদী।
৩। মোঃ চমন (৩৮), পিতাঃ আতিয়ার, সাং-নতুন রুপপুর (রুপপুর মোড়া) থানাঃ ঈশ্বরদী।
৪। মোঃ শাহিন সরদার(২৮), পিতাঃ মোঃ আক্তার সরদার, সাং-চরসাহাপুর, থানাঃ ঈশ্বরদী।
৫। মোঃ রাজিব (৩০), পিতা- আজিজ, সাং- নতুন রুপপুর,থানাঃ ঈশ্বরদী।
৬। মোঃ আরিফুল ইসলাম(৩২), পিতা-মোঃ জহুরুল ইসলাম, সাং- চররুপপুর পশ্চিমপাড়া, ঈশ্বরদী।
৭। মো: অবুঝ (৩৭), পিতা- শাহাজান, সাং-সলিমপুর, ঈশ্বরদী।
৮। মনিরুল ইসলাম (৩৪), চড় রুপপুর, ঈশ্বরদী।
৯। মাহফুজুর রহমান @ কালা (৩৫), লক্ষ্মীকুন্ডা, ঈশ্বরদী।
১০। মোঃ লিখন @ ফারুক আহমেদ(৩৭), পিতা- বাবলু, সাং- চর রুপপুর, থানাঃ ঈশ্বরদী।
১১। সানোয়ার মালিথা (৪০), পিতা- মৃত গফুর মালিথা, সাং- চর রুপপুর (জিগাতলা),থানাঃ ঈশ্বরদী।
১২।মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান@রকি, পিতাঃ মোঃ এনাম বিশ্বাস, সাং- ফটু মার্কেট,থানাঃ ঈশ্বরদী।
আসামিদের পিসিপিআর:
১. আসামি অবুঝের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে পাঁচটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
২. আসামি মোঃ মাহফুজুর রহমান কালার বিরুদ্ধে ৪ টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
৩. আসামি মো: মানিকের বিরুদ্ধে ১১ টি মামলা রয়েছে।
৪. আসামি চমনের বিরুদ্ধে দশটি মামলা চলমান রয়েছে।
৫. আসামি ফসিউল আলম অনিকের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা চলমান রয়েছে।
৬. আসামি মোঃ রাজিবের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।