আবদুল্লাহ ইবন হুযাফাহ আস-সাহমী (রা) ছিলেন রাসুল (সা) এর খুব কাছের একজন সাহাবী, যিনি রাসুল (সা) এর বার্তাবাহক হিসেবে পরিচিত।
দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা) এর শাসনকাল। খলীফা উমর (রা) রোম সম্রাটের সাথে যুদ্ধের জন্য সৈন্য প্রেরন করলেন। সে সৈন্যবাহিনীতে আবদুল্লাহ ইবন হুযাফাহ (রা)ও ছিলেন। মুসলিম বাহিনীর যুদ্ধের ময়দানে আগমনের খবর যখন রোম সম্রাট জানতে পারল, তখন তার সৈনিকদের নির্দেশ দিল কোন মুসলিম যদি ধরা পড়ে তবে যেন জীবিত তার কাছে নিয়ে আসা হয়। কারন সম্রাট সাহাবাদের সম্মন্ধে জানত যে, তাঁরা তাদের বিশ্বাসে কত অটল ছিলেন, তাঁরা কিভাবে দ্বীনের জন্য, রাসুল (সা) এর জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতেন। তাই সে তাঁদের সাথে কথা বলার জন্য আগ্রহী ছিল।
আল্লাহ ইচ্ছা করলেন, আবদুল্লাহ ইবন হুযাফাহ (রা) ধরা পড়বেন। তো ধরা পড়ার পর তাঁকে সম্রাটের সম্মুখে নিয়ে আসা হল। সম্রাট আবদুল্লাহ'র দিকে কতসময় তাকিয়ে তাঁকে দেখল, তারপর বলল, 'আমি তোমাকে একটা প্রস্তাব করছি।'
.
আবদুল্লাহ : কি প্রস্তাব?
সম্রাট : তুমি যদি খ্রীস্ট ধর্ম গ্রহন কর তবে তোমাকে আমি ছেড়ে দিব আর তোমাকে সম্মানের সাথে এখানে বাস করতে দিব।
আবদুল্লাহ : তোমার এই প্রস্তাব থেকে বরং মৃত্যুই আমার কাছে হাজার গুন পছন্দনীয়।
সম্রাট : বুঝতে পারছি, তোমার অনেক সাহস আছে। যাই হোক, যদি তুমি আমার প্রস্তাব মেনে নাও, তবে তোমাকে আমার ক্ষমতার অংশীদার করব এবং যথেষ্ট পরিমান সম্পদের অধিকারী করব।
.
আবদুল্লাহ : (তাঁর বাঁধনের শিকল নাড়িয়ে) আল্লাহর শপথ! যদি তুমি আমাকে তোমার সকল ক্ষমতা আর ধন দৌলত দাও, তবুও আমি এক পলকের জন্যও মোহাম্মাদ (সা) এর দ্বীন ত্যাগ করবনা।
.
সম্রাট : তাহলে, আমি তোমাকে হত্যা করব।
আবদুল্লাহ : তোমার যা ইচ্ছা হয় কর।
সম্রাট আবদুল্লাহ (রা) কে দেওয়ালের সাথে বেঁধে রাখতে বলল। তারপর তার তীরন্দাজকে বলল, ওর পায়ের কাছে, হাতের কাছে তীর ছুড়ে মৃত্যুভয় দেখানোর জন্য। তীরন্দাজ তাই করল, কিন্তু আবদুল্লাহ (রা) ছিলেন অনড়। সম্রাট আব্দুল্লাহ'র এই দৃঢ়তা দেখে হতাশ হয়ে গেল। সে আবদুল্লাহ (রা) কে দেওয়াল থেকে নামিয়ে আনল।
.
সম্রাট তখন একটি বড় পাত্রে গরম ফুটন্ত তেল আনার নির্দেশ দিল। তারপর অন্য দুইজন মুসলিম বন্দীকে সেই ফুটন্ত তেলে ছাড়তে বলল। তখন আবদুল্লাহ (রা) সেখানেই ছিলেন। দুই মুসলিম বন্দীকে ফুটন্ত তেলে যখন ছাড়া হল, বন্দীদের শরীর ঝলসে মাংস গলে কতসময় পরে হাড় ভেসে উঠল। সম্রাট তখন আবদুল্লাহকে আবারো খ্রীস্ট ধর্ম গ্রহন করার জন্য বলল, তা না হলে তাকেও এভাবে নিঃশেষ করা হবে বলে হুমকি দিল। এটা ছিল আবদুল্লাহ (রা) এর জন্য এক চরম ঈমানী অগ্নিপরীক্ষা। কিন্তু সেই মূহুর্তেও আবদুল্লাহ (রা) তাঁর ঈমানের উপর ছিলেন কঠোর। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলেন। সম্রাট হাল ছেড়ে দিল আর হুকুম করল তাঁকে ফুটন্ত তেলের পাত্রে ফেলে দিতে।
.
যখন আবদুল্লাহকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তাঁর চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। সেটা দেখে সম্রাট তো খুশী। এইবার কাজ হয়েছে। তাই সে নির্দেশ দিল তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে।
সম্রাট : তো আবদুল্লাহ, এবার নিশ্চয়ই তুমি আমার প্রস্তাব গ্রহন করবে?
আবদুল্লাহ : না।
.
সম্রাট: (পুরোপুরি অধৈর্য হয়ে) তবে কেন তুমি কাদঁছিলে?
আবদুল্লাহ : আমি কাদঁছিলাম, কারন আমি মনে মনে ভাবলাম, এখন তো আমি আমার এই জীবন আল্লাহর পথে উৎসর্গ করছি, কিন্তু এটা কি যথেষ্ট? আল্লাহ আমাকে কত নিয়ামত দিয়েছেন তার তুলনায় মাত্র একটা জীবন উৎসর্গ করব? আমি আশা করছিলাম, হায়, আমার শরীরে যত লোম আছে ঠিক সেই পরিমান জীবন যদি আমার থাকত, তবে একটার পর একটা এভাবে আল্লাহ'র পথে উৎসর্গ করতাম।
.
সম্রাট এ কথা শুনে বিস্ময়ের চুড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেল। সে তখন আবদুল্লাহকে মুক্ত করে দেওয়ার কথা বলল, একটা শর্তে যদি সে তার কপালে চুমু খায়। আবদুল্লাহ (রা) বললেন, না, তবে যদি সকল মুসলিম বন্দীকে ছেড়ে দেয়া হয়, তবেই সে কপালে চুমু খাবে। সম্রাট মেনে নিল। এভাবে সকল মুসলিম সৈন্যদের মুক্ত করে নিয়ে আবদুল্লাহ (রা) মদীনায় ফিরে গেলেন।
আর উমর (রা)কে এই ঘটনাটি জানানো হলে তিনি বলেন : প্রত্যেক মুসলিমের উপর আবশ্যক হল ইবনে হুযাফাহ (রা) এর মাথায় চুম্বন করা। তাই তিনি অগ্রসর হয়ে ইবনে হুযাফাহর মাথায় চুম্বন করলেন।
.
সুত্র : উসদুল গাবা:৩/২১২
আসহাবু হাওলার রাসুল:২/২৩৮
সিয়ারে আলামুল নুবালা :২/১৫
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী। সাবেক ইমাম ও খতিব কদমতলী হযরত দরিয়া শাহ্ (রহ.) মাজার জামে মসজিদ সিলেট। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জকিগঞ্জ উপজেলা সচেতন নাগরিক ফোরাম সিলেট।
Board of Directors of ABC National News : Chief Editor and Advisor-Adv Monir Uddin, Ex.Editor and Advisor-Lion Eng.Ashraful Islam, Ex.Editor-Lion Dr.Mana and Lion Palash, Acting Editor-Tawhid Sarwar, News Editor-Aftab Parvez,News Sub Editor-Pojirul Islam and
Co-Editor Siam and Neon.
Dhaka Office : 67/4,5 Chaya Neer, Shanti Bagh Dhaka 1212.
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার