ঈদের আগের দিন বন বিভাগের জমি থেকে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

- আপডেট সময় : ০৭:০৬:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫ ৩৮ বার পড়া হয়েছে

গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় বন বিভাগের জমি উদ্ধার করতে ব্যাপক উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকাল পর্যন্ত চলা এ অভিযানে শতাধিক কাঁচা-পাকা অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
ঢাকা বন বিভাগ ও কালিয়াকৈর উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আহমেদ। তবে ঈদের আগের দিন উচ্ছেদ করায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন, সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) সামসুল আলম আরিফিন, সহকারী বন সংরক্ষক ও রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহিদুল হাসান শাকিলসহ বন বিভাগের কর্মকর্তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে স্থানীয় প্রশাসন ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
বনবিভাগ সূত্র জানায়, চন্দ্রা রেঞ্জের আওতাধীন সিনাবহ ও বাগাম্বর এলাকায় অবৈধ দখলদারদেরকে সড়ে যাবার জন্য নোটিশ দিয়ে মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে তারা কর্ণপাত না করায় রোববার বেলা ১১টায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। উচ্ছেদ অভিযান শুরুর দিকে বাগাম্বর এলাকায় লোকজন বাধা প্রয়োগ করে। এক পর্যায়ে দখলদার এলাকাবাসী ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বনকর্মীরা কয়েকজনকে আটক করে পরে ছেড়ে দেয়। ইতিমধ্যেই ৪টি বুলডোজার দিয়ে শতাধিক ঘরবাড়ি গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সিনাবহ বাগাম্বর এলাকায় কয়েক বছর ধরে অসংখ্য পরিবার ও ব্যবসায়ী বসতি স্থাপন করেছিল। এ নিয়ে প্রশাসনের একাধিক সতর্কতা উপেক্ষা করে তারা জমি দখল অব্যাহত রাখে।
অভিযোগ রয়েছে, কিছু প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এ দখলবাজি চলছিল। উচ্ছেদ অভিযানের সময় স্থানীয় উত্তেজিত জনতার বাধার সম্মুখীন হন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা বন বিভাগের কর্মী মিনহাজকে আক্রমণ করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
বাগাম্বর এলাকার কালাম জানান, ১০-১২ বছর আগে আমরা এখানে বাড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করে আসছি। আজকে ঈদের আগের দিন হঠাৎ করে বন বিভাগের লোকজন নির্মমভাবে আমাদের বাড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিল আমরা এখন যাব কোথায়?
একই এলাকার আসমা বেগম বলেন, আমরা ঘর বাড়ি করার সময় বন বিভাগের লোকদের সঙ্গে আলোচনা করেই ঘর তৈরি করেছি। আজকে হঠাৎ আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে দিয়ে ঈদের আনন্দ কেড়ে নিল।
বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) সামসুল আলম আরিফিন জানান, সিনাবহ বাগাম্বর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বন বিভাগের জমি দখল করে বসবাস ও ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছিল। বারবার সতর্ক করা হলেও দখলদাররা স্থান ত্যাগ করেনি। ফলে প্রশাসনের কঠোর নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে শতাধিক দোকান, বসতবাড়ি ও অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) সামসুল আলম আরিফিন বলেন, অবৈধ দখলদারদের সরাতে গেলে কিছু লোক বাধা দেয়। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় অভিযান সম্পন্ন করি। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বন বিভাগের ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন জানান, উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে বন বিভাগের জমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এই জমি পুনরায় দখল না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে দখল পুনরায় রোধ করতে সীমানা নির্ধারণসহ নজরদারি বাড়ানো হবে। পাশাপাশি দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বন বিভাগের জমি রক্ষায় এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে। জনস্বার্থে সরকারি জমি দখলমুক্ত রাখতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।