মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী ওলামা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মফিজুর এখন ভিক্ষুক
- আপডেট সময় : ১২:৩৫:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ অক্টোবর ২০২২ ৬৮ বার পড়া হয়েছে
নূরুল হক, মণিরামপুর প্রতিনিধি:
মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী ওলামা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মোঃ মফিজুর রহমান (৬৪) এখন ভিক্ষাবৃত্তি করেন। ভাল ব্যবসায়ী হিসেবে তার খুব সুনাম ছিল। মণিরামপুর পৌরশহরে একটা ফার্ণিচারের দোকান ছিল। কিন্তু রাজনীতি ও শাররীক অসূস্থতার কারণে সব কিছু হারিয়ে অর্থনৈতিক দেওলিয়া সে এখন ভিক্ষাবৃত্তি করে। গ্রামে-গ্রামে এবং হাটে-বাজারে তিনি এখন ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছেন।
জানাযায়, উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে তার বাড়ী। কয়েক বছর আগেও মণিরামপুর পৌরশহরের উত্তর মাথায় তার ‘শোভা এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ফার্ণিচারের ব্যবসা ছিল। তার ব্যবসার অবস্থাও খুব ভাল ছিল। তাছাড়া ভাল একজন ফার্ণিচার ব্যবসায়ী হিসেবে তার যতেষ্ঠ সুনাম ছিল। কিন্তু রাজনীতিই তার কাল হয়ে দাড়ালো। কারণ ব্যাক্তি জীবনে তিনি বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শের একজন নিবেদিত সৈনিক। তাইতো ব্যবসার পাশাপাশি উপজেলা রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন একনিষ্ঠা ভাবে। নেতৃত্ব দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন। নেতৃত্বে দিতে গিয়ে নিজের ব্যবসা-বানিজ্যের দিকে নজর না দিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায়। সু-সংগঠিত করেছেন দলকে। ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রসংশনীয় অবদান রেখেছেন। দলভক্ত হাফেজ মফিজুর রহমান নিজ দলকে ক্ষমতায় আনতে গিয়ে ধীরে-ধীরে তার ব্যবসা-বানিজ্যের ভাটা পড়ে। কমতে থাকে ব্যবসার পরিধি। পরবর্তীতে ব্যবসায় ঘুরে দাড়াবার জন্য তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা সুন্দলপুর বাজারে সরিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানেও সাফল্য না পেয়ে সর্বশেষ তিনি নিজ এলাকা বালিয়াডাঙ্গা কলেজ মোড়ে তার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানটি স্থানান্তর করেন। রাজনীতির পাশাপাশি আবার নতুন করে শুরু করেন ব্যবসা। কিন্তু বিধি বাম সেটাও ধরে রাখতে পারলেন না। ধীরে-ধীরে হাফেজ মফিজ শাররীক ভাবে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লেন। পড়েন হার্টঅ্যাটাকে কবলে। হার্টঅ্যাটাক জনিত কারণে প্যারালাইস হয়ে পড়লেন। তার সন্তানেরা সহায় সম্পদ বিক্রি করেও তাকে সম্পূর্ন সুস্থ করে তুলতে পারলেন না। হাফেজ মফিজ এখন কিছুটা সুস্থ হলেও কোন কাজকর্ম ঠিকমত করতে পারেন না। সন্তানদের নিষেধ সত্বেও তিনি এখন ভিক্ষা ঝুলি নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছেন। তার ৫ সন্তান। ২ ছেলে ও ৩ কন্যা। বড় ছেলে ছোট খাটো ব্যবসা করেন এব্ং ছোট ছেলে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে রোজগারের পথ বেছে নিয়েছেন। ৩ কন্যার বিয়েসাদীও দিয়ে দিয়েছেন।
তিনি একজন শিক্ষানুরাগীও ব্যাক্তিও বটে। প্রথম জীবনে মণিরামপুরের ঐতিহ্যবাহি মাদানী নগর মাদরাসায় শিক্ষাকতা করেছেন। স্থানীয় বালিয়াডাঙ্গা খানপুর মহিলা দাখিল মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন তিনি। ওই মাদরাসার সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন দীর্ঘাদন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস সব কিছু হারিয়ে তিনি এখন নিঃস প্রায়। দিন চলে তার ভিক্ষাবৃত্তি করে।
হাফেজ মফিজুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা জানান, অসুস্থ্যতার কারণে তার মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। উনি কখন কি করে তা বুঝে উঠতে সমস্যা হয়। বাইরে-বাইরে গিয়ে মানুষের কাছে সাহায্য চাওয়ার বিষয়টি আমরা শুনেছি। আমাদের শত নিষেধ সত্বেও তিনি বাইরে বেরিয়ে পড়েন। কোন ভাবেই তাকে বাড়ীতে আটকিয়ে রাখা যায় না। জোর করে বাড়ীতে রাখলে বেশি অসুস্থ হতে পারে, তাই তাকে আমরা এখন আর বাইরে বের হতে বাধা দেই না।
হাফেজ মফিজুর রহমানের বিষয়ে জানতে চাইলে আমাদের প্রতিনিধি সাংবাদিক নূরুল হককে- স্থানীয় খানপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মিলন বলেন, হাফেজ মফিজুর রহমান আওয়ামী পরিবারের অত্যন্ত পরিশ্রমী নেতা। উপজেলা ওলামা লীগের পাশাপাশি তিনি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান আমাদের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আছেন তিনি। সারাজীবন তিনি সততার সঙ্গে জীবন পরিচালনা করেছেন। কিন্তু শেষ বয়সের দিকে আজ তার এই অবস্থা দেখে খুবই হতাস লাগে। একই বক্তব্য প্রদান করেন উপজেলা ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মোঃ ওলিয়ার রহমান।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র অধ্যক্ষ আলহাজ্জ্ব কাজী মাহমুদুল হাসান বলেন, হাফেজ মফিজুর রহমান একজন খাটি দল পাগল মানুষ। ইতোপূর্বে তাকে আমার সাধ্যমত সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। তার বর্তমানে তার শাররীক অবস্থা বেশি ভাল না। একদিনেই মফিজ আমার কাছে ৩ বার টাকা চাইতে আসছে। প্রতিবার বারেই আমি কিছু না কিছু তাকে দিয়ে থাকি। তার মাথাটাও ভাল কাজ করে না। তাই কিছুক্ষন পূর্বের কথা তার কিছু মনে থাকে না। তার জন্য ভাল কিছু করার চেষ্টা করছি। আশাকরি অচিরেই সেটা সম্ভব হবে।
মোঃ নূরুল হক
মণিরামপুর, যশোর।
মোবাইল:-০১৭২১৩৯০২০৮
তারিখ-২০/১০/২০২২ইং।