মণিরামপুরে সেনাবাহিনীর ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে টাকা আত্মসাৎ মামলায় মাদরাসা শিক্ষক জেলহাজতে
- আপডেট সময় : ১১:৫৫:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ অক্টোবর ২০২২ ৬১ বার পড়া হয়েছে
নূরুল হক, মণিরামপুর প্রতিনিধি:
যশোরের মণিরামপুরে সেনাবাহিনীতে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে ১০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের মূলহোতা মোঃ ওবাইদুল্লাহ এখন জেলহাজতে। সে উপজেলার চালুয়াহাটি গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তার মোড়লের পুত্র এবং মণিরামপুর ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসার আরবী প্রভাষক। ভুক্তভোগী বিচারের আসায় আদালতে মামলা করলে বিজ্ঞ বিচারক ওবাইদুল্লাহকে আটকপূর্বক জেলহাজতে রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। এদিকে মাদরাসা পরিচালনা পরিষদ তাকে সাময়িক বরখাস্তসহ কারণ দর্শনোর নোটিশ প্রদান করেছেন।
মামলার বিররণ ও বাদী সুত্রে জানা যায়, উপজেলার চালুয়াহাটি গ্রামের মৃত. আব্দুস সাত্তার মোড়লের পুত্র মোঃ ওবাইদুল্লাহ। তিনি মণিরামপুর ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসার আরবী প্রভাষক পদে শিক্ষাকতা করেন। সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিস সহকারী পদে চাকুরী পাইয়ে দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে মণিরামপুর পৌর এলাকার বিজয়রামপুর গ্রামের মৃত এককার আলী গাজীর পুত্র আজিবর রহমানের কাছ থেকে সর্বমোট ১০ লক্ষ ৫০ টাকা হাতিয়ে নেই। সহজ-সরল আজিবর তার পুত্র জাকারিয়া হোসেনের সরকারী চাকুরী হবে এজন্য ওবাইদুল্লাহর মিষ্টি কথায় রাজি হয়ে তার সকল শর্ত মেনে নেই। শর্ত হয় যে, চাকুরীর আগে অল্প কিছু টাকা দিতে হবে, সাথে ব্যাংকের স্বক্ষরযুক্ত চেক ও একটি চুক্তিনামা। নিয়োগপত্র হাতে পেলে-যোগদানের পূর্বেই টাকা পরিশোধ করতে হবে। সে মোতাবেক ওবাইদুল্লাহ নগদ ৯৫ হাজার টাকা গ্রহণসহ রূপালী ব্যাংক, মণিরামপুর শাখার এসবিএলটি-৮৯৮৪৮৯৯ নং-এর স্বক্ষরযুক্ত একটি সাদা পাতা ও ৩’শ টাকার সাদা নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে আজিবরের স্বক্ষর রেখে দেই। ওবাইদুল্লাহ ওয়াদা করে আগামী ২০ দিনের মধ্যে আজিবরের পুত্র জাকারিয়া হোসেনের সেনাবাহিনীর অফিস সহকারী পদে নিয়োগপত্র এনে দিবে। কিন্তু নিদিষ্ট সময় অতিবাহিত হলেও ওবাইদুল্লাহ চাকুরীর ব্যবস্থা না করলে তার কাছে ষ্ট্যাম্প, চেক ও নগদ ৯৫ হাজার টাকা ফেরত চাই ভুক্তভোগী আজিবর। কিন্তু কোন কিছু ফেরত না দিয়ে প্রতারক ওবাইদুল্লাহ ৮ সেপ্টেম্বর ‘ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর’ পদের একটি স্থায়ী নিয়োগপত্র নিয়ে আজিবরের কাছে এসে বলে আপনার ছেলের চাকুরী হয়েছে এবং চুক্তিমোতাবেক আমার টাকা পরিশোধ করেন। তার কথা বিশ্বাস করে আজিবর ওবাইদুল্লাহর কথামত (বিকাশে)-০১৯৮৮-৩৯০৬৮০, ০১৮১১-৮৯৩২৬২ এবং ০১৯১১-২৫১০১২ মোবাইল নম্বারে পুনরায় পর্যায়ক্রমে ৯ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। কিন্তু নিয়োগপত্র নিয়ে নিদিষ্ট স্থানে ওই পদে যোগদান করতে গেলে নিয়োগপত্রটি ভুয়া হিসেবে প্রমানিত হয়। ছেলের চাকুরী না পেয়ে আজিবর ওবাইদুল্লাহর কাছে টাকা ফেরত চাইলেও কোন টাকা পরিশোধ না করে বরং তাকেই বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। কোন উপায়ন্ত না পেয়ে ভুক্তভোগী আজিবর টাকা ফেরতসহ প্রতারক ওবাইদুল্লাহর বিচারের আশায় ২৬ সেপ্টম্বর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী (মণিরামপর) যশোর-এর আদালতে ৪০৬/৪২০ ধারা মোতাবেক একটি মামলা করেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়ে ওবাইদুল্লাহর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইসুকরণসহ আটকের নির্দেশ প্রদান করেন। যার মামলা নং-সিআর-৬৮৯/২২। প্রতারক ওবাইদুল্লাহ গত ১৯ সেপ্টম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করলে-বিজ্ঞ বিচারক জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে প্ররণের নির্দেশ প্রদান করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী আজিবর রহমান বলেন, ছেলের চাকুরী হয়েছে জেনে আমার শেষ সম্বল বিক্রি করে ওবাইদুল্লাহকে টাকা দিয়েছি। আমার টাকা ফেরতসহ তার বিচারের জন্য আদালতে মামলা করেছি।
এ বিষয়ে ওবাইদুল্লাহর পরিবারের সদস্যদের কাছে বারবার যোগাযোগ করলেও সাংবাদিকদের কাছে তারার কোন কথা বলতে অস্বীকার করেন।
প্রতারক ওবাইদুল্লাহর বিষয়ে জানতে চাইলে মণিরামপুর ফাজিল মাদরাসার পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি অ্যাড. বশির আহমেদ খান বলেন, আমারা তার প্রতারনার বিষয়ে অবগত হয়েছি। যেহেতু সে জেলহাজতে আছে তাই ২২/১০/২০২২ ইং তারিখে পরিচালনা পরিষদ সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে সাময়িক বরখাস্তসহ কারণ দর্শনোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।