ব্যাংকের উর্দ্ধতন কর্মকর্তার পরিচয়ে মাদ্রাসাসহ প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন
- আপডেট সময় : ১১:১৩:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৫০ বার পড়া হয়েছে
নিজেকে পরিচয় দিতেন একটি ব্যাংকের এডিজি হিসেবে। থাকেন ঢাকার নামকরা এলাকায়। নিজের ব্যক্তিগত দামি গাড়ি আর মন্ত্রী পাড়ার বড় বাবুদের সঙ্গ ছাড়া তার চলে না। মন্ত্রী পাড়ায় ব্যাস্ত থাকেন বলেই গ্রামের বাড়িতে খুব বেশী আসতে পারেন না বলেই সহজ সরল এলাকা বাসীর কাছে মনগড়া বুলি আওড়াতেন ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের চর সলিমপুর সরদারপাড়া গ্রামের মৃত আজিজুলের ছেলে মো: মাহবুবুল আলম।
তার এই উচ্চবিলাসী জীবনযাপন আর সমাজের পিছিয়েপরা বেকারদের কর্মদানের তৎপরতার পাশপাশি সামাজিক এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর উন্নতির জন্য নজরদারি সমাজের সরল মানুষ গুলোর মনে বিশ্বাসের জায়গা করে নেয়। তবে প্রথমে এসব উন্নয়ন বিনা টাকায় করার কথা থাকলেও ধীরে ধীরে তা টাকার বিনিময়ে হতে শুরু করে। গ্রামের সরল মানুষ গুলো তাকে বিশ্বাস করে তাদের বৃহৎ স্বার্থে ঠকবাজ মাহাবুবুল আলমের হাতে তুলেদেন তাদের শেষ সম্বলটুকু। কিন্তু টাকা হাতে পেয়েই পাল্টেযায় মাহাবুবুল আলমের চেহারা। যোগাযোগ বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়ে লুকিয়ে পড়েন ঢাকাতে। উপকার প্রত্যাশীদের চেষ্ঠা আর পরিবারের সহযোগীতায় ভুক্তভোগীরা ঢাকায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন মাহবুবুল আলম কাজ করতেন একটি বেসরকারী ব্যাংকের বুথের সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে। কিন্তু নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ায় চাকরি থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার দীঘা কদিমপাড়া দারুল কুরআন মাদ্রাসা ও এতিম খানার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ভুক্তভোগী মাহমুদ হোসেন শাহজাহান সংবাদ সম্মেলনে তার লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমি গত ২০১৭ ইং সালে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় কদিমপাড়া দারুল কুরআন মাদ্রাসাটি করি। এবং অদ্যবধি পরিচালকসহ/ সম্পাদক এর দ্বায়িত্ব পালন করে আসছি। এমতাবস্থায় ২০২০ সালে আমাদের পার্শ্ববর্তি গ্রাম চরছলিমপুর সরদার পাড়া মোঃ মাহবুবুল আলমের সাথে সাক্ষাতে তার কৌশলয়াদি জানতেই সে মাদ্রাসা সম্পর্কে খবর নেন। আমি মাদ্রাসার দৈন্যতার কথা বলতেই সে আমাকে মাদ্রসার ভবন নির্মানের অফার করেন। এটি মাদ্রাসার জন্য উত্তম সিদ্ধান্ত তবে কমিটির অন্য সদস্যদের সাথে কথা বলে তাকে নিশ্চিত করব বলে ফিরে আসি। কমিটির সদস্যদের সাথে আলাপ শেষে তাকে সম্মতির কথা জানালে সে বলে যেহেতু পাঁচতলা ভবন হবে সেখানে কিছু খরচার ব্যাপার আছে । আপনারা কিছুদিলে আমি নিজেও তার সাথে কিছু লাগিয়ে ভবনটির ব্যবস্থা করতাম। তার এমন সরল সম্মতিতে আমরা অত্র মাদ্রাসা থেকে তিন মাসের সময় নিয়ে তাকে মোট ৭,২০,০০০/-(সাত লক্ষ বিশ হাজার) টাকা পরিশোধ করি। কিন্তু এই টাকা হাতে পাওয়ার পর থেকে সে আমাদের সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আমরা তার পরিবার এবং এলাকার মান্যবর লোকদের সাথে আলাপ করেও কোন সুরাহা পাইনি। দীর্ঘদিনপর হঠাৎ একদিন তাকে ফোনে পেলে সে উক্ত কাজের জন্য আমার থেকে একটি ফাকা চেক দাবি করেন সেই সাথে ঢাকার শ্যামলীতে একটি ব্যাংকের শাখায় মাদ্রাসার নামে নতুন হিসাব খুলতে হবে মর্মে আমাকে ডেকে পাঠান। আমি সরল মনে সেখানে গেলে সে ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানের নামে না খুলে আমার নিজের নামে হিসাব খুলে দেন । এতে আমার সন্দেহ প্রকট হতে থাকলে আমি অত্র প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের থেকে তার সম্পর্কে খবর নিলে জানতে পারি যে অভিযুক্ত মো: মাহবুবুল আলম এই ব্যাংকের একটি বুথের নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরী করতেন। তবে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগের কারনে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে অনেক আগেই। এমন খবর পেয়ে তাকে না জানিয়ে আমি দ্রুত ঢাকা ত্যাগ করি এবং আমার মাদ্রাসা কমিটিকে বিষয়গুলো অবহিত করলে তারা মাহবুবুল আলমের পরিবারকে নিয়ে একটি শালিস করলে সেখানে তার পরিবার তার ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল জমাপূর্বক নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে টাকা পরিশোধ করে মোটর সাইকেলটি ফেরৎ নিবেন মর্মে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও সেই সময় অতিবাহিত হলেও এখনও টাকা না দিয়ে নানা টাল বাহানাসহ উল্টা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানি করছে বলেও জানান তারা।
একই সম্মেলনে উপজেলার আওতাপাড়া, বাঁশেরবাদা, এলাকার বি. এম, তোফায়েল আহম্মেদ (তুফান) মো: মাহবুবুল আলম প্রতারক দাবি করে বলেন, তার থেকে জমি বিক্রয় বাবদ ১৭/০৬/২০১৬ ইং তারিখে ১০,৬০,০০০/- (দশ লক্ষ ষাট হাজার) টাকা বায়না চুক্তিনামা করে। চুক্তি নামার পর থেকে আজ অবধি সে আমাকে টাকাও জমা দেননি আবার আমাকে উল্লেখিত জমিটাও রেজিষ্ট্রিকরে দেন নাই।
তবে এসময় উপস্থিত এলাকাবাসী জানান, মাদ্রাসায় শালিসের পর থেকে মাহবুবুল আলমের কাছে টাকা পাবে এমন অনেকেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে। তবে সবার সাথে কথা বলে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি মাববুবুল আলম প্রায় অর্ধকোটি টাকারও বেশী আত্মসাৎ করেছে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। আর সেটা এতদিন সবাইকে আওয়ামীলীগের বড়বড় নেতা আর পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কথা বলে ভয় দেখিয়ে সবাইকে দমিয়ে রেখেছিলো । যাহা এখন প্রকাশ হচ্ছে। জনগণ এখন তাদের পাওনা টাকা আদায় করতে আসছে।
তবে এসব অভিযোগের সত্যতা জানতে মুঠোফোনে অভিযুক্ত মাহবুব আলমের সঙ্গে কথা হলে তিনি টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি মহল চক্রান্ত করছে। রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা করছে। মাদ্রাসা পরিচালক শাহজাহান ও তার ছেলে দলবল নিয়ে এসে টাকা আত্মসাতের কথা বলে আমার বাড়ি ভাংচুর ও আমার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। আমি এ ব্যাপারে কোর্টে মামলা করেছি।
ঈশ্বরদী থানার পরিদর্শক(তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসা কমিটি ও ভুক্তভোগীরা যদি লিখিত অভিযোগ দেয় তবে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। থানায় একাধিকবার এসে মামলা নেওয়া হয়নি অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, মামলা না নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। মামলার ব্যাপারে তাদের সঙ্গেও আমার কোন কথা হয়নি। তারা আসলে বিষয়টি বিস্তারিত শুনে তদন্ত করা হবে।