বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিবেশ সৃষ্টিতে জাসদের দায়! মকবুল তালুকদার
- আপডেট সময় : ১২:০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০২২ ৬৬ বার পড়া হয়েছে
আফতাব পারভেজ, ডেস্ক নিউজ
১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর স্বাধীন বাংলাদেশে ভ্রান্ত মতাদর্শ ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের শ্লোগান মুখে নিয়ে ৭১-এর পরাজিত শক্তির সহায়তায় এবং পুজিবাদী চক্রশক্তির আর্থিক প্রনোদনায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল(জাসদ) রাজনৈতিক দল হিসাবে আভির্ভূত হয়। জন্মলগ্নে মেজর জলিল এবং আসম আব্দুর রব যথাক্রমে আহবায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। প্রসঙ্গগত, জাসদ নেতৃবৃন্দ মুজিববাদ থেকে আদর্শচ্যুৎ হয়ে এবং কান্ড-জ্ঞানহীন ভাবে এক বিজ্ঞানের পুর্বে আরো একটি বিজ্ঞান যুক্ত করে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে ভুয়া মতাদর্শ বিস্তারের চেষ্টা করে। সুপ্রিয় পাঠকবৃন্ধ, আমরা জেনে এসেছি, সমাজতন্ত্র বা Socialism, it self a science বা সমাজতন্ত্র হলো বিজ্ঞান ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্হা। তাই এক বিজ্ঞানের পুর্বে আরো একটি বিজ্ঞান যুক্ত করে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মতাদর্শটি ভূল বলে সমাজ বিজ্ঞানীরা মনে করেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদের আবির্ভাব এবং বিস্তার যেমন রহস্যজনক, ঠিক তেমনি চমকপ্রদ।রাজনৈতিক বিশ্লেষকগন মনে করেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রনীত “মুজিববাদ”মতাদর্শে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশেকে সোনার বাংলায় পরিনত করার জন্য সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচি অন্তর্ভুক্তি অত্যাবশ্যক ছিল।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সমাজতন্ত্রের কট্টর পন্থা শ্রেনী শত্রু খতমের পরিবর্তে গনতান্তিক প্রক্রিয়ায় শ্রেনী বৈষম্য দূর করে ও ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যক্তি জীবনে বা ব্যক্তি পর্যায়ে চর্চায় রেখে অসাম্প্রদীয়িক চেতনা তথা বাঙালি জাতীয়তাবাদকে জাগ্রত রেখে শোষনহীন সমাজ ব্যবস্হা তথা সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। তিনি গ্রামে গ্রামে কৃষি সমবায় ও কুটির শিল্প স্হাপন, গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রতিটি জোতদার কৃষক পরিবারের জন্য অনুর্ধ ১০০ বিঘা জমির সিলিং বেঁধে দিয়ে বাদবাকী জমি ভূমিহীনদের মাঝে বিতরন করে উৎপাদন বৃদ্ধির বাস্তবমূখি কর্মসূচি গ্রহন করেছিলেন। দ্বিতীয়ত: দেশের ব্যাংক, বীমা, পাট, বস্ত্র, চিনি ও জাহাজ শিল্পসহ সব ভারি শিল্পকে জাতীয়করণের ঘোষণার মাধ্যমে সম্পদের সুষম বন্টন ও মালিক-শ্রমিকের প্রাপ্য হিস্যা প্রাপ্তি নিশ্চিত করে বাংলাদেশকে “মুজিববাদ”দর্শনের আদর্শে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরাজিত শক্তির প্রভু সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র সমুহ বঙ্গবন্ধুর জনগনমূখী কর্মসূচীকে ভন্ডুল করার মানষে এবং স্বাধীনতার অর্জন বিনষ্ট বা বিধ্বস্ত করার লক্ষ্যেই আর্থিক প্রনোদনার মাধ্যমে জাসদের জন্ম ঘটায়।
ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব
পনেরোই আগস্টের বিয়োগান্ত ঘটনার আগে জাসদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বিপ্লব নয় বরন্চ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের হঠকারী স্লোগানের আড়ালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে সরকার উৎখাতের প্রেক্ষাপট তৈরি করাই ছিল জাসদ গঠনের মূল লক্ষ্য। তাই যাত্রা শুরুর পর থেকেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ার বিপরীতে জাসদ প্রকাশ্যে অনিয়মতান্ত্রিক/অগনতান্ত্রিক এবং বিশৃংখল আন্দোলনের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরে বাধা সৃষ্টি করে বা কাংখিত অর্থনৈতিক মুক্তির প্রচেষ্টায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭৪ সালের গোড়ার দিকে জাসদ সাধারণ ধর্মঘটের নামে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে বোমা বিস্ফোরণ,গুলি ও আগুন সন্ত্রাসশে মাধ্যমে দেশে ভয়াবহ অরাজকতা সৃষ্টির প্রয়াস চালায়। অন্যদিকে ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ জাসদ কর্তৃক আয়োজিত পল্টন ময়দানের সমাবেশে মেজর জলিল ও আ স ম আবদুর রব জ্বালাময়ী ও উসকানিমূলক বক্তৃতা দিয়ে সমাবেশে উপস্হিত ছাএ জনতাকে উত্তেজিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর বাড়ি ঘেরাও করে দলটিকে আন্ডার গ্রাউন্ডে নিয়ে যায় এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির করার পথ রুদ্ধ করে ফেলে। এক পর্যায়ে জাসদ ৭১-এর পরাজিত রাজাকার-আলবদর, আলশামসকে সংগে নিয়ে গনবাহিনী গঠন করে এবং মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান “জয়বাংলা”কে বিসর্জন দিয়ে পরাজিত শক্তির “জিন্দাবাদ” দর্শনে পুন:দিক্ষা গ্রহন করে দেশব্যাপী নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে জাসদ মরিয়া হয়ে ওঠে।অতপর, জাসদ কর্তৃক গঠিত “গনবাহিনী” স্বাধীনতার পক্ষ শক্তির লোকজন সহ মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, চাঁদাবাজি, ব্যাংক ডাকাতি, পাটের গুদামে আগুন ইত্যাদি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে এক ধরনের ভয়াবহ অরাজতা সৃষ্টি করে। এতে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। তাদের একের পর এক নাশকতামূলক কার্যক্রমে দেশের আইন শৃংখলা পরিস্হিতি দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে।উক্ত সময়ে বিভিন্ন সংবাদ পএে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, একদিকে জাসদের গণবাহিনী এবং অন্যদিকে স্বাধীনতাবিরোধী কথিত উগ্র বামপন্থী চক্র মিলে প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় হাটবাজার, অর্ধশতাধিক ব্যাংক, প্রায় দুই ডজন থানা ফাঁড়ি লুট করে। এর পাশাপাশি উক্ত চক্র দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করতে ব্যাপক নাশকতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রসংগত, ১৯৭৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সোভিয়েত রাশিয়া কর্তৃক নির্মিত ঘোড়াশাল সার কারখানার কন্ট্রোল রুমটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের মাধ্যমে উড়িয়ে দেয়। এর ফলে প্রায় ১০ মাস এই কারখানা বন্ধ থাকে এবং ঐ বছর সার ঘাটতি হয় প্রায় এক লাখ টন। এতে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়। অধিকন্তু তাদের তথাকথিত শ্রেনী শত্রু খতম ও চাঁদাবাজির ভয়ে একদিকে স্হানীয় ভাবে খাদ্য উৎপাদন ব্যহত হয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অসহনশীল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে,জাসদের জ্বালাও পোড়াও কর্মসুচী এবং গনবাহিনী সৃষ্ট অরাজকতার সুযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পিএল-৪৮০’র খাদ্য বহনকারী জাহাজকে about turn করিয়ে দেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে।এই সুযোগে কথিত দুর্ভিক্ষের স্বপক্ষে অপ-প্রচারের লক্ষ্যে হলুদ সাংবাদিকতায় সিদ্ধ হস্ত একজন ব্যারিষ্টার সাংবাদিকের তত্বাবধানে কিছু সংখ্যক সাংবাদিক কুঁড়িগ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধি “বাসন্তী”কে ১২ টাকা দামের শাড়ী কাপড় না পড়িয়ে ৪০ টাকা দামের মাছ ধরার জাল পেঁচিয়ে অর্ধনগ্ন ছবি তুলে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচার করে বঙ্গবন্ধুর সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চালায়।এ ভাবেই তথাকথিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারক বাহক জাসদ তাদের অবৈজ্ঞানিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সরকার উৎখাৎ বা জাতির পিতাকে হত্যার পরিবেশ সৃষ্টি করে।যদিও তারা নানা সময়ে নানা ভাবে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে নানান ধরনের ব্যাখ্যা উপস্হাপনের চেষ্টা করছে।তবে
জাসদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে যে ব্যাখ্যাই দেওয়া হোক না কেন, এ কথা তো সত্য যে, ১৫ আগস্টের বিয়োগান্ত ঘটনার পরিবেশ তারাই(জাসদ) সৃষ্টি করেছিল এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জাসদ ‘উল্লোসিত হয়ে ,’খুনি মুজিব খুন হয়েছে’ এই ধরনের প্রচারপত্রও বিলি করে। এ কথাও প্রচার রয়েছে যে, গণবাহিনীর প্রধান কর্নেল আবু তাহের ১৫ আগষ্ট ভোরে রেডিও অফিস ও বঙ্গভবনে গিয়েছিল খুনি চক্রের সঙ্গে বৈঠক করতে এবং আওয়ামী লীগকে বাদে দিয়ে অন্য সব দলকে নিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাবও দিয়েছিল। এতদভিন্ন, কর্নেল তাহের ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী ও ভারতবিরোধী স্লোগান দিয়ে সাধারন সৈনিকদের ক্ষেপিয়ে তুলে বন্দী খুনী জিয়াকে মুক্ত করে ৭ নভেম্বর সৃষ্টি করেছিল।
জাসদের এই কর্ণধার কর্নেল তাহেরকে অনেকেই এখনো পূজনীয় ভাবে এবং তাকে আওয়ামী পন্থী বলেও প্রচার করতে প্রয়াস চালায়। কিন্তু এই ব্যক্তি বাংলাদেশের স্থপতি হত্যায় সবচেয়ে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালনকারীদের একজন। ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ট্রেনিংপ্রাপ্ত কর্নেল তাহের ছিলেন মার্কিন বলয়ের ক্রীড়ানক এবং কর্নেল তাহেরই বলেছিল ‘বঙ্গবন্ধুর লাশ বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেয়া উচিত ছিল (দি ডেইলি স্টার, ১৫ আগস্ট, ২০১৪, Who Said What After August 15)।’
*যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসি বীর মুক্তিযোদ্ধা,কলামিষ্ট, কৃষিবিদ,গবেষক ও উপদেষ্টা, টাঙ্গাইল আওয়ামী লীগ।