বগুড়ায় ‘ভূমিদস্যুদের’ থাবা এবার মসজিদে!
- আপডেট সময় : ০২:১৮:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ অক্টোবর ২০২২ ৮৪ বার পড়া হয়েছে
মিরু হাসান বাপ্পী, বগুড়া জেলা সংবাদদাতা
‘ভূমিদস্যু’ হিসেবে চিহ্নিত আনোয়ার ও শাকিল। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে অবৈধভাবে জমি দখলের একাধিক অভিযোগও। দীর্ঘদিন ধরে এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তারা। তবে এতোদিন ভয়ে কেউ কথা বলেননি তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে। প্রতিবাদও করেননি কেউ। নীরবে দেখে গেছেন তাদের অবৈধ কার্যকলাপ। তবে এবার সেই ‘ভূমিদস্যুদের’ বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন গ্রামবাসী। কারণ এই ‘ভূমিদস্যুদের’ চোখ এখন মসজিদের জমির দিকে।
ঘটনাটি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর গ্রামের। ওই গ্রামের পিরপাল সাজাপুর নূরে এলাহী জামে মসজিদের ৬২ শতক জমি নিজেদের বলে দাবি করে আসছেন শাকিল ও আনোয়ার। শুধু তা-ই নয়, বিষয়টি নিয়ে ওই মসজিদ কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারীকে মারধরও করেছেন তারা। রয়েছে এমন অভিযোগও।
অভিযুক্ত শাকিল আহমেদ (৪৫) শাজাহানপুর উপজেলার জোকা গ্রামের বাসিন্দা। আর আনোয়ার হোসেন (৪৭) একই উপজেলার চাঙ্গুইর গ্রামের বাসিন্দা।
মসজিদ কমিটির অভিযোগ, শাকিল ও আনোয়ার পিরপাল সাজাপুর নূরে এলাহী জামে মসজিদের ৬২ শতক জমি নিজেদের বলে দাবি করে আসছেন। এরমধ্যে ২১ শতক জমি মহাসড়কের জন্য অধিগ্রহণ করেছে সরকার। শাকিল ও আনোয়ার চিহ্নিত ‘ভূমিদস্যু’। পরিকল্পনা মোতাবেক ‘ভূয়া দলিল’ তৈরী করে তাদেরকে মসজিদের জমি লিখে দেন সাজাপুর মসজিদপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সামছুদ্দিনসহ (৬৪) দাবি করা অন্য অংশীদাররা। এরপর থেকেই জমি দখলে নিতে পায়তারা শুরু করেন তারা। বিষয়টি নিয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারীকে মারধরও করা হয়।
মারধরের শিকার হওয়া দুজন হলেন-উপজেলার সাজাপুর মোল্লাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আনিছুর রহমান বাবলু (৬৬) ও সাজাপুর মসজিদপাড়া গ্রামের বাসিন্দা খায়রুল বাশার (৬৪)।
তাদের মধ্যে বাবলু মসজিদ কমিটির সভাপতি ও খায়রুল সেক্রেটারী। গত মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) সকালে বগুড়ার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সড়কে তাদের মারধর (কিল-ঘুষি) করা হয়। এ ঘটনার পরদিন বুধবার শাজাহানপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন বাবলু। জিডিতে সামছুদ্দিন ও তার ছেলে সাজাপুর মসজিদপাড়া গ্রামের মোখলেসসহ (২৫) শাকিল ও আনোয়ারকে অভিযুক্ত করা হয়।
জিডিতে উল্লেখ করা হয়, মসজিদ কমিটির সভাপতি-সেক্রটারীকে একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বলেন অভিযুক্তরা। এতে তারা রাজি না হলে মারধরের শিকার হন।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত শাকিল মাহমুদ বলেন, ‘মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারীকে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে ঐদিন আমাদের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। আর এই ঘটনা ঘটে বগুড়ার সদর থানা এলাকায়। কিন্তু মসজিদ কমিটির সভাপতি শাজাহানপুর থানায় জিডি করেন।’
জমি সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে শাকিল বলেন, ‘জমির অংশীদারদের কাছ থেকে বছর খানেক আগে ৬২ শতক জমি কিনে নিয়েছি। আমরাই জমির প্রকৃত মালিক। মসজিদ কমিটির লোকজন অবৈধভাবে জমি দখলে নেয়ার পায়তারা করছে। জমি সংক্রান্ত একটি মামলা রয়েছে আদালতে। মামলাটি করে মসজিদ কমিটি।
জানতে চাইলে মসজিদ কমিটির সভাপতি আনিছুর রহমান বাবলু বলেন, ‘ ১৯৮৬ সালে মসজিদের জমি সংক্রান্ত মামলা ছিল আদালতে। ওই সময় জমির ভূয়া দলিল তৈরী করে সামছুদ্দিনরা এক পক্ষের কাছে মসজিদের জমি বিক্রি করেন। ২০০৫ সালে ওই মামলার রায় পায় মসজিদ। এরপর থেকে জমি নিয়ে কোনো বিরোধ ছিল না। তবে সম্প্রতি সামছুদ্দিনসহ দাবি করা অন্য অংশীদাররা আবারো ভূয়া দলিল তৈরী করে ভূমিদস্যু শাকিল ও আনোয়ারকে মসজিদের ৬২ শতক জমি দলিল করে দেন। তারা যোগসাজস করে মসজিদের জমি অবৈধভাবে দখলে নেয়ার চেষ্টা করছেন। অথচ জায়গার সমস্থ বৈধ কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ মসজিদের নামে জমি দলিল করে দেন প্রকৃত মালিক জমিদার শাহ মোহাম্মদ খলিল উদ্দিন হায়দার আবু জোবের। ওই সময় জমির জিম্মাদার করা হয় সামছুদ্দিনের মায়ের নানা তোরাব আলী ফকিরকে। তোরাব আলী ফকির ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু সামছুদ্দিনসহ তার আত্মীয়-স্বজন ভূয়া দলিল তৈরী করে মসজিদের জমি দখলে নেয়াসহ অবৈধভাবে বিক্রি করার চেষ্টা করছেন। তারা এর আগেও অবৈধভাবে জমি বিক্রির চেষ্টা করে সফল হননি। এবার ভূমিদস্যু শাকিল ও আনোয়ারকে জমির ভূয়া দলিল করে দিয়েছেন তারা। তবে ভূমিদস্যুদের মোকাবেলা করার জন্য গ্রামবাসী প্রস্তুত আছেন।’
জানতে চাইলে শাজাহানপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারীকে মারধরের ঘটনায় থানায় জিডি হয়েছে। এই ঘটনায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।