ঢাকা ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
ডাচ উপমন্ত্রী Pascalle Grotenhuis-এর সৌজন্য সাক্ষাৎ চিফ অ্যাডভাইজার প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বিস্তৃত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা বগুড়া সদরে তারেক রহমানের ধানের শীষে ভোট চেয়ে ভিপি সাইফুলের গণসংযোগ সাথী ফসলে বাজিমাত শাহীনের, দৃষ্টান্ত হতে পারে জানালেন কৃষি বিভাগ  বগুড়ায় নবান্ন উৎসবের মাছের মেলা: তিন শতকের লোকজ সংস্কৃতির সারথি কুড়িগ্রামে ১০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার নবাগত পুলিশ সদস্যদের পদায়ন দায়িত্ববোধ ও শপথের নতুন যাত্রা- খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি খুলনার নবাগত জেলা প্রশাসক আ.স.ম. জামশেদ খন্দকার’র যোগদান দুর্গাপুরে সরকারি সার পাচারকালে জনতার হাতে আটক ব্যবসায়ী, ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা ধুনটে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা অফিসের সামনে থেকে ককটেল উদ্ধার রাষ্ট্রের সকল উন্নয়নে নারীদের সমভাবে এগিয়ে আসতে হবে বাচ্চু মোল্লা

দারিদ্র্যতার কষাঘাত ভেঙে জিমের এসএসসি’তে জিপিএ-৫

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
  • আপডেট সময় : ০৬:২৬:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫ ৪১ বার পড়া হয়েছে

আনোয়ার সাঈদ তিতু,

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

ঘরের চারপাশে অভাব-অনটনের অন্ধকার। তবু সেই ঘরে জ্বলছে এক আলোকবর্তিকা। কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ীর চিনাবাড়ি গ্রামের শাহ মনি আক্তার জিম। মেরুদণ্ড ভাঙা দারিদ্র্যের ভেতর থেকেও এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে সে। তার স্বপ্ন, একদিন সে হবে একজন চিকিৎসক। সেবাদানেই খুঁজে নেবে জীবনের সার্থকতা।

 

জিমের বাবা জহুরুল হক ছিলেন একটি ছোট পানের দোকানের মালিক। সেই দোকানই ছিল তাদের সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মেরুদণ্ডের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি এখন সম্পূর্ণ কর্মক্ষম নন। প্রতিদিনের ওষুধ কিনতে লাগে প্রায় ২০০ টাকা, যা জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছে পরিবার। দোকানটিও এখন বন্ধ। ফলে পরিবারের ছয় সদস্যের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দশা।

 

জিম বলে, “সংসারে অভাব ছিল সবসময়। কিন্তু বাবা-মা আর শিক্ষকদের উৎসাহে আমি মন দিয়ে পড়াশোনা করেছি। আমার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। মানুষের সেবা করতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।”

 

তার এই সাফল্য এখন পরিবারের আশার আলো। তবে ভবিষ্যতের চিন্তায় চিন্তিত বাবা-মা। জিমের বাবা বলেন, “মেয়েটা অনেক কষ্ট করে পড়েছে। ও চায় ডাক্তার হতে। কিন্তু আমি তার পড়াশোনার খরচ চালাতে পারবো কি না, জানি না। কেউ যদি পাশে দাঁড়াত, মেয়েটার স্বপ্নটা বেঁচে থাকতো।”

 

মা রাশিদা বেগম বলেন, “স্বামীর চিকিৎসা আর মেয়ের পড়ালেখা—দুইটাই চালানো আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সহায়তা না পেলে মেয়ের পড়ালেখা থেমে যাবে, এটা ভাবলেই বুকটা কেঁপে ওঠে।”

 

জিমের প্রতিবেশীরাও মুগ্ধ তার সাফল্যে।

একজন বলেন, “অভাবের সংসারেও মেয়েটা যেভাবে ভালো রেজাল্ট করেছে, তা অনন্য। কিন্তু সামনে তো আরও অনেক খরচ। যদি কেউ পাশে না দাঁড়ায়, তার স্বপ্ন হয়তো থেমে যাবে।”

 

ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার বলেন, “জিম আমাদের বিদ্যালয়ের গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যতম। আমরা শিক্ষকরা ব্যক্তিগতভাবে তাকে যতটা সম্ভব সহায়তা করেছি। কিন্তু তার উচ্চশিক্ষার জন্য দরকার বড় পরিসরের সহযোগিতা।”

 

জিমের মতো অদম্য মেধাবীদের পাশে দাঁড়ানো মানেই একটি পরিবারের নয়, একটি দেশের ভবিষ্যতের পাশে দাঁড়ানো। এই মেয়েটির চোখে যে স্বপ্ন, তা যেন নিভে না যায় অভাবের আঁধারে। তার স্বপ্নপূরণে প্রয়োজন সমাজের দানশীল, সহানুভূতিশীল মানুষদের ভালোবাসা আর সহায়তার স্পর্শ।

 

একটি মেয়ের চোখের আলোই হতে পারে সমাজের ভবিষ্যতের দীপ্তি। জিম যেন সেই আলো হোক, আমাদের সম্মিলিত সহমর্মিতার সৌরভে।

শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুন

দারিদ্র্যতার কষাঘাত ভেঙে জিমের এসএসসি’তে জিপিএ-৫

আপডেট সময় : ০৬:২৬:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

আনোয়ার সাঈদ তিতু,

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

ঘরের চারপাশে অভাব-অনটনের অন্ধকার। তবু সেই ঘরে জ্বলছে এক আলোকবর্তিকা। কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ীর চিনাবাড়ি গ্রামের শাহ মনি আক্তার জিম। মেরুদণ্ড ভাঙা দারিদ্র্যের ভেতর থেকেও এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে সে। তার স্বপ্ন, একদিন সে হবে একজন চিকিৎসক। সেবাদানেই খুঁজে নেবে জীবনের সার্থকতা।

 

জিমের বাবা জহুরুল হক ছিলেন একটি ছোট পানের দোকানের মালিক। সেই দোকানই ছিল তাদের সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মেরুদণ্ডের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি এখন সম্পূর্ণ কর্মক্ষম নন। প্রতিদিনের ওষুধ কিনতে লাগে প্রায় ২০০ টাকা, যা জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছে পরিবার। দোকানটিও এখন বন্ধ। ফলে পরিবারের ছয় সদস্যের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দশা।

 

জিম বলে, “সংসারে অভাব ছিল সবসময়। কিন্তু বাবা-মা আর শিক্ষকদের উৎসাহে আমি মন দিয়ে পড়াশোনা করেছি। আমার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। মানুষের সেবা করতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।”

 

তার এই সাফল্য এখন পরিবারের আশার আলো। তবে ভবিষ্যতের চিন্তায় চিন্তিত বাবা-মা। জিমের বাবা বলেন, “মেয়েটা অনেক কষ্ট করে পড়েছে। ও চায় ডাক্তার হতে। কিন্তু আমি তার পড়াশোনার খরচ চালাতে পারবো কি না, জানি না। কেউ যদি পাশে দাঁড়াত, মেয়েটার স্বপ্নটা বেঁচে থাকতো।”

 

মা রাশিদা বেগম বলেন, “স্বামীর চিকিৎসা আর মেয়ের পড়ালেখা—দুইটাই চালানো আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সহায়তা না পেলে মেয়ের পড়ালেখা থেমে যাবে, এটা ভাবলেই বুকটা কেঁপে ওঠে।”

 

জিমের প্রতিবেশীরাও মুগ্ধ তার সাফল্যে।

একজন বলেন, “অভাবের সংসারেও মেয়েটা যেভাবে ভালো রেজাল্ট করেছে, তা অনন্য। কিন্তু সামনে তো আরও অনেক খরচ। যদি কেউ পাশে না দাঁড়ায়, তার স্বপ্ন হয়তো থেমে যাবে।”

 

ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার বলেন, “জিম আমাদের বিদ্যালয়ের গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যতম। আমরা শিক্ষকরা ব্যক্তিগতভাবে তাকে যতটা সম্ভব সহায়তা করেছি। কিন্তু তার উচ্চশিক্ষার জন্য দরকার বড় পরিসরের সহযোগিতা।”

 

জিমের মতো অদম্য মেধাবীদের পাশে দাঁড়ানো মানেই একটি পরিবারের নয়, একটি দেশের ভবিষ্যতের পাশে দাঁড়ানো। এই মেয়েটির চোখে যে স্বপ্ন, তা যেন নিভে না যায় অভাবের আঁধারে। তার স্বপ্নপূরণে প্রয়োজন সমাজের দানশীল, সহানুভূতিশীল মানুষদের ভালোবাসা আর সহায়তার স্পর্শ।

 

একটি মেয়ের চোখের আলোই হতে পারে সমাজের ভবিষ্যতের দীপ্তি। জিম যেন সেই আলো হোক, আমাদের সম্মিলিত সহমর্মিতার সৌরভে।

শেয়ার করুন