ঢাকা ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবিসি ন্যাশনাল নিউজ২৪ ইপেপার

তিন বছর ঘুরেও বিদ্যুৎ-সংযোগ পায়নি শাপলাপুরের অর্ধশতাধিক পরিবার

মিজবাহ উদ্দীন আরজু, (মহেশখালী) ::
  • আপডেট সময় : ০৯:২২:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৩ বার পড়া হয়েছে

মিজবাহ উদ্দীন আরজু, (মহেশখালী) ::

মাত্র তিন-চারটি খুঁটি স্থাপন করলেই তাদের ঘরগুলো বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হতো। কিন্তু দীর্ঘ তিন বছর ধরে বিদ্যুতের কার্যালয়ে ঘুরেও কোনো ফল পায়নি তারা। কবে তাদের ঘরে আলো জ্বলবে, সেটিও জানা নেই কারও। এ ঘটনা কক্সবাজার জেলার ‘সিঙ্গাপুর’ খ্যাত মহেশখালী শাপলাপুর ইউনিয়নের। এলাকায় শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার সরকারী নির্দেশনা থাকলেও অর্ধশতাধিক পরিবার এখনও বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। বিদ্যুৎ না পেয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছে। স্থানীয়রা বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে গত ১৭ নভেম্বর মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যুৎ অফিসে লিখিত আবেদন করেছে। তবে বর্তমানে এলাকার বাসিন্দাদের বিদ্যুৎ নিয়ে এই ভোগান্তির মূলে রয়েছে বন বিভাগের বাঁধা। বন বিভাগ বলছে, বনের জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপনের আইন নেই।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীকি মারমা বলেন, ‘এতদিন বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি।’

লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের সব গ্রামে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে কায়দাবাদ উত্তর মুরংঘোনার অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘরে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে ৩ বছর ধরে উপজেলার বিদ্যুৎ কার্যালয়ে ঘুরেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ-সংযোগ পায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘তিন বছর আগে আমাদের আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হলেও আমরা ৫২ পরিবার পাইনি। আমরা স্থানীয় বিদ্যুৎ কার্যালয়ে বারবার যোগাযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছি না।’

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ‘যেখানে সংযোগ আছে, সেখান থেকে মাত্র তিন-চারটি খুঁটি হলেই আমরা ৫০ পরিবার বিদ্যুৎ-সংযোগ পেয়ে যাই। বনবিভাগের বাঁধার মুখে আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনি।’

ওই এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থী নুসরাত পরীক্ষায় বসছে আগামী ২০২৫ সালের এপ্রিলে। সে বলে, ‘এই গ্রাম থেকে আমরা ৬ জন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দেব। বিদ্যুৎ না থাকায় আমরা ঠিকভাবে লেখাপড়া করতে পারছি না। ‘কিছুদিন পর পরীক্ষা। যদি বিদ্যুৎ না আসে, তাহলে আমরা খুব বিপদে পড়ে যাব।’ এখন আমরা মোমবাতি দিয়ে চলি।‘মোমবাতি দিয়ে কতদিন চলা যায় বলেন?

স্থানীয় আমেনা খাতুন বলেন, ‘বর্তমান ডিজিটাল যুগে আমরা কেন বিদ্যুৎ পাব না? আমরা তো এই এলাকায় শত বছর ধরে বসবাস করছি। আমরা কি এ দেশের নাগরিক না?’

শাপলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক চৌধুরী বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের উত্তর মুরংঘোনার ৫০ এর অধিক পরিবারে বিদ্যুৎ-সংযোগ না থাকায় তারা বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত। তাদের সংযোগ দিতে বিদ্যুৎ কার্যালয়ে সুপারিশ করেছি।’

কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম (মহেশখালী জোনাল অফিস) নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমরা গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবাটা দেয়ার চেষ্টা করি। শাপলাপুর ইউনিয়নের কায়দাবাদ উত্তর মুরংঘোনা এলাকায় বনবিভাগের বাঁধার মুখে সেখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন ও সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

জানতে চাইলে বন বিভাগের মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা এস.এম. এনামুল হক বলেন, বনের জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নিয়ম নেই। তাই সেখানে বিদ্যুতের খুটি সংযোগ দেওয়ার অনুমতি দেয়া হয় নাই।

শেয়ার করুন

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

তিন বছর ঘুরেও বিদ্যুৎ-সংযোগ পায়নি শাপলাপুরের অর্ধশতাধিক পরিবার

আপডেট সময় : ০৯:২২:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

মিজবাহ উদ্দীন আরজু, (মহেশখালী) ::

মাত্র তিন-চারটি খুঁটি স্থাপন করলেই তাদের ঘরগুলো বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হতো। কিন্তু দীর্ঘ তিন বছর ধরে বিদ্যুতের কার্যালয়ে ঘুরেও কোনো ফল পায়নি তারা। কবে তাদের ঘরে আলো জ্বলবে, সেটিও জানা নেই কারও। এ ঘটনা কক্সবাজার জেলার ‘সিঙ্গাপুর’ খ্যাত মহেশখালী শাপলাপুর ইউনিয়নের। এলাকায় শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার সরকারী নির্দেশনা থাকলেও অর্ধশতাধিক পরিবার এখনও বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। বিদ্যুৎ না পেয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছে। স্থানীয়রা বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে গত ১৭ নভেম্বর মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যুৎ অফিসে লিখিত আবেদন করেছে। তবে বর্তমানে এলাকার বাসিন্দাদের বিদ্যুৎ নিয়ে এই ভোগান্তির মূলে রয়েছে বন বিভাগের বাঁধা। বন বিভাগ বলছে, বনের জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপনের আইন নেই।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীকি মারমা বলেন, ‘এতদিন বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি।’

লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের সব গ্রামে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে কায়দাবাদ উত্তর মুরংঘোনার অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘরে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে ৩ বছর ধরে উপজেলার বিদ্যুৎ কার্যালয়ে ঘুরেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ-সংযোগ পায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘তিন বছর আগে আমাদের আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হলেও আমরা ৫২ পরিবার পাইনি। আমরা স্থানীয় বিদ্যুৎ কার্যালয়ে বারবার যোগাযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছি না।’

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ‘যেখানে সংযোগ আছে, সেখান থেকে মাত্র তিন-চারটি খুঁটি হলেই আমরা ৫০ পরিবার বিদ্যুৎ-সংযোগ পেয়ে যাই। বনবিভাগের বাঁধার মুখে আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনি।’

ওই এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থী নুসরাত পরীক্ষায় বসছে আগামী ২০২৫ সালের এপ্রিলে। সে বলে, ‘এই গ্রাম থেকে আমরা ৬ জন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দেব। বিদ্যুৎ না থাকায় আমরা ঠিকভাবে লেখাপড়া করতে পারছি না। ‘কিছুদিন পর পরীক্ষা। যদি বিদ্যুৎ না আসে, তাহলে আমরা খুব বিপদে পড়ে যাব।’ এখন আমরা মোমবাতি দিয়ে চলি।‘মোমবাতি দিয়ে কতদিন চলা যায় বলেন?

স্থানীয় আমেনা খাতুন বলেন, ‘বর্তমান ডিজিটাল যুগে আমরা কেন বিদ্যুৎ পাব না? আমরা তো এই এলাকায় শত বছর ধরে বসবাস করছি। আমরা কি এ দেশের নাগরিক না?’

শাপলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক চৌধুরী বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের উত্তর মুরংঘোনার ৫০ এর অধিক পরিবারে বিদ্যুৎ-সংযোগ না থাকায় তারা বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত। তাদের সংযোগ দিতে বিদ্যুৎ কার্যালয়ে সুপারিশ করেছি।’

কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম (মহেশখালী জোনাল অফিস) নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমরা গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবাটা দেয়ার চেষ্টা করি। শাপলাপুর ইউনিয়নের কায়দাবাদ উত্তর মুরংঘোনা এলাকায় বনবিভাগের বাঁধার মুখে সেখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন ও সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

জানতে চাইলে বন বিভাগের মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা এস.এম. এনামুল হক বলেন, বনের জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নিয়ম নেই। তাই সেখানে বিদ্যুতের খুটি সংযোগ দেওয়ার অনুমতি দেয়া হয় নাই।

শেয়ার করুন