চোরাকারবারিদের ভয়ে আতঙ্কে এলাকা ছাড়া তাহিরপুরের তিন সাংবাদিক
- আপডেট সময় : ১১:১৫:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৩ ১৫৫ বার পড়া হয়েছে
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে সীমান্তের চোরাই কয়লা পাচার নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় মামলা, হামলাসহ একের পর এক তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে চোরাচালানের মাধ্যমে ভারতীয় চোরাই কয়লা পাচারকারী চক্রের মুলহোতা আবুল বাশার খাঁ নয়ন ও তার সহযোগীরা।
এদের ভয়ে আতঙ্কে এলাকা ছাড়া তাহিরপুরের তিন সাংবাদিক।
স্থানীয়রা জানান, তাহিরপুর সীমান্তে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয় মেসার্স আল-ফারুক এন্ড ব্রাদার্স নামক ডিপুর ভূয়া চালান পত্রের মাধ্যমে গত ৬ মাস ধরে লাকমা, লালঘাট, বাঁশতলা, চারাগাঁও, বাগলী ও কলাগাঁও সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাই কয়লা ও মাদক নির্বিঘ্নে পাচার করে আসছে উপজেলার বালিয়াঘাট গ্রামের উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির গুণধর পুত্র চোরাচালান সিন্ডিকেটের মুলহোতা ও চাঁদাবাজ আবুল বাশার খাঁ নয়ন ও তার সহযোগীরা।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ শে নভেম্বর উপজেলার টাংগুয়ার হাওর সংলগ্ন পাঠলাই নদীর পুরানবাগ নামক এলাকায় তাহিরপুর থানা পুলিশের একটি টিম এস আই নাজমুলের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে ৩৮ মেট্রিকটন চোরাই কয়লা সহ ২টি স্টীলবডি নৌকা আটক করে। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাই কয়লার নৌকায় থাকা বালিয়াঘাট গ্রামের তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খাঁ’র গুণধর পুত্র চোরাকারবারি আবুল বাশার খাঁ নয়ন (৩০), তার সহযোগী দুধের আউটা গ্রামের মৃত লেবু মিয়ার ছেলে মল্লিক মিয়া (৩৫), মৃত আঃ আব্দুল গফুর মিয়ার ছেলে তাজুদ আলী (৪২), তাজুদ আলীর ছেলে সাহাঙ্গীর (২২), মৃত আব্দুল হাসিমের ছেলে শামীম ওরফে চোরা শামীম (২৮), একই গ্রামের মিরাশ আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ (২৮), নদীতে ঝাপ দিয়ে সাঁতরে পালিয়ে যায়। পরে ৩৮ মেট্রিকটন চোরাই কয়লা সহ ২টি স্টীলবডি নৌকা আটক করে তাহিরপুর থানায় এনে পরিত্যক্ত অবস্থায় জব্দ দেখিয়ে সুনামগঞ্জ কোর্টে প্রেরণ করেন তাহিরপুর থানা পুলিশ। এব্যাপারে সংবাদকর্মীরা অসংখ্য প্রিন্ট ও অনলাইন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেন। এরই জের ধরে চোরাচালানিরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাহিরপুরের তিন সাংবাদিক সহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে গত ২৮ শে নভেম্বর সুনামগঞ্জ আমলগ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হয়রানিমূলক মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ দায়ের করে চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য মল্লিক মিয়া।
মিথ্যা অভিযোগ করেও শান্ত হয়নি চোরাকারবারিরা, গত (২ জানুয়ারি) সাংবাদিক সাবজল হোসাইন সংবাদ সংগ্রহ শেষে ওই দিনই সন্ধ্যা ৬ টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার ড্রাম্পের বাজার কান্দার পাশে সরকারি রাস্তায় উঠা মাত্রই প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিত সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে শালারে ধর বলে হামলার চেষ্টা করে উপরে উল্লেখিত চোরাকারবারিরা। এহেন পরিস্থিতি দেখে সাংবাদিক সাবজল হোসাইন মোটরসাইকেল পেলে রাস্তার পাশে থাকা জৈনক কালন মিয়ার দোকানে দৌড়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে দোকানে থাকা লোকজন কয়ক ঘন্টা চেষ্টার পর ওই সাংবাদিককে চোরাকারবারি ও হামলাকারীদের কবল হতে উদ্ধার করেন।
সাংবাদিক সাবজল হোসাইন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানাযায়, সাংবাদিক সাবজল হোসাইন সংবাদ সংগ্রহের কাজ সেরে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলে ড্রাম্পের বাজার কান্দায় আসা মাত্রই নয়ন, মল্লিক সহ তাদের সহযোগীরা পূর্বপরিকল্পিত সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সাংবাদিককের দিকে এগিয়ে আসে। তাদের এমন পরিস্থিতি দেখে সাংবাদিক সাবজল তার চালিত মোটরসাইকেল পেলে দৌড়ে কালনের দোকানে গিয়ে আশ্রই নেয়। ওই দোকানে সাংবাদিক সাবজলকে কয়েক ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে উপরে ওই চোরাকারবারিরা। এমতাবস্থায় সাংবাদিক সাবজল নিজেকে বাঁচাতে তাৎক্ষনিক ৯৯৯ এ কল করে প্রাণে বাঁচার আকুতি করে সহায়তা চান। ৯৯৯ এ কল করার পরে রাত ৯ টার দিকে তাহিরপুর থানার এসআই শাহাদাৎ ঘটনাস্থলে পৌঁছার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন এমন সংবাদ মূহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে ওই এলাকায়। ওই সময় স্থানীয় প্রায় অর্ধশত লোকজনের সামনে, প্রকাশ্যে ওই সাংবাদিক সাবজল হোসাইন ও তার স্বজন এবং তার সহকর্মী তাহিরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক জাতীয় দৈনিক লাল সবুজের দেশ পত্রিকার সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি আবু জাহান তালুকদার ও উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক জাতীয় দৈনিক আলোকিত সকালের স্টাফ রিপোর্টার আহাম্মদ কবিরকে খুন করে লাশ গুম করার হুমকি দিয়ে মূহুর্তেই ছটকে পড়ে উপড়ে উল্লেখিত চোরাকারবারিরা।
চোরাকারবারিদের এহেন তান্ডবে ও ভয়ে ওইদিন থেকেই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করে আছেন এই তিন সাংবাদিক। বর্তমানে সাংবাদিক সাবজল হোসাইনের স্বপরিবার প্রাণনাশের আশংকায় রয়েছেন। জীবনের নিরাপত্তা বিষয় চিন্তা করে এবং হত্যার চেষ্টার বিষয়টি উল্লেখ করে আদালতে একটি মামলাও দায়ের করেন সাংবাদিক সাবজল হোসাইন।
এ বিষয়ে জানতে চোরাচালান পাচার চক্রের মুলহোতা আবুল বাশার খাঁ নয়ন ও তার সহযোগী মল্লিক মিয়ার মুঠোফোনে একাধিক বার কল করা হলে তারা ফোন রিসিভ না করার তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।