আদমদীঘির সান্তাহারে রাধাকান্ত হাট যেন কবুতর প্রেমিদের মিলনমেলা !!
- আপডেট সময় : ১১:২১:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ নভেম্বর ২০২২ ৫১ বার পড়া হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার, মিরু হাসান আদমদীঘির সান্তাহারে রাধাকান্ত হাট জংশন থেকে হাফ কিলোমিটার দূরে শনিবার ও মঙ্গলবার সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকা সরগরম হয়ে উঠে। সকাল ১১ টা নাগাদ আসতে থাকে খাঁচাভর্তি কবুতর নিয়ে শৌখিন ও পেশাদার কবুতর পালকেরা ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাক, হইহুল্লোড় ও আড্ডায় মিলনমেলায় রূপ নেয় রাধাকান্ত কবুতরের হাট।
সপ্তাহে দুই দিন শনিবার ও মঙ্গলবার সকাল থেকে বসা এ হাটে কেনাবেচা শুরু হয় ১০টায় এবং ৮টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। সান্তাহারে হাটখলা(নতুন বাজার) নামক স্থানে এ হাট বসে। হাটে সাদা, কালো, বাদামিসহ বিভিন্ন রং ও জাতের কবুতর পাওয়া যায়। হাটে আনা কবুতরগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি তাদের বাহারি সব নাম। দেশি কবুতরের পাশাপাশি হাটে,লক্ষা, কিং সিরাজি, আউল, গোল্ডেন সুইট শর্টফেস, মুঙ্খি, হোমার, গিরিবাজ, শার্টিন, ঘিয়া সুল্লী, জিরাগলা, জ্যাকোবিন, সোয়া চন্দনের মতো নানা জাতের কবুতরের দেখা মেলে। সবকিছু মিলিয়ে দামেও আছে ভিন্নতা।
সরেজমিন হাট ঘুরে দেখা গেল, ক্রেতারা কবুতর কেনার আগে পালকের নিচে-ওপরে, গলা, পা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন। কবুতরের মধ্যে পুরুষ ও স্ত্রী পরীক্ষা করছেন। বিক্রেতাকে কবুতরের বয়স, নিয়মিত ডিম দেয় কি না ইত্যাদি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছেন। হাটে কে ক্রেতা, আর কে বিক্রেতা, সেটা বোঝা মুশকিল। হাটের বেশির ভাগ বিক্রেতাই শৌখিন কবুতর পালনকারী। নিজের সংগ্রহের বাড়তিগুলো যেমন বিক্রি করছেন, তেমনি অন্য পছন্দ হলে তা কিনে নিজের সংগ্রহ সমৃদ্ধ করছেন। কবুতরের পাশাপাশি হাটে অন্যান্য পাখি ও খরগোশের দেখা মেলে।
তারাপুর এলাকার রন্জু তালুকদারে সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি পাঁচ জোড়া কবুতর হাটে এনেছেন। ৩০ বছর ধরে তিনি কবুতর পালন করেন। কবুতরের পেছনে সময় দিতে গিয়ে তাঁর পড়ালেখাও বেশি দূর এগোয়নি। ৫০ বছর বয়সী রন্জু তালুকদারের বাসায় রেসার হোমার, কাজ্জী, রাজশাহী গিরিবাজ সহ বিভিন্ন জাতের ৫০ জোড়া কবুতর আছে। হাটে আনা একজোড়া পোর্টার বলের দাম হাঁকছিলেন ৪০০০ হাজার টাকা। কবুতর প্রেমি রকি বাংলাদেশ সমাচারকে বলেন, ‘হাটে এক শ’র ওপর বিক্রেতা কবুতর আনেন। এ ছাড়া অনেক ফড়িয়ারাও আসেন। বর্তমানে কবুতরের দাম একটু কম। করোনার পর থেকে বেচাকেনা যেন কেমন ডাউন (নিম্নমুখী) হয়ে গেছে।’
প্রতি শনি ও মঙ্গলবার সকাল ১১টা শুরু হয়ে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত চলে সান্তাহার রাধাকান্ত কবুতরের হাট। ক্রেতাদের অপেক্ষায় বিক্রেতারা।
নতুন কোনো বিক্রেতা কবুতর নিয়ে হাটে ঢুকলেই ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে তাঁর কাছে যাচ্ছেন। দরদাম করছেন। ক্রেতা-বিক্রেতা একে অন্যকে কথা ও অভিজ্ঞতার মারপ্যাঁচে ঘায়েল করার চেষ্টাও দেখা যাচ্ছে। ছাতয়িান গ্রাম থেকে আসা সবুজ হোসেন দুটি খাঁচায় কবুতর নিয়ে হাটে আসেন , তিনি কিং সিরাজি, জিরাগলা ও গিরিবাজ—এই তিন জাতের কবুতর আজ হাটে নিয়ে এসেছেন।
কিং সিরাজির দাম হাঁকাচ্ছিলেন জোড়াপ্রতি সাড়ে ৫ হাজার, গিরিবাজের দাম চাচ্ছিলেন ৭০০ টাকা জোড়া। সবুজ হোসেন বললেন, শুরুতে শখের বশে কবুতর পোষা শুরু করলেও এখন এটাই তাঁর পেশা বর্তমানে তিনি কবুতরের একজন ব্যাপারি ।সবুজ ছাড়াও আরো তিন/চারজন ব্যাপারি নিয়মিত হাটে আসেন। সবুজ হোসেনের খামারে এখন কিং সিরাজি, গিরিবাজ, কাজ্জী, সিলভার সিরাজি, জিরাগলা, লক্ষাসহ নানা জাতের বেশ কিছু জোড়া কবুতর আছে।
জাহিদ নামে এক জন বলেন হাটে কবুতর কিনতে আসছি, আবার বেচতে। প্রতি সপ্তাহেই আসি। সপ্তাহে ৪/৫ হাজার টাকার বেচাবিক্রি করি।
হাটে সান্তাহার হাটখলার একজন প্রবিণ কবুতর পালক বলেন সান্তাহারে প্রায় ৩০ বছর ধরে কবুতরের হাট বসে। আগে সেটি ছোট পরিসরে বসত। গত ৪/৫ বছরে হাট জমজমাট। এখন সকাল থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যাপক উপস্থিতি থাকে।
আদমদীঘিতে শনি মঙ্গল দুই দিনে দুই স্থানে দুইটি হাট বসে। নিদিষ্ট পণ্য ক্রয়ে আপনাকে খাজনা বা টোল দিতে হবে
টোল আদায়কারী মোনোয়ার হোসেনের সাথে কথা বললে, তিনি বলেন হাট আমরা ইজারা নিয়েছি, ইজারা গ্রহীতা দিললাদ আলম, মানিক নামে একজন হাটটি পরিচালনা করছেন, আমরা খুব অল্প পরিমান খাজনা আদায় করি।
মো.সাজু নামে এক বিক্রেতা বলেন, বর্তমানে মাংস খাওয়ার জন্য বাচ্চা ও কম দামি কবুতর বেশি বিক্রি হচ্ছে। হাটে শৌখিন কবুতরের বেচাবিক্রি কম। বেচাবিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পালকেরা এখন অনলাইনেই বেচাকেনা করেন। মানুষ যদি ঘরে বসে জিনিস পান, তাহলে হাটে আসবেন কেন?’
ঢাকারোডে বাসিন্দা মোঃ হামিদুল ইসলাম রাজু হাটে কবুতর কিনতে এসেছেন। বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখার সময় এক দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, তাঁর বাসায় ২৪ জোড়া কবুতর আছে। বাসা থেকে ঠিক করে আসেননি, যদি কোনো কবুতর পছন্দ হয় তবে কিনবেন। যেসব কবুতর বেশি উড়ে, সেগুলোই তাঁর পছন্দ। এ জন্য ভালো গিরিবাজ ও রেসার হোমার দেখছেন। তিনি বলেন, হাটে বিক্রেতার পাশাপাশি ক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে। আগে না এলে ভালো কবুতর পাওয়া যায় না বলে জানান তিনি।